চট্টগ্রামে ‘দখলকাণ্ডে’ আওয়ামী লীগ নেতা দিদার, শ্লীলতাহানির অভিযোগ নারীর

মশা নিধনের নামে শাহ গরিবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটিতে জায়গা দখলের চেষ্টা এবং নারীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্ত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত শনিবার (৮ জুলাই) রাতে নগরীর খুলশীর শাহ গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটিতে এমন ঘটনা ঘটে। সোমবার (১০ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টায় শ্লীলতাহানির বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

শ্লীলতাহানির শিকার মিনুয়ারা বেগম এই সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি ২০৭/৬৩২ গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর রোডের মরহুম দুদু মিয়ার মেয়ে। ওইদিনের ঘটনায় তার আরেক বোন মুনমুন ফাতেমাও শ্লীলতাহানির শিকার হন। সংবাদ সম্মেলনে তার বোন নিলু পারভীন, ফেরদৌস মুক্তা, দিলোয়ারা বেগম, মিনুয়ারা বেগম ও ভাই জাহেদ হাসান।

এছাড়া হামলার বেশ কিছু ভিডিও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে। এতে দেখা গেছে, পুলিশের সামনেই একটি গেটে হামলা চালিয়েছে বেশ কিছু লোকজন। অভিযুক্ত সেই জায়গায় একটি সাদা কন্টেইনার স্থাপন করা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মিনুয়ারা বেগম বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে এই এলাকায় পরিবারসহ বসবাস করছি। আমাদের জায়গা থেকে নিবন্ধনহীন শাহ গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটির নামে তিনটি ফ্ল্যাট দাবি করেন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা দিদারুল আলম চৌধুরী, সভাপতি মহিউদ্দিন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক কাউছার। কিন্তু আমরা দিতে অপারগতা জানালে তারা আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়।

তিনি বলেন, গত শনিবার ডেঙ্গু মশা নিধনের নামে আমাদের ঘেরাও করা দুই কাটা জায়গায় অভিযুক্তরা প্রবেশ করেন। পরিষ্কারের নামে সেখানে একটি কন্টেইনার এনে বসান। সোসাইটির অফিস করার জন্য তারা এই পাঁয়তারা করেন। তাদের বাধা দিলে আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করার পর রোববার (৯ জুলাই) সকালে পুলিশ আসে। তারা থানা পুলিশের সামনেও বেপরোয়াভাবে আমাদের ওপর হামলা করে। এছাড়া আমার মা ও বোনের ওপর হামলা চালায়। তাদের শরীরে রক্তাক্ত জখম হয়।

কিন্তু কেন এই জায়গা দখল করতে চাইছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বিল্ডিং করতে চাইলে দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন তিনটি ফ্ল্যাট দিতে হবে। অন্যথায় জায়গা দিতে হবে। কিন্তু এমন অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর দলবল নিয়ে হামলা চালায় তার ভাড়াটে গুণ্ডাবাহিনী। এছাড়া শনিবার রাত থেকে এখনও পর্যন্ত থেমে থেমে পাথর নিক্ষেপ করছে ও নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করছে। এছাড়া হাউজিংয়ের ভেতরে হাঁটাচলা বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে।

ভুক্তভোগী জাহেদ হাসান বলেন, আমাদের মোট ১০ গণ্ডা সম্পত্তির মধ্যে ২ কাঠা জমি নিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে নালিশি মামলা হয়। সেই মামলায় ২০১২ সালে আমরা পূর্ণঙ্গ রায় পাই। সেই রায়ে উল্লেখ করা হয়, নালিশি জমি থেকে বাদিকে বেদখল বা নালিশি জমিতে বিবাদি ও তার দলীয় লোকজন অনুপ্রবেশ করা বা জমির রূপ পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকার জন্য চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়।

তিনি বলেন, তারা উচ্চ আদালতের নিষেধজ্ঞা অমান্য করে গত শনিবার রাতে দলবল নিয়ে আমাদের জায়গা দখলের জন্য আসেন। এর আগে গত ২৪ জুন হত্যার হুমকি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় জিডি করেছি। পরে সোমবার (১০ জুলাই) পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ করি।

অভিযুক্ত লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম আবাহনীর উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ব্লাইন্ড ক্রিকেট কাউন্সিলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান।

উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ভুয়া দাবি করে লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, এটি অন্য জায়গার। সোসাইটিতে ১৪৬ সদস্যের মধ্যে ১৪৫ জন একতা রয়েছে। শুধু সেই ছেলেটি বহিরাগত ছেলে নিয়ে এসে এখানে সমস্যা সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, সোসাইটির জায়গার দলিলে যদি মালিকানা গণ্ডায় থাকে তাহলে ওই পরিমাণ জায়গা কাঠায় ভোগ করতে হয়। বাকিগুলো সোসাইটিকে দিয়ে দিতে হয়। কারণ রাস্তা, ড্রেনসহ নানা কাজে এসব জায়গা ব্যবহৃত হয়। আগে সোসাইটির জন্য দুই কাঠা জমি দিলেও জাহিদ ছেলেটি নানাজনের কুপরামর্শে মামলা-মোকদ্দমা করে বসে আছে। এছাড়া আমাদেরও সন্তান আছে। সে এতিম ছেলে বলে তাকে আমরা অনেক সুযোগ দিয়েছি। যেহেতু সোসাইটির রাস্তার জন্য জায়গা বা টাকা কোনোটি দেয়নি, সোসাইটিতে তাদের হাঁটাচলা বন্ধ করে দেবে। ল অ্যান্ড ফোর্সিং অথোরিটিকে জানাবো এই বিষয়ে।’

নারীদের ওপর হামলার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আমার আমলনামা ঘেটেও এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।’

আরএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!