ঘরে থেকে যেভাবে করোনাজয় করলো এক পরিবারের তিন সদস্য

আকমাল হোসেন। ঢাকার দেশ রূপান্তর পত্রিকার চট্টগ্রামের অফিসের আলোকচিত্রী। স্ত্রী ও বাবাসহ তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন গত মাসে। পরবর্তীতে ঘরোয়া চিকিৎসায় তারা কয়েকদিনেই করোনা জয় করেন। এখন তিনি করোনা আক্রান্তদের প্লাজমা দিতে চাইছেন।

করোনা উপসর্গ থেকে পরিবারের তিনজনের করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং পরবর্তীতে করোনাজয়ের পুরো গল্পটিই তিনি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে।

আকমাল হোসেন বলেন, ‘মে মাসের ১৭ তারিখ মধ্যরাতে বাবার জ্বর ও গায়ে ব্যথা দিয়ে বাসায় করোনা প্রবেশ করে। পরের দিন ১৮ তারিখ বাবাকে নিয়ে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইটিডিতে করোনা পরীক্ষা করি। সে রিপোর্ট পাই ২১ তারিখ এবং রিপোর্ট ছিল পজিটিভ। প্রথমে এসবি (পুলিশের বিশেষ শাখা) এবং পরে থানা থেকে ফোন আসলে আমরা নিশ্চিত হই। সেদিন রাতেই আমরা পরিবারের ৫ জন আলাদা আইসোলেটেড হয়ে যাই।

‘পরবর্তীতে ২১ তারিখ আমি ও আমার স্ত্রীর জ্বর ও মাত্রাতিরিক্ত শরীর ব্যাথা হলে আমরাও টেস্ট করাই এবং আমাদের দুই জনেরও করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। যেহেতু আমরা আলাদা আগেই হয়েছিলাম তাই আমরা আরো সতর্ক থাকতে শুরু করলাম। যতটুক ধারণা আমাকে বিভিন্ন স্থানে ছবির জন্য যেতে হয়েছে হয়তো সেখান থেকে সংক্রমিত হয়েছি’— বলেন আকমাল হোসেন।

যেভাবে তিনজনের করোনা জয়
আলোকচিত্রী আকমাল হোসেন বলেন, ‘আমরা আইসোলেটেড থাকতে শুরু করার পর আমাদের সবার খাবার প্লেট, গ্লাস, জগ, মগও আমরা আলাদা করে ফেলি। যার যার কাপড়সহ সবকিছু নিজেরাই ধুয়ে ফেলি। প্রতিদিন সকালে আম্মা আমাদের পানি করে দিতেন। স্যাভলন দিয়ে ওই পানিতে আমরা যে যার রুম ধুয়ে মুছে রাখতাম।’

‘এরপর নিয়মিত আমরা গরম পানি খাওয়া, ভাপ নেওয়া, আদা-রসুন-তেজপাতা দিয়ে চা খাওয়া শুরু করি— যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। টানা ১৪ দিন আমরা দূর থেকে একজন অপরজনের সঙ্গে কথা বলেছি। শুধু আম্মা আর আমার স্ত্রীকে রান্নার জন্য দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বের হতে হতো।’

আকমাল বললেন, ‘তবে বাবার যেহেতু ডায়াবেটিস আছে, তাই ওনাকে নিয়ে চিন্তিত থাকতাম। ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাকে ডায়াবেটিসের ওষুধ, জ্বরের জন্য নাপা এক্সটেন্ড, মোনাস১০, এ জেড ৫০০, ফুসফুসের ইনফেকশন রোধে মেথিপ্রেড নামের ওষুধ খাওয়াতে লাগলাম। সাথে ৪ বার গরম পানির ভাপ, গার্গল করা চলতে থাকে।
আমি ও আমার স্ত্রী জ্বরের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে নাপা এক্সটেন্ড, এজেড৫০০, মোনাস ১০ সহ আরো কিছু ওষুধ খেতে থাকি— যা আমরা নিয়মিত খাই ১০ দিন। আর এই বিপদে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে অক্সিজেন মাপার অক্সিমিটার ও গ্লুকোমিটার।’

বেকার সময়ে যে যার মত করে ব্যায়াম
আকমাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সবাই দিনের বেশিরভাগ বেকার সময়ে যে যার মত করে ব্যায়াম করেছি। সাথে ইন্টারনেট ও ইউটিউবের সহযোগিতায় ফুসফুস ভালো ও সতেজ রাখার কিছু কিছু ব্যায়াম করি।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা তার দ্বিতীয় টেস্ট করতে নমুনা দেন ৪ জুন। সে রিপোর্ট আমরা আজ ১৮ জুন হাতে পাই। আমি ও আমার বাসার বাকি সদস্যরা দ্বিতীয় টেস্ট করি ৯ জুন, যা আজ হাতে পাই। সবার রেজাল্ট নেগেটিভ। আমি এখন প্লাজমা দানে অধীর আগ্রহী। রক্তের গ্রুপ ও+।’

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!