‘দাপট না থাকলে আফছারুল আমিনকে তিনবার সাংসদ বানাতে পারতাম না’

বললেন পাহাড়তলীর কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ

চট্টগ্রাম-১০ আসনের (ডবলমুরিং) সংসদ সদস্য আফছারুল আমিনের আনা অভিযোগ হেসেই উড়িয়ে দিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও খুলশী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসেন হিরণ। হঠাৎ করে কেন আফছারুল আমিন তার বিরুদ্ধে সরব হলেন তারও কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। তবে হিরণ মনে করেন, সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আফছারুল আমিনের পছন্দের প্রার্থী থাকতে পারে—এ কারণে হয়তো আফছারুল আমিন তার বিরুদ্ধে লেগেছেন। তবে কোন লিখিত অভিযোগ পেলে তার উত্তর দেবেন বলে জানান হিরণ।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ সময় ধরে অনুসারী হিসেবে পাশে রাখার পর হঠাৎ হিরনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেন আফছারুল আমিন। বুধবার (১০ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী কমিটির সভায় হিরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন আফছারুল। তার অভিযোগ, কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণের দাপটে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিকভাবে দলীয় কর্মকান্ড চালাতে পারছেন না তারা। তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও হিরণ বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য।

বুধবার (১৭ জুলাই) সম্পাদকমন্ডলীর এবং শুক্রবার (১৯ জুলাই) সভাপতিমন্ডলীর সভা আছে। এ দুটি সভায় আফছারুল আমিনের অভিযোগের ব্যাপারে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

আফছারুল আমিনের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য মোহাম্মদ হোসেন হিরণ বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আর দাপটের কথা বলছেন উনি? দাপট তো অবশ্যই আছে। তবে তা সন্ত্রাসী দাপট নয়। ভালোবাসার দাপট। ভালোবাসার দাপট আছে বলেই চারবার কাউন্সিল নির্বাচিত হয়েছি। দাপট না থাকলে আফছারুল আমিনকে তিন বার সংসদ সদস্য বানাতে পারতাম না। এই এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমার জন্য জীবন দিতেও রাজি তারা। আমার ওয়ার্ড চাঁদাবাজিমুক্ত ওয়ার্ড। কোন ডেভেলপার আমার ওয়ার্ডে চাঁদাবাজি হয় বলতে পারবে না।’

মোহাম্মদ হোসেন হিরণের মতে, সাংগঠনিক কাজে বাধা কোন অভিযোগ হতে পারে না। তার পাল্টা প্রশ্ন—‘এই অঞ্চলে যে সংগঠনের জন্ম আমি দিলাম, সেই সংগঠনের কাজে আমি বাধা দেবো? উনার (আফছারুল) আচার-আচরণে বুঝা যাচ্ছে আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে। কিন্তু কেন ক্ষোভ আমি জানি না। আমার এলাকা এক সময় ‘মিনি পাকিস্তান’ ছিল। সেখানে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছি।’

তবে মোহাম্মদ হোসেন হিরণ বিশ্বাস করেন, আফছারুল আমিনের সাথে তার সম্পর্ক আবার ভালো হবে। তিনি বলেন, ‘উনাকে আমি প্রচন্ড শ্রদ্ধা করি। এখনো করি। ভবিষ্যতেও করবো। উনার জন্য কি না করেছি? উনি আমার সাংসদ। আমার লোকজন উনাকে ভোট দিয়ে সাংসদ বানিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি না উনি আমার বিরুদ্ধে বলতে পারেন। এমন কোন কাজ আমি করিনি। উনি আমার শ্রদ্ধার পাত্র। উনার তিনটি নির্বাচনী বৈতরণী পার করেছি। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর উনি আমার দ্বিতীয় সম্মানিত ব্যক্তি।’

এক প্রশ্নের জবাবে হিরণ বলেন, ‘সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনে উনার (আফছারুল আমিনের) প্রার্থী থাকতে পারে। তবে পছন্দের প্রার্থী থাকলেই আমার বিপক্ষে যাবেন, এটা বিশ্বাস করি না।’

২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-হালিশহর-ডবলমুরিং) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন আফছারুল আমিন। ২০১৪ সালে এবং ২০১৯ সালেও তিনি একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মোহাম্মদ হোসেন হিরণ সাংসদ আফছারুল আমিনের সংসদীয় আসনের অধীন চট্টগ্রাম নগরীর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি খুলশী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করছেন। চারবারের কাউন্সিলর হিরণ প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। আফছারুল আমিন মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন হিরণ। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর আফছারুলের সঙ্গে হিরণের দূরত্ব তৈরি হয়।

দূরত্ব তৈরি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে হিরণ বলেন, ‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই উনার সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে। কিন্তু সম্পর্ক কেন খারাপ হচ্ছে, তা আমি জানি না। উনিই ভালো বলতে পারবেন।’

জানা যায়, মোহাম্মদ হোসেন হিরণ ছাত্রজীবনেই ১৯৭৩-৭৪ সালে ছাত্রলীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালের দিকে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং ওই বছরই খুলশী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পান হিরণ।

উল্লেখ্য, চসিকের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে মোট আয়তন ৫ বর্গমাইল। জনসংখ্যা তিন লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ৭০ ভাগ বস্তিবাসী ও হত দরিদ্র। ৫০-৬০ শতাংশ উর্দুভাষী। মোট ভোটার ৬০ হাজার। ২০০০ সালে প্রথম এবং মোট চারবার এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েছেন মোহাম্মদ হোসেন হিরণ।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!