ফাইনালে যাওয়ার লড়াই আজ (৯ জুলাই) শুরু হচ্ছে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের প্রথম সেমি ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ শেষ দল হিসেবে সেমি নিশ্চিত করা নিউজিল্যান্ড। গ্রুপপর্বে শীর্ষে থেকে সেমিতে নামবে টিম ইন্ডিয়া। গ্রুপ পর্বের দু’দলের একমাত্র ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল। আর মূল মঞ্চে নামার আগে কিউইদের কাছে প্রস্তুতি ম্যাচে হেরেছিল কোহলি-ধোনিদের দলটি। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
দুই দলের অবস্থান:
আইসিসির প্রকাশিত সবশেষ র্যাংকিংয়ে কিউইদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে ভারত। কিউইদের অবস্থান র্যাংকিংয়ের তৃতীয় স্থানে। অন্যদিকে ভারতের অবস্থান দুই নম্বরে। ভারতের রেটিং পয়েন্ট ১২৩, কিউইদের রেটিং পয়েন্ট ১১২। তবে র্যাংকিং কিংবা অতীত দিয়ে বিশ্বকাপে কোনো দলকে বিচার করা বোকামি। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের সেমি ফাইনালে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। যেখানে র্যাংকিং কোনো মূল্য বহন করে না। মহারণের মাঠে ব্যাট-বলে পারফর্ম করেই ফাইনালের টিকিট কাটতে হবে।
সেমি ফাইনালে দু’দলই লড়বে একদম শূন্য থেকে। যেখানে নেই কোনো পয়েন্ট কিংবা নেট রান রেটের ব্যাপার। হারলেই দেশের বিমান ধরতে হবে। আর জিতলে সুযোগ থাকছে বিশ্বকাপের সোনালি শিরোপা ছোঁয়ার আরও কাছে যাওয়ার। পরিসংখ্যান সেমি ফাইনালে কোনো অর্থ বহন করে না। ময়দানের খেলাতে যে দলটি নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারবে তারাই শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হাসবে।
শেষ পর্যন্ত জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব। কার হাতে উঠবে লর্ডসের ফাইনালের টিকিট? ভারত নাকি নিউজিল্যান্ডের? মহারণে কে হবে জয়ী অপেক্ষা করতে হবে তার ফলাফল জানতে।
ভেন্যু: বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্টেডিয়াম ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত ক্রিকেটের ঐতিহ্যের অন্যতম বাহক ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ক্রিকেটের সব থেকে প্রাচীন স্টেডিয়াম গুলোর ভেতরে অন্যতম এই ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই স্টেডিয়ামে প্রায় ২৬ হাজার সমর্থক খেলা উপভোগ করতে পারেন। ১৮৮৪ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে এই স্টেডিয়ামের। আর ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডের পথ চলা শুরু হয় স্টেডিয়ামটির।
ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামটি কেবল ক্রিকেট গ্রাউন্ড হিসেবেই সুপরিচিত নয়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ইতিহাস এখনো জ্বলজ্বল করছে এখানে। ১৯৪০ সালে এই স্টেডিয়ামকে সৈন্যদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হত। বোমার আঘাতে স্টেডিয়ামটির কয়েকটি স্ট্যান্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে আবারো সংস্কার করা হয় স্টেডিয়ামটির।
বিশ্বকাপে হেড টু হেড
মোট ম্যাচ: ৮টি, নিউজিল্যান্ড জয়ী: ৪টি। ভারত জয়ী: ৩টি, ম্যাচ পরিত্যক্ত: ১টি।
মুখোমুখি দুই দল
মোট ম্যাচ: ১০৬টি, নিউজিল্যান্ড জয়ী: ৪৫টি। ভারত জয়ী: ৫৫টি। ড্র: ১টি, ম্যাচ পরিত্যক্ত: ৫টি।
দৃষ্টি থাকবে যাদের ওপর:
কেন উইলিয়ামসন, ট্রেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড), বিরাট কোহলি, জাসপ্রতি বুমরাহ (ভারত)।
বিশ্বকাপের লিগ পর্বে সাক্ষাত হয়নি ভারত ও নিউজিল্যান্ডের। বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাবুতে বসে থেকেই একটি করে পয়েন্ট নিয়েছে তারা। আবারও দুই সেমিফাইনালেই খলনায়ক হয়ে দাঁড়াতে পারে বৈরী আবহাওয়া। লিগ পর্বের মতোই ভেস্তে যেতে পারে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। আবহাওয়াবীদরা আগেই এ ব্যাপারে আইসিসিকে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। তারা জানিয়েছেন, দুই সেমিফাইনালের দিন বৃষ্টির আশংকা আছে। ম্যানচেস্টারে বৃষ্টির সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। আর বার্মিংহামে দ্বিতীয় সেমিতে সেই সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ। এমনকি দুই ম্যাচের রিজার্ভ ডে’তেও বৃষ্টির শংকা আছে।
যেভাবে সেমিফাইনালে
ভারত
নিউজিল্যান্ড
২০০৩ সালের পর বিশ্বকাপে দেখা হয়নি দুই দলের। এবার লড়াইয়ের জন্য ভারত-নিউজিল্যান্ড প্রস্ততি নিলেও বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় তাদের খেলা। ভারত আর নিউজিল্যান্ডের মধ্যে কারা যে শক্তিশালী, লিগ পর্বে সেটা পরখ করার সুযোগ হয়নি দুই দলের। বৃষ্টি শঙ্কা না থাকলে দুই দলই সেমিফাইনালে তাদের সেরাটা দিয়েই লড়াই করবে বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ইংল্যান্ডের তুলনায় নিউজিল্যান্ডকেই শক্ত প্রতিপক্ষ মনে করছেন। তিনি বলেছেন, এবারের বিশ্বকাপ ভারত জয় করেই ছাড়বে। সুতরাং কিউইদের বিরুদ্ধে জয়ছাড়া কোনো ভাবনা নেই আমাদের। কেন উইলয়ামসনও চাইছেন নিউজিল্যান্ডকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিতে। ভারতকে শক্ত প্রতিপক্ষ মানলেও তারা সেরাটা উজার করে খেলে শক্তির জানান দিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলতে চাইছে। উইলিয়ামসন বলেন, বৃষ্টিবাধা না দিলে দারুণ একটি ম্যাচ হবে। এক কথায় শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই হবে ভারতের সঙ্গে।