সক্রিয় সিন্ডিকেট—রেলের শত কোটি টাকার জায়গা দখল করে ৫০০ দোকান, বাদ নেই মসজিদ-মন্দিরও

চট্টগ্রামের ইপিজেড থেকে বন্দর থানার প্রায় ৫ কিলোমিটার অচল লাইনজুড়ে রয়েছে শত শত একর সরকারি জায়গা। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত এসব জায়গা দখলে নিয়েছে এলাকাভিত্তিক লোকজন। রেলের জায়গায় স্থাপনা তৈরি করে মাসে আয় করছে প্রায় কোটি টাকা। সম্প্রতি নতুন করে আবারও রেলের জায়গা দখলের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। এতে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বাড়ছে বিরোধ ও সংঘর্ষের মত ঘটনা।

জানা গেছে, প্রায় ৪৯ ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এসব জায়গা পরিত্যক্ত থাকায় দখল করে বহুতল ভবন, বাড়ি, কাঁচাবাজার মার্কেট, মসজিদ, মন্দির, গোডাউনসহ ৫ শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান না থাকায় উচ্ছেদের পরেরদিন আবারও দখল হয়ে যায় রেলের জায়গা। এসব দখলবাজদের মধ্যে রয়েছে সরকারি ও অন্যান্য দল ও নামসর্বস্ব সংগঠনের নেতা। এমন কী দখল বাণিজ্যে ব্যবহার করা হয় এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং।

সরেজমিনে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বন্দর থানার আনন্দবাজার গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রেল লাইন দীর্ঘদিন ধরে অচল। স্বাধীনতার পর থেকে এসব পরিত্যক্ত জায়গা দখল করে নিয়েছে স্থানীয়রা। সেখানে দেখা যায়, সিমেন্টক্রসিং এলাকায় বিশাল একটি অংশের জায়গা স্থানীয় ব্যবসায়ী আক্কাস সওদাগর নামে এক ব্যক্তির দখলে। সেখানে তার জাহাজের মালামাল রাখার জন্য বানানো হয়েছে দোকান ও গোডাউন।

আকমল আলী রোডে রেলের জায়গা পাশে বসবাসকারী বিভিন্ন ব্যক্তিরা দখলে নিয়েছে। নেভী হাসপাতাল গেইট এলাকায় শাহাবুদ্দিন গং রেলের জায়গায় গড়ে তুলেছে কাচাঁবাজার, মার্কেট ও দোকানপাট। এছাড়াও নেভী হাসপাতাল গেইট থেকে রেলের জায়গায় স্থানীয়রা বসিয়েছে দোকান ও একাধিক স্থাপনা।

বন্দরটিলা রেললাইন থেকে সিইপিজেড চেকপোস্ট পর্যন্ত তাজু, আজগর, মানিকের রয়েছে কাঁচাবাজার মার্কেট। সেখানে একই সারিতে রয়েছে মসজিদ ও মন্দিরসহ শতাধিক দোকানপাট।

এছাড়া, সিইপিজেড ফ্যাক্টরি প্রধান গেইটের চেকপোস্ট থেকে প্রায় এক একর জায়গা দখল নিয়েছে বাস্তহারা সংগঠনের এক নেতা। সংগঠনের ওই নেতা হলেন বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি দখল করে তার সংগঠনের অফিস, মসজিদ ও দোকানপাট গড়ে তুলেছেন। এই এলাকা থেকে আরও একশ মিটার দূরে ধুমপাড়া পকেট গেইট পর্যন্ত রয়েছে শতাধিক দোকানপাট ও ভাড়ার ঘর। ধুমপাড়া থেকে আনন্দবাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রেলের জায়গায় গড়ে উঠা প্রায় শতাধিক স্থাপনার কারণে রেল লাইনের চিহ্ন মুছে গেছে।

জানা গেছে, গত নভেম্বরে ইপিজেড থানার কলসি দিঘীর রেলবিট এলাকায় প্রায় ৩ একর জায়গা দখলের মরিয়া হয়ে উঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত রানা ও একই এলাকার বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত সালাউদ্দিন। জায়গাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সালাউদ্দিনের দখলে থাকলেও তা দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠে রানা। ওই সময় উভয়পক্ষের লোকজন মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

ইপিজেড থানার অপরারেশন অফিসার (এসআই) সাজেদ কামাল বলেন, সম্প্রতি ইপিজেড রেলবিট এলাকায় রেলে জায়গা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সমস্যা হলে উভয়পক্ষকে ডেকে আদালতে যাওয়ার জন্য বলা হয়। সেখানে একটি পক্ষের দাবি তারা রেল থেকে ইজারা নিয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহাবুবুল করিম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে রেলের বিচ্ছিন্নভাবে চট্টগ্রাম শহরে অনেক জায়গা পরিত্যক্ত থাকায় দখল করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। জায়গা বেশি হওয়ার কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। ইপিজেড ও বন্দরের একটি এলাকায় একজন বা দুইজনকে মৎস্য চাষ করতে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে স্থায়ী স্থাপনা করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়নি। শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান চালানো করা হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ মার্চ ইপিজেড কলসি দীঘিরপাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ২ একর জায়গা অবমুক্ত করা হয়। এ সময় বহুতল ভবন, সেমিপাকা ঘরসহ ছোট বড় মোট ৬৭৮টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ হওয়া এসব স্থাপনা থেকে দখলদারদের মাসিক আয় ছিল প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এরপর দেশে মহামারি করোনা সংক্রমণের প্রার্দুভাব বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় এ উচ্ছেদ অভিযান।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!