৪৯ বছর আগে দামামা বাজিয়ে বাংলায় এসেছিল স্বাধীনতা

মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

একাত্তরের ২৬ মার্চ তমসাঘন অন্ধকার রাত্রি পেরিয়ে দিগ্বিদিক যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে বাংলায় এসেছিল স্বাধীনতা। পরাধীনতার শেকল ভেঙে অমূল্য ঐশ্বর্য, অনন্য সম্মান স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে ৩০ লাখ মুক্তিকামীর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাংলার সবুজ ঘাস। ভয়াল কালরাত্রির পোড়া মাটি, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল এদিন। রাতের চুপিসারে হানা দেওয়া মৃত্যু আর ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে রক্তিম সেই নতুন সূর্য। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখল লাশপোড়া ভোর।

আকাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। পুড়ছে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল-সবুজ পতাকা। জ্বলছে মায়ের শাড়ি, বোনের রঙিন জামা। চোখে জল। বুকে আগুন। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ে তুলল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ট্যাঙ্কের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক।

সময়ের হাত ধরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নতুন সূর্যোদয়ের সেই দিন আজ। ২০০ বছরের দাসত্ব আর ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার দিন। আজ মহান ২৬ মার্চ। স্বাধীনতার আজ ৪৯ বছর।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তানি শাসকদের নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রামের চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে। মাতৃভাষার দাবিতে ’৪৮ সাল থেকে শুরু করে ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদান, সংগ্রাম-আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে রায়, ’৫৬-তে এসে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায়, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তির সনদ ঘোষণা, ’৬৯-এর ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিদায় এবং ’৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায়ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এসেছে স্বপ্নের স্বাধীনতা।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ এড়াতে এ বছর বাতিল করা হয়েছে স্বাধীনতা দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সব ধরনের জনসমাগম ও অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির কথা উল্লেখ করে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনসমাগম হয় এমন ধরনের সব অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সব জেলায় শিশু সমাবেশ ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই কারণে আমরা মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনসমাগম না করে টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত।’

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল এবার কর্মসূচি বাতিল করেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!