সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ৩ কোটি টাকা ‘মেরে খাওয়ার’ অভিযোগ গেল দুদকে

চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের একজন ট্রাস্টিজ বোর্ড সদস্য সরওয়ান জাহান। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বেও ছিলেন। কোষাধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠানের জমা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিলের প্রায় ২ কোটি টাকা তুলে নেন তিনি। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের টাকা দিয়ে নগরীর বায়েজিদের আরেফিন নগর এলাকায় কিনেন জায়গা কিনেন তিনি। ওই জায়গার দলিল প্রতিষ্ঠানের নামে করার কথা থাকলেও তিনি তা নিজ নামে করে নেন। এভাবে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আট ধরনের খাত থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

সরওয়ার জাহানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এছাড়া তার স্ত্রী প্রফেসর ড. ইসরাত জাহানের নামও আছে সেই অভিযোগের তালিকায়।

২০২৩ সালের ২৫ জুন স্ত্রীসহ সরওয়ান জাহান বিরুদ্ধে দুদক বরাবরে অভিযোগটি দেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মো. নূর আহমেদ।

সেই অভিযোগে বলা হয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সাবেক কোষাধ্যক্ষ সরওয়ার জাহান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভবিষ্যত তহবিলের জমাকৃত ১ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ১৪০ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে উত্তোলনের পর আত্মসাৎ করেন। ওই টাকা জমা ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের প্রবর্ত্তক শাখায়। যার হিসাব নম্বর ০১১৯০৩১০০০০১৮৬৫।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক না হওয়ার সত্বেও বিদেশি নাগরিক মার্ক বার্থোলোমিসহ তার দুই সহযোগীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে বেআইনিভাবে ২৮ লাখ ১১ হাজার টাকা পরিশোধ করার ব্যয় দেখিয়েছেন সরওয়ার। এছাড়া কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই মো. ইলিয়াছ নামের ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন করে ২৮ লাখ টাকা প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতি করেন সাবেক এই কোষাধ্যক্ষ। একইসঙ্গে অনুমতি না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কাগজপত্রাদি বিক্রি করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা কর্তৃপক্ষের তহবিলের জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয় বলেও উল্লেখ করে অভিযোগে।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির কোনো শাখা প্রতিষ্ঠান না হওয়ার সত্বেও দখিনা প্রকাশনী, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস ইত্যাদি দেখিয়ে সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনসহ মোট ৫০ লাখ ৭ হাজার ৯৫৫ টাকা বেআইনিভাবে ব্যয় দেখান। এই টাকার পুরোটাই তিনি আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগে বলা হয়।

অভিযোগ বিবরণে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নিজ নামে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেন সরওয়ার জাহান। ওই এজেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৮৮ হাজার ৭৩৮ টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার আরেফিন নগরের ৭৭৫ দাগের অন্তর্ভুক্ত জায়গা ইউনিভার্সিটির টাকায় কিনলেও জায়গার দলিলটি নিজের নামে সম্পাদন করেন সরওয়ার জাহান। পরে কর্তৃপক্ষের সভায় সিদ্ধান্তের পরও ওই জায়গা এখনও ইউনিভার্সিটির নামে করেননি সাবেক এই কোষাধ্যক্ষ।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির নগরীর মেহেদীবাগের পুরাতন ক্যাম্পাসের ভাড়াকৃত ভবনের মধ্যে শুধুমাত্র ৬ নম্বর ভবনের অংশীদার ছিলেন সরওয়ার জাহান ও তার শরিকদারগণ। কিন্তু সেখানে বেআইনিভাবে পুরো ভবন ভাড়া দেন তিনি। ওই ভবনে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান (সিএলআই) নামে একটি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চালু করেন। সিএলআইয়ের ব্যয়সহ ভবনের সকল ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে করতেন তিনি। এছাড়া মেহেদীবাগের ক্যাম্পাস ছেড়ে দেওয়ার পর তার ৬ নম্বর ভবনে ইউনিভার্সিটির টাকায় কেনা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, আসবাবপত্র ও অন্যান্য মালামাল ফেরত না দিয়ে অন্যজনকে ভাড়া দেন সরওয়ার জাহান।

সরওয়ান জাহান আরও দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ও ইশা খাঁ বিশ্ববিদ্যালয়) বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাবেক কোষাধ্যক্ষ সরওয়ান জাহান সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির একজন ট্রাস্টিজ সদস্য থাকাকালীন তার অনিয়মের টাকাগুলোর বিষয়ে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে তার কাছে পাওনা ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৪৩ টাকা ফেরত প্রদানের ব্যাপারে অনুরোধ করা হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।

দুদকে এই অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মো. নূর আহমেদ। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের পক্ষ হয়ে আমি অভিযোগটি দিয়েছিলাম দুদকে।’

এ বিষয়ে জানতে সাবেক কোষাধ্যক্ষ সরওয়ার জাহানকে একাধিকবার মুঠোফোন কল করা হলেও তিনি সংযোগ তোলেননি। পরে তার ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!