দফায় দফায় বাড়ছে মেয়াদ, তবু শেষ হয় না পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কাজ

দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হচ্ছে না পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দফায় মেয়াদ বেড়ে এখন দৃষ্টি ২০২১ সালের জুন মাস। প্রকল্পের তিন বছরে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬৩ শতাংশ। যে গতিতে কাজ এগোচ্ছে এতে বর্ধিত মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরেও ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্দর সূত্রমতে, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে উদ্বোধন হওয়া প্রকল্প ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে কাজ শেষ করতে না পারায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর করা হয়। এখন এ সময়ের মধ্যেও শেষ হচ্ছে না প্রকল্পটির কাজ। তবে এবার কাজ শেষ করতে না পারার কারণ হিসেবে করোনাভাইরাস মহামারিকে দায়ী করা হচ্ছে।

জানা যায়, বার্থিং, কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এক হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বছরে এ টার্মিনালের কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা সাড়ে ৪ লাখ টিইউএস। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে ৩২ একর পশ্চাৎ সুবিধাদিসহ ৬০০ মিটার দীর্ঘ জেটি (তিনটি বার্থ), ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটি, এক লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার আরসিসি পেভমেন্ট (আভ্যন্তরীন ইয়ার্ড এবং রাস্তা), ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার সিএফএস (কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন) শেড, ৬ মিটার উচ্চতার এক হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস্ বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ পোর্ট অফিস বিল্ডিং, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, ২ হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রাক নির্মাণ, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৪ লেন বিশিষ্ট শূন্য দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এবং ৬ লেন বিশিষ্ট ১ কিলোমিটার রাস্তা স্থানান্তর পূর্বক পুনঃনির্মাণ, অন্যান্য স্থাপনা যেমন সিকিউরিটি পোস্ট, গেট হাউস, ফুয়েল স্টেশন, লেবার শেড ইত্যাদি।

এছাড়াও রয়েছে ২টি টাগ বোট (প্রতিটি ৫০ টন) বিপি, ২টি পাইলট বোট, ২টি ফাস্ট স্পিড বোট ক্রয়। টার্মিনাল পরিচালনার কাজে ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি যেমন- ২টি ফায়ার ট্রাক, একটি ফায়ার কার, ৩টি নিরাপত্তা পেট্রোল কার, একটি এম্বুলেন্স, ৪টি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি), ৪টি স্ট্রাডেল কেরিয়ার, ৪টি রিচ স্ট্যাকার, ৮টি রাবার টায়ারড গেন্ট্রি (আরটিজি), ৪টি লো-মাস্ট ফর্ক লিফ্ট, ৪টি ফর্ক লিফ্ট, একটি রেইল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরএমজি) ক্রয়।

২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে কাজের সাইট হস্তান্তর করা হয়েছে। সেনাবাহিনী কাজের সাইটে অবস্থান নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে স্থায়ী ব্যারাক নির্মাণ, বালি ভরাট, ভূমি উন্নয়ন, নতুন প্রস্তাবিত রাস্তা, বক্স কালভার্ট ড্রেইন নির্মাণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজসমূহ সম্পাদন করছে। সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে কন্টেইনার জেটি, ডলফিন জেটি, ফ্লাইওভার ও নতুন রাস্তার নির্মাণ কাজ করেছে।

জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে মেয়াদকাল বাড়িয়ে আগামী ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।।

প্রকল্পের মেয়াদকাল বাড়ানোর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. মিজানুর রহমান সরকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক বিদেশি লোক কাজে যোগ দিতে পারেননি। এছাড়াও শ্রমিকও সংকটে ছিল।

তিনি বলেন, যে হারে কাজ এগোচ্ছে এতে আগামী ডিসেম্বরে ৮০ শতাংশ শেষ হবে। মেয়াদ বৃদ্ধি করলেও কোন অর্থ বাড়বে না। ওভারঅল এ প্রকল্পে আরও কিছু সংযোজন হয়েছে এবং বিয়োজন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৬৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য দ্রুততম সময়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের মূখ্য উদ্দেশ্য। ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ হবে বলে আশা করতে পারি।

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!