চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সঙ্গে মতবিনিময়ে মোহন্ত মহারাজ কালীপদ ভট্টাচার্য ও রানা দাশ গুপ্ত

যারা সাম্প্রদায়িক হামলা বা সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত, তারা কোনো ধর্মের নয়। সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই, তারা দেশ-জাতি বা ধর্মের শত্রু।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সঙ্গে মতবিনিময়ে মোহন্ত মহারাজ কালীপদ ভট্টাচার্য ও রানা দাশ গুপ্ত 1

বিভিন্ন সময় সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এই মন্তব্য করেছেন কৈবল্যধাম আশ্রমের মোহন্ত মহারাজ কালীপদ ভট্টাচার্য।

এদিকে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়েও আজও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত।

দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কার্যালয়ে আসেন কৈবল্যধামের সপ্তম মহারাজ মোহন্ত কালীপদ ভট্টাচার্য ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত।

এ সময় শ্রীশ্রী কৈবল্যনাথের মোহন্ত মহারাজ কালীপদ ভট্টাচার্য ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্তকে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখার, উপদেষ্টা সম্পাদক ও প্রকাশক আয়ান শর্মা, পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অসিত সেন এবং ব্যবস্থাপনা সম্পাদক চৌধুরী হাছান মাহমুদ আকবরী।

চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ এলাকায় অবস্থিত সনাতনী সম্প্রদায়ের পূণ্যস্থান কৈবল্যধাম। ২০২০ সাল থেকে এই আশ্রমের সপ্তম মহারাজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন কালীপদ ভট্টাচার্য। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে কৈবল্যধামের অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়ন করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। এ সময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এগিয়ে চলা আরও সাফল্যমন্ডিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে লড়ছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত। এছাড়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দায়িত্বও পালন করছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত।

দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তবে যেই অসাম্প্রদায়িক দেশের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ করেছি সেই লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি। মূলত পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর এদেশে উত্তান ঘটে মৌলবাদী শক্তির। তারা বার বার সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছেন। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে মৌলবাদীদের চরম উত্থান দেখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমার পুরো জীবনটাই কেটেছে এই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের সংগ্রামে। এ সংগ্রাম চালিয়ে নিতে গিয়ে পাকিস্তান আমলেও প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখেছি। এমনকি জেল কেটেছি, কলেজ থেকে বহিষ্কৃতও হয়েছি। তবু সেই অসাম্প্রদায়িকতার সংগ্রাম বন্ধ করিনি। বাহাত্তরের সংবিধানে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ নির্ধারণ করা হলেও বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর তা আর পূরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমরা এখনো গড়তে পারিনি। এটাই আজকের বাংলাদেশের কঠিন বাস্তবতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় রয়েছেন। তবে কিছু স্বার্থান্বেষী লোক ওনার আশেপাশে রয়েছেন, যারা প্রতিনিয়ত মৌলবাদী শক্তিকে শক্তিশালী করছে, তারা মৌলবাদীদের সাথে আপোষ করছে। এমনকি এই সরকারের আমলেই সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ গোপালগঞ্জে অসংখ্য হিন্দু পরিবারের জায়গা দখল করেছেন। এসব খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সরকারের আশেপাশে থাকা মুখোশধারী মৌলবাদীদের চিহ্নিত করে মুখোশ উন্মোচন করা জরুরি। বর্তমানে বিভিন্ন সেক্টরে মৌলবাদীরা মিশে গেছেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে এসব মৌলবাদীদের থেকে পরিত্রাণ দরকার।’

এ সময় দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের প্রশংসা করেন অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত। পাশাপাশি বিভিন্ন অপশক্তির বাধা পেরিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রতিদিন এগিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, দৈনিক আলোকিত চট্টগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক বিশ্বজিৎ বণিক, চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ, চট্টগ্রাম গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালীমন্দির পরিচালনা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক রুবেল দে, মুনমুন দত্ত মুন্না, নন্দনকানন তুলসীধাম কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান ধর, সামাজিক সংগঠন ‘পরিবর্তন’ এর সভাপতি সুনীল শীল, পশ্চিম শিকারপুর যুবক সম্মিলনী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টিটু তালুকদার, চট্টগ্রাম প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার প্রণয় সানী, সনাতনী বিদ্যার্থী সংসদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী অভি চৌধুরী প্রমুখ।

জেএন

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!