চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফসহ লোক আটক, ‘পাগল’ সাজিয়ে ছাড়লো পুলিশ

২০২১ সালে কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখার ঘটনায় সারাদেশে যে তাণ্ডব দেখেছিল, সেরকমই আরও একটি ঘটনা থেকে রক্ষা পেলো চট্টগ্রামের মানুষ।

হাটহাজারীর একটি পূজামণ্ডপের ভেতরে পাগল’ এক যুবকের কাছ থেকে একটি পবিত্র কোরআন শরীফ ও কয়েকটি ইসলাম ধর্মের বই উদ্ধার করেছে সোমপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা। পুলিশ ওই যুবককে পাগল বলে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশের এই কাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে পূজা কমিটির নেতারা।

তারা বলেন, আটককৃত লোককে থানায় না নিয়ে স্পটেই ‘জামাই আদরে’ গাড়িতে তুলে নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

এই ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত ও দায়িত্বরত এসআইয়ের বহিষ্কারের দাবি জানান নেতারা।

শনিবার (২১ অক্টোবর) হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর এলাকার সোমপাড়া দুর্গা পূজামণ্ডপে ঘটে এই ঘটনা। সন্ধ্যা থেকে পূজামণ্ডপের আশপাশে ঘুরলেও রাত ১১টার দিকে পূজামণ্ডপ থেকেই আটক করা হয় ওই যুবককে। তবে তার পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে একজন সাদা কাপড় পড়া লোক দেখা যায়। তার মুখে দাঁড়ি এবং হাতে একটা থলে ছিল। লোকজনের ভীড়ে সন্ধ্যার পর ওই লোক পূজামণ্ডপে ঢুকে পড়ে। তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাকে আটক করে পূজা কমিটির নেতারা।

এসময় তার হাতে থাকা থলের ভেতর থেকে একটি পবিত্র কোরআন শরীফসহ কয়েকটি ইসলাম ধর্মের বই উদ্ধার করে মণ্ডপের দায়িত্বরত পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
কিন্তু দায়িত্বে থাকা হাটহাজারী থানার এসআই জসিম লোকটিকে পাগল বলে ছেড়ে দেন।

এসআই জসিমের এই কাণ্ডে তাৎক্ষণিক নিন্দা জানান সোমপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা।

মির্জাপুর সোমপাড়া দুর্গা পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ নাথ বাবু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোরআন শরীফসহ আমরা পূজামণ্ডপ থেকে একজন দাঁড়িওয়ালা লোককে আটক করি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে পুলিশের হাতে তাকে তুলে দিই। কিন্তু হাটহাজারী থানার এসআই জসিম তাকে মুহূর্তেই পাগল সাজিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। এসআই জসিমের এমন আচরণ ও কৌশলের প্রতিবাদ জানিয়েছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি এবং ওসি পরিদর্শনে এসেছেন। তারা আসার আগেই এসআই জসিম হঠাৎ ওই লোককে ছেড়ে দেওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা তাকে ধরে এনে আইনি প্রক্রিয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই জসিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি লোকটাকে প্রথমে আটক করি। পরবর্তীতে দেখলাম লোকটা পাগল, লোকটার কাছে থাকা একটি ব্যাগে কোরআন ছিল, নষ্ট কাপড় ছিল এবং একটি নারিকেল ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম লোকটা পাগল, তাই ছেড়ে দিয়েছি।’

ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া কিভাবে পাগল বলা হলো, এমন প্রশ্নের উত্তরে এসআই জসিম বলেন, ‘ওনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে পাগল।’

এর আগে ২০২১ সালে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় সারাদেশের মঠ-মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় একাধিক লোকের প্রাণহানি হয়।

যদিও পরে সিসিটিভি ফুটেজে ইকবাল নামের এক মুসলিম যুবককে ওই পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রেখে আসতে দেখা যায়। সেই ইকবালকে তখন মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মন্তব্য করেন আদালত।

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!