কৃষকের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দেশজুড়ে, চট্টগ্রামেই চারটি— তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

রুলের জবাব দিতে হবে সিএমপি কমিশনারকেও

মাদকব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় সাভারের এক কৃষকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে একের পর এক করা হয়েছে ভুয়া মামলা। এর মধ্যে শুধু অবস্থায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালী ও চান্দগাঁও থানায় ওই কৃষকের বিরুদ্ধে করা হয়েছে চারটি মামলা। অথচ তিনি তখন আরেক ভুয়া মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারারুদ্ধ ছিলেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। এসব মামলায় তাকে থাকতে হয়েছে চট্টগ্রাম কারাগারেও। চট্টগ্রামেই শুধু নয়, ওই কৃষক যখন কাশিমপুর কারাগারে অন্তরীণ তখন রাজধানীর মিরপুর থানার দুটি, জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার একটি এবং মাদারীপুর সদর থানায় দায়ের করা আরও একটি মামলায় পরোয়ানার মাধ্যমে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সর্বশেষ তিনি ছিলেন কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, অর্থ পাচার, ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়।

আজিজুর রহমান নামের ওই কৃষক সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ফিরিঙ্গীকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।

এমন অবিশ্বাস্য সব ঘটনায় দায়ের করা এক রিটের শুনানি করতে গিয়ে এই কৃষকের বিরুদ্ধে ভুয়া পরোয়ানা ও মামলার বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। রুলে ভুক্তভোগী আজিজুর রহমানকে ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও বিশেষ শাখার প্রধান (অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক), পিবিআইয়ের উপ মহাপরিদর্শক, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার, মাদারীপুর, জামালপুর, গাজীপুরের পুলিশ সুপার, জয়দেবপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে এসব ভুয়া মামলা করা হয়েছে। এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে আমার দৃঢ় অবস্থান থাকার কারণে ভুয়া মামলা করা হয়ে থাকতে পারে। মাদকের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান অনেকেই ভালোভাবে নেয় না। আমাকে যারা হয়রানি করছে তাদের খুঁজে বের করা এবং এসব অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করছি।’

জানা গেছে, কৃষক আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা এক মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ তৃতীয় আদালত গত বছরের ২৯ মে দেওয়া এক আদেশে বলেন, আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজ নামে কোনো আসামি নেই। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজিজুরের অন্তর্বর্তীকালীন হাজতি পরোয়ানার ফটোকপিতে শুধু দায়রা নম্বর ছাড়া আর কোনো কিছুর মিল নেই এবং আদালত (চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ তৃতীয় আদালত) থেকে তার নামে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানাও ইস্যু করা হয়নি। অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকলে তাকে (আবদুল আজিজ) মুক্তির নির্দেশ দেন আদালত।

জানা গেছে, এভাবে চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য স্থানে দায়ের করা সাতটি মামলাতেই আবদুল আজিজের মুক্তির আদেশ হয়। তবে গাজীপুরের জয়দেবপুরে দায়ের হওয়া মাদক মামলাটি চলমান থাকায় এখনও তাকে নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দিয়ে যেতে হচ্ছে। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করা আইনজীবী সৈয়দ ইউনুস আলী রবি জানান, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার একটি মাদক মামলায় সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ফিরিঙ্গীকান্দা গ্রামের গেদু মিয়ার ছেলে কৃষক আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজকে প্রথমে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই মামলায় আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এরপর তার বিরুদ্ধে একে একে আরও ৭টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় আজিজুর রহমান ১০০ দিন জেল খাটেন।

ওই আইনজীবী জানান, গাজিপুরের জয়দেবপুর থানায় ২০১৭ সালের ২০ মার্চ আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় ২০১৮ সালের ৬ মার্চ তাকে গ্রেফতার করে সাভার থানা পুলিশ। পরে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে। শুনানি শেষে আদালত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কয়েক দিন সেখানে থাকার পর আবদুল আজিজকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর তিন দিন পর সেখান থেকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে। এভাবে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ১০০ দিন কারাভোগ করার পর ২০১৮ সালের ১৩ মে তার জামিন হয়। পরে ১২ জুন তিনি মুক্তি পান।

‘ভুয়া’ মামলায় অভিযোগ আনা হয়, ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুর থানার পুবাইল তালুটিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৪০০টি ইয়াবা বড়িসহ রিপা ও আমেনা নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আজিজসহ নয়জন পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার মূখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে। শুনানি শেষে আদালত তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কয়েক দিন সেখানে থাকার পর তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর তিন দিন পর সেখান থেকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!