টাইগারদের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প কিছু নেই আজ

‘প্রস্তুতি ম্যাচের ফল ধর্তব্য নয়।’ কেন নয়? কারণ, নামেই প্রস্তুতি ম্যাচ মানে যে ম্যাচের পরতে পরতে ‘প্রস্তুতি’ শব্দটি জড়িত। সে কারণেই আইরিশ ‘এ’ দলের সাথে টাইগারদের রোববারের প্রস্তুতি ম্যাচের ফল পাচ্ছে তুলনামূলক কম গুরুত্ব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন জাতি আসরে মাঠে নামার আগে গত রোববার গা গরমের ম্যাচে তামিম, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, মিঠুন, মিরাজ, রুবেল ও তাসকিনদের ৮৮ রানের হারকেও তাই খুব বড় করে দেখা হচ্ছে না।

বলা হচ্ছে, ওটা ছিল প্রচন্ড গরম থেকে আয়ারল্যান্ডের হিম শীতল আবহাওয়া তথা ভিন্ন কন্ডিশন এবং উইকেটের সাথে মানিয়ে নেয়ার ম্যাচ। পাশাপাশি দুই তিনজনকে মূল আসরের আগে বাজিয়ে দেখাও ছিল উদ্দেশ্য। এ কারণেই নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, তরুণ পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দীন আর মোস্তাফিজ ও সৌম্য সরকারকে বাইরে রেখে একাদশ সাজানো হয়েছিল।

তা ঠিক আছে। তাই বলে কি জয়ের তাড়া ছিল না? মূল আসরে নামার আগে গা গরম বা প্রস্তুতি ম্যাচে জয়ের কি তাহলে কোনই গুরুত্ব নেই? তবে কি প্রস্তুতি ম্যাচে কোন দল নিজেদের প্রস্তুতি, একাদশ চূড়ান্ত করা, কয়েকটি পজিসনের ক্রিকেটার যাচাই বাছাই আর কন্ডিশনের দিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে গিয়ে জয়ের ইচ্ছে বা আকাঙ্খা ত্যাগ করে?

সেবার মে-জুন মাসে এই যুক্তরাজ্যে বসেছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তার আগে দিয়ে এই আয়ারল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের সাথে এক তিন জাতি আসরে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের ১০ মে বেলফাস্টে প্রস্তুতি ম্যাচে আইরিশ ‘এ’ দলকে ১৯৯ রানের বিরাট ব্যবধানে হারিয়েছিল মাশরাফির দল।

দারুণ সেঞ্চুরি করেছিলেন সাব্বির রহমান রুমন (৮৬ বলে ১৬ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ১০০)। ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছিল ৮৬ রানের (৭৪ বলে ১৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কা) আরও একটি ঝড়ো ইনিংস। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ (৩১ বলে ৪৯), মুশফিক (৪১), সাকিব (৪৪), সৌম্য (২৫ বলে ১৭) ও মোসাদ্দেকও (৩১) ব্যাট হাতে অবদান রেখেছিলেন।

আর তাই তো ৩৯৪ রানের হিমালয় সমান স্কোর গড়ে আইরিশদের ১৯৫ রানে বেঁধে ফেলেছিল টাইগাররা। এবার সেখানে আয়ারল্যান্ড ওলভসের সঙ্গে বিপরীত অবস্থা। কাজেই এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, বাংলাদেশ দল খুব স্বস্তিতে আছে। প্র্যাকটিস ম্যাচে আইরিশ ‘এ’ দলের কাছে ৮৮ রানের হার অবশ্যই কাঁটার মত বিঁধছে।

পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস আর সামর্থ্যের জায়গাতেও কিছু ঘাটতি অবশ্যই এসেছে। যাতে করে শতভাগ ফুরফুরে ও চাঙা ভাবটাও নিশ্চয়ই করে কমেছে। মোদ্দা কথা, তিন জাতি আসরে মাঠে নামার আগে একটা নেতিবাচক বাতাবরণ তৈরী হয়েছে। কাল (মঙ্গলবার) সেই নেতিবাচক পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামবে মাশরাফির দল।

বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশের বিপরীত অবস্থা ক্যারিবীয়দের। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে বাইরে থাকা ছয় ক্রিকেটার নিয়ে সাজানো দল থাকার পরও প্রথম দিন স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডকে লন্ডভন্ড করে উড়ন্ত সূচনা করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

প্রথম উইকেটে দুই ওপেনার শাই হোপ আর জন ক্যাম্পবেল উদ্বোধনী জুটিতে ৩৬৫ রানের নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দিয়েছেন। শুধু প্রথম উইকেটে ৩৬৫ রানের নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়াই নয়, ৩৮১ রানের হিমালয় সমান স্কোর গড়ে স্বাগতিক আইরিশদের ১৯৬ রানে বেঁধে ফেলার কাজটিও দক্ষতার সাথে করেছেন ক্যারিবীয় বোলাররা।

খুব স্বাভাবিকভাবে কাল বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিবীয়রা চাঙা থাকবে। আর বাংলাদেশ থাকবে নিজেদের মেধা, দক্ষতা ও সামর্থ্য প্রমাণে অস্ফুট চাপে। এখন সেই চাপ সামলে মাশরাফির দল কী করে? আসলে সেটাই দেখার।

টাইগারদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন কারণ নেই। কারণ তামিম, মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহরা আগেও বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নজরকাড়া সাফল্য দেখিয়েছেন। মাশরাফি, মোস্তাফিজ আর সাকিবের গড়া বোলিং লাইন আপেরও আছে ম্যাচ জেতানো বোলিং সামর্থ্য।

শেষ কথা হলো ক্যারিবীয়দের হারানোর সামর্থ্য আছে টাইগারদের। তবে তার আগে প্রস্তুতি ম্যাচে হারের মানসিক ধাক্কা সামলে এবং ব্যাটিং ও বোলিং ত্রুটি, দুর্বলতা ও ঘাটতি কাটিয়ে উঠতেই হবে। তা কি হবে? অনুজ্জ্বল পারফরমেন্স কাটিয়ে আবার আলোয় ফিরবে মাশরাফির দল? উত্তর পাওয়া যাবে আজ মঙ্গলবার।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!