ইসলাম ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায়: প্রধানমন্ত্রী

ইসলাম ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায়: প্রধানমন্ত্রী 1প্রতিদিন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায়। আর সেই দ্বীনি শিক্ষা যারা গ্রহণ করছেন তারা কেন অবহেলিত থাকবেন। তাদের কখনও অবহেলিত থাকতে দেওয়া যায় না। যারা এতিমদের শিক্ষা দেয় তাদের স্বীকৃতি দেবো না, এটা তো হতে পারে না। সেজন্যই আপনাদের প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা কওমি শিক্ষার দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দিয়েছি।

কওমির দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ায় রবিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল শোকরানা মাহফিল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মাননা দেয় কওমি মাদ্রাসাকে সর্বোচ্চ বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতার পর জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন গড়ে দিয়েছিলেন। তিনি এ দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জায়গা নির্ধারণ, ওআইসির সদস্যপদ, হাজিদের নিরাপদে পাঠাতে জাহাজ ক্রয় করেছিলেন। তারই কন্যা হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এদেশের মানুষ যাতে সুন্দরভাবে শিক্ষা পায়, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সে চেষ্টা আমি করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় মুসলমানদের শিক্ষাগ্রহণের একমাত্র উপায় ছিল এই কওমি মাদ্রাসা। যারা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন তারা মুসলমানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্যই কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য তাদের আমরা সবসময় সম্মান প্রদর্শন করি।

আমি সবসময় আল্লাহকে বিশ্বাস করি। একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া আর কারও কাছে আমি মাথানত করি না।

তিনি বলেন, আমাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে আর আমি যে বেঁচে যাই। আল্লাহ নিশ্চয় আমার দ্বারা এমন কোনও কাজ করাবেন, যে কারণে তিনি বারবার আমাকে রক্ষা করছেন। তিনি যতদিন জীবন দিয়েছেন, ততদিন আছি। শুধু এটুকু চাই, যেন মান-সম্মানের সঙ্গে যেতে পারি। এজন্য আমি দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আজকে কওমি মাদ্রাসার যে স্বীকৃতি সেটা শুধু স্বীকৃতি না, আমি মনে করি আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে এই মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করছে।

আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় কাজ আপনারা করছেন। যারা এতিম হয়ে যাচ্ছে, যারা একেবারে হতদরিদ্র, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাদের আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন। তাদেরকে খাদ্য দেন, তাদেরকে শিক্ষা দেন। আপনারা এতিমদের আশ্রয় দিচ্ছেন। এর থেকে বড় কাজ আর কী হতে পারে! কাজেই আপনাদের স্বীকৃতি দেবো না এটা তো হতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে শিক্ষা নীতিমালা গ্রহণ করেছি সেখানে ধর্মীয় শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। কারণ, আমি মনে করি একটা শিক্ষা তখনই পূর্ণাঙ্গ হয় যখন ধর্মীয় শিক্ষাও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়।

লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে, অথচ তাদের সেই ডিগ্রির যদি স্বীকৃতি না থাকে তাহলে তারা কোথায় যাবে, কী করে তারা চলবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ থেকে যখন এই স্বীকৃতিটার জন্য বলা হলো দাওরায়ে হাদিস যেন মাস্টার্স ডিগ্রির সমমর্যাদা পায়, আমরা সেটা করে দিলাম পার্লামেন্টে আইন পাস করে। কারণ, আইন পাস না করে দিলে সেটার আর কোনও বাধ্যবাধ্যকতা থাকে না।

এ সময় আল্লামা শফি ও আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার সবাই মিলে এমনভাবে কাজ করুন, যাতে যারা দাওরায়ে হাদিস থেকে মাস্টার্সের সমমানের ডিগ্রি পেলেন তারা যেন দেশের জন্য কাজ করতে পারেন। এই দেশকে যেন আমরা উন্নত করতে পারি। বাংলাদেশের একটা মানুষও যেন গরিব না থাকে। ক্ষুধায় যেন কষ্ট না পায়।

তিনি বলেন, ইমাম মোয়াজ্জিনদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি। এই কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে তারা যেকোনও সহযোগিতা নিতে পারে, মসজিদভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, এতে ৮০ হাজার আলেম-ওলামা এর মাধ্যমে বিশেষ ভাতা পেয়ে থাকেন।

তিনি বলেন, সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও মাদ্রাসা করে দিচ্ছি। সৌদি আরবের সহযোগিতায় এসব মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ হবে।

তিনি বলেন, প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বায়তুল মোকাররমে নারীদের বসার জায়গা করে দিয়েছিলাম, কিন্তু পরের সরকার এসে তা বন্ধ করে দেয়। তবে পরে আমরা আবার সরকারে এসে সেই কাজ করে দিয়েছি। এছাড়াও আরবি-ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে দ্বীনের শিক্ষা যাতে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হয় তার ব্যবস্থা আমরা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিদের সংসর্গ যাতে না লাগে সেজন্য কওমি ছাত্রদের উদ্দেশে পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমরা আল্লাহ ও নবী (স:)-এর শিক্ষা নিয়ে পথ চলবো।

প্রধানমন্ত্রী দুঃখ করে বলেন, আজ বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি। অথচ অস্ত্র বেচে যারা তারা লাভবান হয়, আর রক্ত যায় মুসলমানদের।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোনও জঙ্গিবাদের স্থান হবে না, সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না। মাদকের স্থান হবে না, দুর্নীতির স্থান হবে না। কেউ যদি বলে মুসলমানদের সন্ত্রাসী তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমি আপত্তি জানাই। কারণ, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কোনও দেশ নাই, ধর্ম নাই, তাদের কোনও সমাজ নাই। যারা সত্যিকারে ইসলামে বিশ্বাসী তারা কখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হতে পারে না।

তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা রকম অপপ্রচার হয়, এমন অপপ্রচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না। এসব অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য ইতোমধ্যে আমরা সাইবার ক্রাইম আইন (ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন) তৈরি করেছি। কেউ যদি এরকম মিথ্যাচার করে, সাথে সাথে তাদের এই আইন দ্বারা বিচার করা হবে। গ্রেফতার করা হবে। আমাদের ধর্ম ইসলাম ধর্ম। আমাদের নবী (সা.) সম্পর্কে কেউ কোনও কথা বললে ডিজিটাল আইন দ্বারা তার বিচার হবে।

বক্তব্যের শেষে বাংলাদেশের মানুষের জন্য যেন কাজ করতে পারেন সেজন্য সবার কাছে দোয়া চান তিনি।

আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া, বাংলাদেশ বোর্ডের প্রধান আল্লামা শাহ আহমদ শফি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!