টানা বৃষ্টির পর তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী

সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মকর্তা আবুল হাশেম। দেওয়ানহাটের তার প্রতিষ্ঠানের অফিস থেকে প্রতিদিনই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে যেতে হয়। গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টির কারণে যানজটের কবলে পড়ে কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো বাস কিংবা ট্যাম্পুতে পড়ে কাস্টম হাউজে যাতায়াত করতেন। কিন্তু মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তীব্র যানজটের কবলে পড়ে দেওয়ানহাট থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা হেঁটে কাস্টম হাউজে গিয়েছিলেন। কাজ শেষ করে একই ভাবে হেটেই অফিসে আসতে হলো তাকে।

যানজটের কারণে গাড়ি না পেয়ে পিক আপ ভ্যানে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছেন।
যানজটের কারণে গাড়ি না পেয়ে পিক আপ ভ্যানে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছেন।

প্রায় এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টির পর নগরবাসীর দুর্ভোগের নাম যানজট। যদিও চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ থেকে বিমানবন্দর সড়কে যানজট নিত্যদিনের। তবুও মঙ্গলবারের যানজটের তীব্রতা অন্য যে কোন দিনের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। যানজটের কবলে সকাল থেকে অফিসগামী কর্মকর্তারা কাজে যোগ দিয়েছেন পায়ে হেঁটে। দীর্ঘক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে বাস, ট্যাম্পু, হিউম্যান হলার, সিএনজি অটোরিকশা গন্তব্যের দিকে না গিয়ে উল্টো পথে ফেরত যেতে দেখা গেছে।

বিশ্বরোডের মোড় এলাকা
বিশ্বরোডের মোড় এলাকা।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে দেখা যায়, শত শত যাত্রী গাড়ির জন্য মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ভিড় ঠেলে কিছু যাত্রী গাড়িতে উঠতে পারলেও গাড়ি চলতে না পারার কারণে অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাত্রা শুরু করেছেন। যাদের গন্তব্য অপেক্ষাকৃত দূরে তারা নিরুপায় হয়ে বাসে বসে থেকেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

দুপুর দেড়টার দিকে আগ্রাবাদ বারেক বিল্ডিং মোড়ে দেখা যায় ভয়াবহ যানজট। কাটগড়গামী অনেক বাস গন্তব্যে না গিয়ে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়ে যান যাত্রীরা। উপায় না পেয়ে হায়ে হেটে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করতে দেখা গেছে অনেককে।

এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস নিতে পারেনি আমদানিকারকরা। আবহাওয়া অনুকূলে আসায় পণ্য খালাসের জন্য টোল রোডসহ বিভিন্ন সড়ক দিয়ে লরি এবং ট্রাক প্রবেশ করে। আর এতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।

কাস্টম মোড়ে দুপুর দুইটায় ট্রাক চালক আবদুল হালিম জানান, সকাল দশটার দিকে পোর্ট কানেকটিং রোড হয়ে বন্দরের চার নম্বর গেটে প্রবেশের চেষ্টা করছি। তীব্র যানজটের কবলে পড়ে সময় নষ্ট হচ্ছে। বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে কবে শহর থেকে বের হতে পারি এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

এদিকে বিকাল পাঁচটার পর যানজটের মাত্রা আরো তীব্র হয়ে হয়ে উঠে। ইপিজেড, চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম আগ্রাবাদের বিভিন্ন সকরারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অফিস থেকে বের হয়ে হওয়ার পর গাড়ি জটের সাথে সাথে জনজটের সৃষ্টি হয়। গাড়ি না চলায় পায়ে হেটে গন্তব্য পৌঁছাকেই বেছে নেন। অনেককে পিকআপ, ঠেলাগাড়িতে করেও গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, সকালে গাড়ি এবং পায়ে হেঁটে আসতে হয়েছে। সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পারিনি। অফিস শেষে দেখি একই অবস্থা। আগ্রাবাদ থেকে কাজীর দেউড়ির বাসায় পেতে পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় দেখছিনা।

সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী আরিফ জানান, প্রতিষ্ঠানের কাজে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যেতে হচ্ছে। বিমানবন্দর সড়কে যানজটের কারণে ঘুরে আউটার রিং রোড দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই অবস্থায় কবে নাগাদ বিমানবন্দর গিয়ে আবার ফিরে আসবো তার ঠিক নেই।

এদিকে বিকাল চারটার দিকে নগরীর সল্টগোলা ক্রসিংয়ে কন্টেইনারবাহী একটি ট্রেন বিকল হয়ে যাওয়ায় যানজটের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। সড়কের দুইপার্শ্বে গাড়ি ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকে অন্তত এক ঘণ্টা। পরবর্তীতে বিকল্প ইঞ্জিন গিয়ে ট্রেনটিকে সরানো হয়।

চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের প্রধান ইয়ার্ড মাস্টার আবদুল মালেক বলেন, গুডস ইয়ার্ড থেকে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখী কন্টেইনারবাহী ট্রেন সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় বিকল হয়ে পড়ে। বিকাল ৪ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বিকল্প ইঞ্জিন গিয়ে ট্রেনটিকে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়।

এসসি/ এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!