পানি সংকট/ বন্ধের শংকায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ

৫ ইউনিটের মধ্যে বন্ধ ৪ ইউনিট

বিশালাকার টারবাইনের উপর দিয়ে জলধারা গড়িয়ে পড়ে যে শক্তি তৈরি হয় তা দিয়েই উৎপাদন হয় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ। এ উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে প্রতিনিয়ত বিশেষ ওই প্রকল্প বাঁধ দিয়ে পানি ছাড়তে থাকায় ইতোমধ্যে হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। খরা মৌসুম ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ‘পানি সংকটে’ পড়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি।

প্রকল্পটির অবস্থা এতোটাই নাজুক যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর মাত্র একটি ইউনিট কোনভাবে সচল রাখা হয়েছে। ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থলে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট। শীঘ্রই বৃষ্টিপাত না হলে সেটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএ আবদুজ্জাহের। ।

১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর প্রবাহে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মিষ্টি পানির কৃত্রিম ঝলাধার কাপ্তাই হ্রদ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ-যোগাযোগ, কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা গড়ে ওঠে কাপ্তাই হ্রদ প্রকল্পকে ঘিরে। কিন্তু দীর্ঘ ৫৯ বছরে একবারও কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পলি জমে আর নিক্ষেপ করা হাজার হাজার টন বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এতে নাব্যতা কমে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এই কৃত্রিম জলাশয়। আর প্রত্যেকবছর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হ্রদ ঘিরে তৈরি হয় নানা সংকট। তাই দ্রুত ড্রেজিং করে নাব্যতা না ফেরালে সম্ভাবনাময় হ্রদটি পরিত্যক্ত জলাশয়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

তবে আশার কথা শুনিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সম্প্রতি ওই কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। বেঠকে শেষে কমিটির সভাপতি দবিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে মৎস্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে কাপ্তাই লেক। জেলার একটি বড় অংশের জীবিকাও এর ওপর নির্বাহ করছে। তবে অবৈধ দখল, দূষণ, পলি ভরাটসহ নানা কারণে লেকটি তার স্বকীয়তা হারাতে বসেছে। এজন্য এটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

দখল, দুষণ আর মানবসৃষ্ট বর্জ্যরে সাথে পলি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় হ্রদে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। একারণে রাঙামাটির জেলা শহরের সঙ্গে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ৬ উপজেলার ৪ লাখেরও বেশি মানুষ।
লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহনে সংকট দেখা দিয়েছে। পণ্য পরিবহনে বেড়েছে কয়েকগুণ খরচ। পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
<span>পানি সংকট/</span> বন্ধের শংকায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ 1
রাঙামাটি নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় মধ্য এপ্রিল থেকে ৬টি উপজেলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক নৌযান শ্রমিক। কাপ্তাই হ্রদ রক্ষা ও নৌ-যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত হ্রদ ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএ আবদুজ্জাহের বলেন, রুলকার্ভ অনুযায়ী বর্তমানে হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২২ এমএসএল (মীন সী লেভেল)। কিন্তু সেখানে পানি রয়েছে ৭২ দশমিক ৪৫ এমএসএল। পানির উচ্চতা ৬৮ এমএসএলে নেমে গেলে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব ইউনিটই বন্ধ হয়ে যাবে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থার উন্নতি হবে না বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদের চলাচলকারী নৌযানের পারমিট আমরা ইস্যু করি। কিন্তু হ্রদটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ড্রেজিংয়ের বিষয়ে কিছুই বলতে পারছি না। সরকার অনুমতি দিলে ড্রেজিংয়ের চিন্তা করবো।’

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, নাব্যতা সংকটে দিন দিন কাপ্তাই হ্রদ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। হ্রদের ড্রেজিং না হওয়া পর্যন্ত সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। কাপ্তাই হ্রদের ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার জন্য আমরা বার বার উচ্চ পর্যায়ে চিঠি দিয়েছি। ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটি এর একটি প্রতিনিধি দল সার্ভে করে গেছেন। তার পরও কেন এই কাজটি হচ্ছে না তা আমি বুঝে উঠতে পারছি না।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!