সন্ত্রাসী টিনুর হাতে ফুল দিল মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের ‘বিতর্কিত’ দুই নেতা

র‍্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়ার চট্টগ্রামের চকবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী নুর মোস্তফা টিনুর হাতে ফুল তুলে দিল সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহবায়ক কাজী নাঈম ও যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান। তারা দীর্ঘদিন ধরে মহসিন কলেজ থেকে বিতাড়িত বলে জানা গেছে। তবে বিশেষ দিবসে পুলিশ পাহাড়ায় বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে ফুল দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে।

ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির শীর্ষ পদধারী নেতা হয়ে একজন সন্ত্রাসীর হাতে ফুল তুলে দেওয়ার ছবি দেখে বিস্মিত হয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই।

সোমবার (১৫ মার্চ) বিকালে চকবাজার এলাকার টিনুর বাসায় যান তারা। এসময় চট্টগ্রাম হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটির আহবায়ক কাজী নাঈম ও মিজান টিনুর সাথে হাসি মুখে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়।

সারাদেশে ক্যাসিনো ও সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর রাতে নগরের চকবাজার এলাকার বাসা থেকে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হন নুর মোস্তফা টিনু। এরপর তার বাসা তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি শর্টগান ও ৬৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘ কারাভোগের পর চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের আগেই কারামুক্ত হন টিনু।

এমন এক আলোচিত সন্ত্রাসীর সাথে মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ককে ফুল হাতে দেখা যাওয়ার বিষয়ে নগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে সমালোচনা।

এদিকে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কাজী নাঈমের বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মহসিন কলেজ ক্যাম্পাসে মোবাইল চুরির দায়ে জনসম্মুখে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ। শিবিরের কর্মী ছিলেন। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের আগে রাতের আঁধারে বঙ্গবন্ধুর ব্যানার ছিঁড়ে সমালোচিতও হয়েছিলেন তিনি। যার রয়েছে ভিডিও ফুটেজ। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর টাকার বিনিময়ে তাকে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের শীর্ষ পদটি দিয়েছেন বলে অভিযোগ খোদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগেরই একটি অংশের।

অন্যদিনে এই কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। চকবাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত টিনু গ্রুপের অন্যতম সদস্য মিজান।

কমিটি ঘোষণার পরপর মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেতা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে।

মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুল বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে শিবির সংশ্লিষ্ট, মোবাইল চোর, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত, ইভটিজার, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়া ছাত্রলীগসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য জন্য হুমকি স্বরুপ। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালবাসতে জানেনা তারা কখনো ছাত্রলীগ করতে পারে না।’

এ বিষয়ে চকবাজার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুর মোস্তফা টিনু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি তাদের মধ্যে গ্রুপ বলতে কিছু নেই। সবাই দলের জন্যই কাজ করি। আর আমাকে চকবাজার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বা বড় ভাই হিসেবে ফুল দিতে আসতে পারে। ফুল দিতে আসছে বলে আমার অনুসারী হয়ে যাবে কেন?’

তবে নিজেকে চকবাজার থানার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দাবির বিষয়ে নুর মোস্তফা টিনুর এমন বক্তব্যে কোন সত্যতা পাওয়া যায় নি। নগর ছাত্রলীগের সাবেক একাধিক নেতা টিনুর এমন দাবিকে হাস্যকর ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলে মন্তব্য করেছেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কাজী নাঈম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার একমাত্র অভিভাবক হচ্ছে নওফেল ভাই। আমি নওফেল ভাইয়ের রাজনীতি করি। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ভাই ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর ভাই আমাকে আহবায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন। সে দায়িত্ব আমি দলের জন্য নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘টিনু ভাই চকবাজার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তাই তাকে ফুল দিতে গিয়েছিলাম। এছাড়া আর কিছুই না। আমাদের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছে সব ভিত্তিহীন বানোয়াট। রাজনীতি করলে ভাল মন্দ অনেকে অনেক কিছু বলবে। সবকিছুর সাথে মোকাবিলা করে দলের জন্য কাজ করে সামনে এগিয়ে যাব।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ১০ ফেব্রুয়ারি কাজী নাঈমকে আহবায়ক করে হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। এরপর থেকে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এই কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এএন

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!