জোটে ভাঙন/ ২০ দল ছাড়ছে এলডিপি ও কল্যাণ পার্টি!

অলি ও ইবরাহীমের অস্বীকার

শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ভাঙন শুরু হয়েছে। এর জের ধরে সোমবার (৬ মে) জোট থেকে বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। এর একদিন পর মঙ্গলবার (৭ মে) জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোটের আরেক শরিক দল লেবার পার্টি। হঠাৎ করেই বিএনপির জোটের এমন অস্থিতায় রাজনৈতিক মহলে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জোটের অন্যতম শরিক দল এলডিপি ও কল্যাণ পার্টি কি ২০ দল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে? দুটি দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আবার চট্টগ্রামভিত্তিক।

২০ দলীয় জোট থেকে বের হওয়ার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান (এলডিপি) ড. কর্ণেল (অব) অলি আহমেদ। জোট ছাড়ার খবরকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি না গেলেও এলডিপি আন্দোলনে যাবে বলে জানিয়েছেন অলি আহমেদ। অন্যদিকে জোটগতভাবেই আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলছেন সৈয়দ ইবরাহীম।

জোট ছাড়ার আগে বিজেপির আন্দলিভ রহমান পার্থ জোট ছাড়ার যুক্তি তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ২০ দলীয় জোট স্থবির হয়ে যায় এবং রাজনীতি ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে পড়ে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বিএনপি বাদে ২০ দলের অন্য কারও সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে শুধুমাত্র সংহতি ও সহমত পোষণের জন্যই ২০ দলের সভা ডাকা হতো।

পার্থের অভিযোগ, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সংসদে যাবে না বলেছিল। কিন্তু, তারা শেষ মুহূর্তে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেয়। এতে আমরা অবাক হয়েছি। শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি ৩০ ডিসেম্বরের ‘প্রহসনের’ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। আর এ কারণগুলো দেখিয়েই ২০ দলের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানালেন পার্থ।

২০ দলীয় জোট ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান (এলডিপি) ড. কর্ণেল (অব) অলি আহমেদ বলেন, ‘এটা শয়তানরা মিথ্যা ছড়াচ্ছে। আমি আবার বলছি শয়তানরাই এসব ছড়াচ্ছে।’

অলি আহমেদ আরো বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়ে কাজটি ভালো করেনি। তারা একাজের মধ্য দিয়ে একটি অবৈধ সরকারকে বৈধতা দিল। ভোট চুরির নির্বাচনকে আমরা কখনো বৈধতা দিতে পারিনা। হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নির্যাতিত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাই সেই অবৈধ সরকারকে আমরা বৈধতা দিতে পারিনা।’

ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের নানা অভিযোগ রয়েছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অলি আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির কাছে শরিক দলের মূল্য কখনো ছিল না, এখনও নেই। আর ঐক্যফ্রন্ট হওয়ার পর সেটা আরো বেড়েছে।’

এলডিপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন দুটি পথ খোলা। বেগম জিয়ার মুক্তি ও অবৈধ সরকারের পতনে আমরা আন্দোলন করব। সেই আন্দোলনে বিএনপি বা ২০ দলীয় জোট না থাকলেও এলডিপি এই দুই ইস্যুতে আন্দোলনে যাবে।’

অন্যদিকে ২০ দলীয় জোট ছাড়ছে শরিক দল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি- রাজনীতির মাঠে এরকম খবর চাউর হলেও দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বলেন, ‘এই কথা শতভাগ মিথ্যা।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী অঙ্গনের কোটি কোটি নির্যাতিত নেতাকর্মীর অনুভূতির সঙ্গে আমি এবং আমার দল একাত্ম। অতএব কোনো অবস্থাতেই ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তবে ২০ দলীয় জোটে যে সকল সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, নিজদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা ২০ দলীয় জোট এগিয়ে যাব।’

ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নিজ দলের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বলেন, ‘২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের মাঝখানে বিএনপি মনোযোগের যে ইমব্যালেন্স (ভারসাম্যহীনতা) তৈরি করেছে তা দূর করতে হবে। আমরা জোটগতভাবে আছি। জোটগতভাবেই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন করব।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!