চট্টগ্রামে ঈদের ছুটির মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমিয়েছে দর্শনাথীরা। ফাঁকা নগরী ও নিরিবিলি পরিবেশে স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে বন্ধুবান্ধব ও পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নগরের বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে।
ঈদের দ্বিতীয় দিনে (৬ জুন) সকাল ১০টা থেকে নগরীর চিড়িয়াখানাসহ বেশ কয়েকটি বিনোদনকেন্দ্রে ছিল বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে দর্শনাথীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ৫০ টাকার টিকিট কেটে নানা ধরনের কোলাহলমুক্ত পরিবেশে জীবজন্তু দেখতে অনেকেই আসেন চিড়িয়াখানায়।
‘আজকের আবহাওয়াটা অনেকটা ভাল, গরমের চাপ কম। পরিবার নিয়ে এসেছি। অনেক জীবজন্তু সরাসরি দেখতে পেয়ে বাচ্চারা বেশ খুশি। এখাকার ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেকটা সুন্দর। তবে টিকিটের মূল্যটা পঞ্চাশ টাকা না করে ১০ টাকা করলে সবার জন্য ভাল হতো’ — চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বললেন সিইপিজেডের একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা জহিরুল হক।
সীতাকুণ্ড থেকে বাবার সঙ্গে এসেছিল রবিউল ইসলাম। ভাটিয়ারি ক্যাডেট স্কুলে পড়ছে সে। এই শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে উচ্ছ্বাস নিয়ে জানাল, ‘সাদা বাঘ দেখেছি, সিংহ মামা দেখেছি। আরও অনেক সুন্দর সুন্দর জীবজন্তু দেখে অনেক মজা পেয়েছি।’
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সপ্তাহে সাতদিন খোলা থাকে চিড়িয়াখানা। টিকিট প্রতিজন ৫০ টাকা। ‘আনলিমিটেড’ রাইডস সবার জন্য উন্মুক্ত। আকর্ষণীয় জীবজন্তুর মধ্যে রয়েছে সিংহ, সাদা বাঘ, জেব্রা ও হরিণ। এছাড়া আরও রয়েছে শতাধিক জীবজন্তু ও পশুপাখির সমারোহ।
জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা ডা. মো. শাহাদাৎ হোসাইন শুভ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বৃষ্টি অপেক্ষা করে গতকাল ছিল উপড়েপড়া ভিড়। আজকেও (বৃহস্পতিবার) একই অবস্থা। বেশিরভাগই পরিবার ও সন্তানদের সময় দিতে এখানে আসছেন। গতকাল ১১ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করেছি। আজ ১৪ হাজার পার হবে।’
টিকিটের মূল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আগের চেয়ে সার্বিক ব্যবস্থা নিরাপত্তা অনেকাংশ ভাল।’
দেখা যায়, নগরের ফয়সলেক, আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক ও কর্ণফুলী শিশু পার্কসহ বেশ কয়েকটি পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রেও দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ছে ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই। কেউবা পরিবার ও সন্তানদের আবদার মেটাতে আসছেন। আবার কেউ কেউ বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসছেন বিনোদন কেন্দ্রে।
ঈদের আনন্দ স্বজনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ছিল ভ্রমণপিয়াসুদের উপচেপড়া ভিড়। বিশুদ্ধ বাতাস ও সমুদ্রের জোয়ারের ঢেউয়ের মধ্যে পাড়ের স্পিডবোটে চড়ে তরুণ-তরুণীরা ঈদের আনন্দ করছেন। কেউ কেউ সাগরে নেমে গোসল করছেন। আবার কেউ সৈকতের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউবা আবার ওয়াকওয়েতে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে হাঁটাহাটি করে আনন্দময় মুহূর্তগুলো কাটাচ্ছেন। গতকালের মতো আজ শুক্রবারও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা ও নগর থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদচারণায় ভরপুর সমুদ্রসৈকত।
বাড়ি চট্টগ্রাম হলে পরিবার নিয়ে বরিশালে থাকেন ইয়াসিন নামে এক ব্যবসায়ী। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন ফয়সলেক রিসোর্টে। তিনি বলেন, ‘নাড়ির টানে পরিবার নিয়ে বছরে এক-দুইবার আসা হয়। ব্যবসার কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারি না। তাই তাদেরকে নিয়ে প্রতিবছরই এখানে বেড়াতে আসি। এখানকার নিরিবিলি পরিবেশে সন্তানদের একটু সময় দিতে পেরে ভাল লাগছে।’
ফয়সলেক রিসোর্টে সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মো. নওশাদ। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারা বছর চাকরির কারণে সন্তানদের সময় দিতে পারি না। তাদের আবদার মেটাতে ছুটির দিনগুলোতে সময় দিচ্ছি। এখানে এসেছে বেশ ভাল লাগছে।’
ফয়সলেক রিসোর্টের ডেপুটি ম্যানেজার (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দর্শনার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সব শ্রেণীর মানুষই এখন এখানে আসছেন। বরাবরের মতোই তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। টিকিটের মূল্য ৬০০ ও ৪০০ টাকা। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। রাইডস সুবিধা আনলিমিটেড।’ সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ সদস্যরা নিয়েজিত রয়েছে বলে জানান তিনি।