নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোর থেকেই নগরের সব আনাচে-কানাচে মানুষের স্রোত। আগের দিন রাত থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হতে বাস, ট্রাক ও মিনিট্রাকে করে নগরে প্রবেশ করে অসংখ্য মানুষ। সব পথ যেন মিশে গেছে ষোলশহর আলমগীর খানকা-এ-কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়্যবিয়ায়। কারণ সেখান থেকে বের হবে বহু আকাঙ্ক্ষিত ঐতিহ্যবাহী ‘জশ্নে জুলুস’ (শোভাযাত্রা)। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বন্দরনগরী যেন পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
দিনভর নবীর (দ.) শানে দরুদ, গজল, নাত পরিবেশন এবং জুলুসের (শোভাযাত্রা) মধ্য দিয়ে শুক্রবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপিত হলো বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা শরীফ সমূহে সারাদিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় আয়োজন ছিল ‘জশনে জুলুস’। ত্বরিকতভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
জুলুস শুরু হওয়ার আগে ফজর নামাজের পর থেকেই জামেয়া মাদ্রাসা ময়দান, বিবিরহাট ও মুরাদপুর এলাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। আজ শনিবার সকাল ৮টায় ষোলশহর আলমগীর খানকা-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে সবুজ চাঁদ তারকা খচিত পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, কালেমা লেখা পতাকায় সজ্জিত শোভাযাত্রা বের হয়। দেশের বৃহত্তম এ জুলুসে নেতৃত্ব দেন পাকিস্তান থেকে আগত আওলাদে রাসুল (দ.) রাহনুমায়ে শরিয়ত ও ত্বরিকত, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.)।
জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের হামদ, নাত, নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবর, নারায়ে রেসালাত-ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (দ.), স্লোগানে মুখরিত হয় বন্দরনগরী। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স’ান থেকে লাখ লাখ হুজুর কেবলার ভক্ত ও নবীর আশেকরা এ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারীদের হাতে শোভা পায় ঈদে মিলাদুন্নবীর স্লোগান
লেখা প্লেকার্ড, ফেস্টুন ও সবুজ চাঁদ তারকা খচিত পতাকা। অনেক তরুণ জোটবদ্ধ হয়ে একই ধরনের পোশাক পরে। হুজুর কেবলার ভক্তরা বিভিন্ন গাড়ি থেকে জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের শরবত, জুস, কমলা, চকলেট, গাজর, কলা, বন, পাউরুটি ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করে। শত শত সাইকেল, মোটরসাইকেল সারিবদ্ধভাবে মিছিলের অগ্রভাগে অংশ নেয়। জুলুসটি বিবিরহাট-মুরাদপুর-মির্জারপুল-কাতালগঞ্জ-চকবাজার- চন্দনপুরা দিদার মার্কেট-সিরাজদ্দৌল্লাহ রোড- আন্দরকিল্লা-মোমিন রোড-জামাল খান হয়ে গণি বেকারি প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চকবাজার, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর, বিবিরহাট হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে গিয়ে শেষ হয়।
পরে মাদ্রাসার মাঠে জোহরের নামাজের পর মোনাজাত পরিচালনা করেন আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ। বিকেলে সেখানে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মাহফিল রয়েছে।
আল্লামা হাফেজ সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (র) চট্টগ্রাম জশনে জুলুসের প্রবর্তনকারী। তার ছেলে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ ১৯৮৭ সাল থেকে জুলুসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।