চায়ের চুমুকে আত্মবিশ্বাস! এক সেশনে ব্রিটিশ বধ : টেস্ট ইতিহাসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ও ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের

রাজীব সেন প্রিন্স :

১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে স্মরণীয় জয়ে আজ। ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক বাংলাদেশ সফরকারি দলকে ১০৮ রানে পরাজিত করেছে। টেস্ট ইতিহাসে এটা তাদের অষ্টম জয়। এ সময়ের অন্যতম সেরা দলকে হারানো বাংলাদেশকে টেস্ট ক্রিকেটেও এনে দেবে নতুন আত্মবিশ্বাস। এর আগে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে এই প্রথম কোনো শক্তিশালী দলকে টেস্টে হারাল বাংলাদেশ।

254247-3_41827

সফরকারী ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা দেখে যেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অনেকটাই অসহায় মনে হয়েলিল সেখানে চায়ের চুমুকে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল স্বাগতিক বাংলাদেশ। চা বিরতির আগ পর্যন্ত যেখানে দলটি মরিয়া হয়ে একের পর এক বোলার পাল্টাচ্ছে সে দলটি চা বিরতির পর যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। চা বিরতির পর এক সেশনেই ১০টি উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ড টিমকে কুপোকাত করে ছিনিয়ে নিল ঐতিহাসিক জয়।

 

শুরুটা করেছিলেন মেহেদী মিরাজ। শেষটা টেনে দিলেন সাকিব আল হাসান। এই দুইয়ের ঘূর্ণিতে পড়েই আর দাঁড়াতে পারল না ইংল্যান্ড। এর আগে বিনা উইকেটে ১০০ রান তুলে ফেলা ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত আর ৬৪ রান যোগ করতেই হয়ে যায় অল আউট। ৭৭ রানে ৬ উইকেট মিরাজের। ৪৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।
চা বিরতির পর বাংলাদেশে দর্শকরা খেলার মাঠে বসেই উপভোগ করল উইকেট বৃষ্টি। জয়ী রানের ব্যবধানটাও আরো বাড়ত যদি দুই ইংলিশ ওপেনার অ্যালিস্টার কুক ৫৯ ও বেন ডাকেট ৫৬ না করত। এ দুই ওপেনার জুটি ছাড়া ২৫ রান করে দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন কেবল বেন স্টোকস। বাকি আট ব্যাটসম্যান মিলে যোগ করেছেন মাত্র ১৮ রান!

 

এর আগে তৃতীয়দিন লাঞ্চের কিছু পরেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ২৬৮ রানে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে  লাঞ্চ শুরু করা বাংলাদেশ ২৮ রান যোগ করে অল আউট হয়ে যায় ২৯৬ রানে। বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৩ রানের লক্ষ্যে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ১৬৪ রানে। মাত্র ৬৪ রানে ইংল্যান্ডের শেষ ৯ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ১০৮ রানে।

দ্বিতীয় দিন ১৫২ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দুর্দান্তভাবে তৃতীয় দিন শুরু করে। বাংলাদেশের পক্ষে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তৃতীয় দিন রানের খাতা খোলেন ইমরুল কায়েস। পরবর্তীতে ইমরুল ও সাকিব জুটি দলের খাতায় যোগ করেন ৪৮ রান। দলীয় ২০০ রানে ইমরুল কায়েস বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৭৮ (১২০) রানে। এরপর সাকিব ও মুশফিক জুটি যোগ করেন আরো ৩৮ রান। ব্যক্তিগত ৪১ রানে আদিল রশিদের বলে বোল্ড আউট হন সাকিব। এরপরের ওভারেই মুশফিক আউট হলে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে অনেকটা টি-২০ ফরম্যাটে ব্যাট করে বাংলাদেশকে দ্রুত ৩০ রান এনে দেন সাব্বির রহমান ও শুভাগত হোম জুটি।
সাব্বির লাঞ্চের আগে ১৫ (১৭) রানে ফিরে গেলে শুভাগত হোম ক্রিজে থেকে দ্রুত শট খেলে রান তোলার চেষ্টা করেন। ফল হিসেবে ২৮ বলে ২৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। কিন্তু অপরপ্রান্তে যাওয়া আসার মিছিলে আদিল রশিদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে কামরুল ইসলামের বিদায়ে ২৯৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। সিরিজে এটাই স্বাগতিকদের সর্বোচ্চ রান। ৯ বলে ৭ রান করেন রাব্বি। স্বাগতিকরা পায় ২৭২ রানের লিড। তবে এশিয়ায় এর আগে এত বড় রান তাড়া করে কখনো জিতেনি সফরকারীরা। এশিয়ায় এর আগে ২০১০ সালে মিরপুরেই ২০৯ রান তাড়া করে টেস্ট জিতেছিল ইংলিশরা।

 

এক ওভারে সাকিবের ৩ উইকেট

দারুণ এক ওভারে বেন স্টোকস, আদিল রশিদ ও জাফর আনসারিকে আউট করে বাংলাদেশকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান আনসারির আউটের ক্যাচটি দুর্দান্ত। কয়েকবার চেষ্টায় হাতে নিতে পারেননি মুমিনুল হক, পাশেই থাকা আরেক ফিল্ডার ইমরুল কায়েস বল তালুবন্দি করেন। ১৬১ রানে পড়ে ইংল্যান্ডের নবম উইকেট।

দারুণ এক ঘণ্টা

তৃতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় ৩৭ রানের মধ্যে ইংল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। চার বাঁহাতি ব্যাটসম্যান অ্যালেস্টার কুক, বেন ডাকেট, গ্যারি ব্যালান্স ও মইন আলির উইকেট নেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ডানহাতি ব্যাটসম্যান জো রুটকে বিদায় করেন বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান। চা বিরতিতে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৩৭ রান। জয়ের জন্য তখন আরও ১৩৬ রান চাই তাদের।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!