রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে সাড়ে ১৮ হাজার পরিবার বিধ্বস্ত

রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে সাড়ে ১৮ হাজার পরিবার বিধ্বস্ত 1চৌধুরী হারুনুর রশীদ, রাঙ্গামাটি : ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের বিপর্যয়ে জেলায় বিধ্বস্ত বাড়িঘরসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার পরিবার এবং প্রায় সোয়া লাখ মানুষ। সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার ৭৬৮ বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগণ্য সংখ্যক মানুষ সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে অগণিত মানুষ।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, ১৩ জুনের পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটিতে কমúক্ষে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের প্রাথমিক তালিকায় শুধু সরকারি স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন, গবাদি পশু, মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন সম্পদের ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকার। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, পর্যটন এবং বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানার স্থাপনা ও সম্পদ ক্ষতির হিসাব বিবরণী এ তালিকায় নেই। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রশাসনের প্রাথমিক তালিকার তথ্যবিবরণী মতে, ১৩ জুন পাহাড় ধসে সদরসহ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ১৮ হাজার ৫৫৮। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ১২৭ মানুষ। প্রাণহানি ঘটেছে ১২০ জনের। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ১২৩১ বাড়ি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৭টি বাড়ি।
এছাড়া রাস্তাঘাট, সেতু, কার্লভাট, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষতি মিলিয়ে হাজার কোটির টাকার অধিক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ জেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়ক, সেতু ও কার্লভাট ধসে প্রায় ১শ’ কোটির ক্ষতি হয়েছে বলে জানান, রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন।
রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, তার পৌরসভা এলাকায় সব মিলিয়ে ক্ষতি অন্তত ৪০০ কোটি টাকার। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা বলেন, তার উপজেলার ৬ ইউনিয়নে ৩০০ কোটির অধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে নিরূপণ করা ক্ষয়ক্ষতির একটি খসড়া তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, ক্ষয়ক্ষতির এ হিসাব চূড়ান্ত নয়। যদিও প্রাথমিকভাবে নিরূপণ করা খসড়া এরমধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিস্তারিত তথ্য আরও যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। চূড়ান্ত হিসাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে কমতে পারে। চুড়ান্ত তালিকা আবার সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী বিধ্বস্ত হওয়া বাড়ির সংখ্যা রাঙ্গামাটি পৌরসভায় সম্পূর্ণ ৩১৬ আংশিক ৭৭৬, সদর উপজেলায় সম্পূর্ণ ১১১ আংশিক ৩৭৪, বিলাইছড়িতে সম্পূর্ণ ১০৭ আংশিক ১৯৪২, কাউখালীতে সম্পূর্ণ ২০৪ আংশিক ৯০০, কাপ্তাইয়ে সম্পূর্ণ ২১৭ আংশিক ২৯৬ জুরাছড়িতে সম্পূর্ণ ৬২ আংশিক৫৮১, রাজস্থলীতে সম্পূর্ণ ১০৫ আংশিক ৪৪০, নানিয়ারচরে আংশিক ২০০, বরকলে আংশিক ১৫০০, লংগদুতে আংশিক ১০০০, বাঘাইছড়িতে আংশিক ১২২৫। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে রাঙ্গামাটি পৌরসভায় ১১২৬, সদর উপজেলায় ৪১০৮, বিলাইছড়িতে ৩১০০, কাউখালীতে ২৮০০, কাপ্তাইয়ে ২১৭, জুরাছড়িতে ৫৫১, রাজস্থলীতে ৫৪৮, নানিয়ারচরে ৮০০, বরকলে ৫৩০০।
এছাড়া সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ১৮৯২ দশমিক ৩১ হেক্টর ফসলি জমি। গবাদি পশু ও হাঁসমুরগি ধ্বংস হয়ে ক্ষতি হয়েছে ২৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা, ১টি কলেজ ও ৫টি স্কুল সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ায় ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আংশিক ধ্বংসে ক্ষতি হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা, ১৬টি পুলিশ ক্যাম্পের ক্ষতি ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা, স্বাস্থ্য বিভাগের ক্ষতি ২৫ লাখ টাকা, বিভিন্ন হাসপাতালের ক্ষতি ৬২ লাখ টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ৫৪ কোটি টাকা, সেনানিবাসের ৫ কোটি টাকা, বন ধ্বংসে ২৫ লাখ ৬৬ হাজার, বিদ্যুতের ক্ষতি ৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, টেলিযোগাযোগের ১ কোটি ১২ লাখসহ বিভিন্ন ক্ষতিতে ৪০০ কোটি টাকা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!