অপেক্ষায় চট্টগ্রামের ইয়াসির আলী রাব্বি, সেই সাথে চট্টগ্রামও

বিশ্বকাপের স্ট্যান্ডবাই তালিকায় আছেন তিনি

তামিম ইকবালের পর জাতীয় ক্রিকেট দলে চট্টগ্রামের ক্রিকেটারদের খরার যুগে এক পশলা বৃষ্টি ভাবা হচ্ছে চট্টগ্রামের আরেক তরুণ তুর্কী ইয়াসির আলী রাব্বীকে। যদিও চট্টগ্রামের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র নাঈম হাসান জাতীয় দলে নিজের আলো বিকিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি তো মূলত বোলার। ব্যাটসম্যানের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চট্টগ্রামের মাটি বেশ উর্বর। জাতীয় দলে ব্যাটসম্যানদের এই পথ দেখানো কিন্তু আজকের কথা নয়। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যখন মাত্রই শিশু তখন থেকে জাতীয় দলে চট্টগ্রামের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন এক ঝাঁক দেশ সেরা ব্যাটসম্যান। যাদের মধ্যে শহীদুল ইসলাম, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নুরুল আবেদীন নোবেল, আকরাম খান, নাফিজ ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিম উদ্দিনসহ সবাই নিজেদের ব্যাটের ঝলক দেখান জাতীয় দলে। এবার ইয়াসির আলী রাব্বির পালা।

বিশ্বকাপ দল ঘোষণার আগে ইয়াসির রাব্বিকে নিয়ে গুঞ্জন উঠে। তবে শেষ পর্যন্ত জায়গা হয়নি তরুণ এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। অবশ্য রাব্বিকে অপেক্ষমাণ তালিকাতে রাখা হয়েছে। যদি কেউ ইনজুরিতে পড়েন, তাহলে হয়তো তার জন্য ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের দরজা খুলতে পারে। রাব্বিও সেই সুযোগের অপেক্ষায়। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘স্ট্যান্ডবাই হিসেবে আছি, যেকোনো সময় ডাক আসতে পারে। আমাদের জীবনটাই অনিশ্চয়তায় ভরা, যদি কেউ ইনজুরিতে পড়ে তাহলে আমাকে যেতে হতে পারে। সেজন্য অবশ্যই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবো। যতদিন বিশ্বকাপ চলবে, ততদিন আমার সম্ভাবনা থাকবে। যেকোনো সময় যেতে হতে পারে।’

অপেক্ষায় চট্টগ্রামের ইয়াসির আলী রাব্বি, সেই সাথে চট্টগ্রামও 1
জাতীয় দলের অনুশীলনে তামিমের ঠিক পেছনে ইয়াসির আলী রাব্বি। চট্টগ্রামবাসীরও চাওয়া তামিমের দেখানো পথেই হাঁটুক রাব্বি।

বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে থাকার সুযোগ নেই রাব্বির। আয়ারল্যান্ড সফরে ছিলেন তিনি। একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ হয়নি। যে কারণে নিজেকে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে সেভাবেই প্রস্তুত করছেন তিনি। বর্তমানে এইচপির এলিট টিমের হয়ে অনুশীলন করে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন রাব্বি। প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রস্তুত, এইচপিতে নিজেকে আরও ঝালিয়ে নিতে পারছি। এখন যদি ক্যাম্পটা না থাকতো তাহলে হয়তো বাসায় থাকতাম, চিটাগংয়ে থাকতাম, হয়তো অনুশীলন করতাম কিন্তু ঠিকভাবে অনুশীলনটা হতো না। এখানে যেভাবে অনুশীলন করতে পারবো আমার প্রস্তুতিটা ওইরকমই ভালো হবে। কারণ, আমি এখানে যেভাবে অনুশীলন করতে চাইব আমাকে সেভাবে অনুশীলন করানো হবে। সেটা যে কন্ডিশনেই হোক। আমার মনে হয়, এইচপির সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য ভালো হবে। যদি জাতীয় দলের জন্য ডাক দেয় তাহলে আমি সবদিক থেকে প্রস্তুত থাকতে পারব।’

ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! জাতীয় দলের সঙ্গে ছিলাম। আমার দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম ভাগাভাগি করা, ওরা কীভাবে খেলে, কীভাবে ওরা মাইন্ড সেটআপ করে এই জিনিসগুলো আমার ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে।’

অপেক্ষায় চট্টগ্রামের ইয়াসির আলী রাব্বি, সেই সাথে চট্টগ্রামও 2
বছরের শুরুতে বিপিএলে চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে খেলতে নেমে ব্যাটের ঝলকানি দিয়ে নিজেকে সবার নজরে আনেন রাব্বি।

এ বছর বিপিএলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সবার নজর কেড়েছেন চট্টগ্রামের তরুণ রাব্বি। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে ১১ ম্যাচে ১২৪.২৯ স্ট্রাইকরেটে ৩০৭ রান করেছেন তিনি। ৩ অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন বিপিএলে, যেখানে ৭৮ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছিলেন রাব্বি। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে ১৩ ম্যাচে ১১ ইনিংসে ৭৩.০৫ গড়ে ৪৪১ রান সংগ্রহ করেন রাব্বি। একটি সেঞ্চুরি ও দুটি ফিফটি হাঁকান এই ডানহাতি। ১০৬ রানের ইনিংস ছিল তার সর্বোচ্চ। খেলেছেন চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগও। সেখানেও ধারাবাহিকভাবে রান করেছেন রাব্বি।

সবচেয়ে খুশীর খবর জাতীয় দলের প্রধান কোচ স্টিভ রোডসও বিপিএলে ইয়াসির আলীর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। ঢাকা লিগেও আবাহনীর বিপক্ষে হার না মানা ১০৬ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। যেখানে ৯৪ প্লাস স্ট্রাইক রেট রেখে ইনিংসটি গড়েছেন। প্রায় প্রতিটি ম্যাচে ৯০ প্লাস স্ট্রাইক রেট ধরে রেখেছেন। কোনো কোনো ম্যাচে দেড়শ’র ওপরে স্ট্রাইক রেটও ছিল। ইয়াসিরের ব্যাটিংয়ের এই দিকটি বেশি ভালো লেগেছে জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেলের। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর দৃষ্টিতে, ‘ও খুব সাহসী ব্যাটসম্যান। বল নষ্ট করে কম। অনেক মেরে খেলে। বিপিএলের পর ঢাকা লীগে যেভাবে খেলছে, তাতে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মতো একজন ব্যাটসম্যান সে।’

রাব্বির জাতীয় দলে অর্ন্তভুক্তি ও স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সাথে কথা হয় রাব্বির চাচা সাবেক ক্রিকেটার কায়সার আলী চৌধুরীর সাথে। তিনি জানান, ‘আমার বড় ভাই (রাব্বির বাবা) শওকত আলী চৌধুরী চেয়েছিলেন পরিবারে একটি ছেলে যেন অন্তত ক্রিকেটার হয়। তাই তিনি রাব্বিকে নিয়ে বাজি খেলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমার বড় ভাইসহ পরিবারের সবাই রাব্বির জাতীয় দলে অর্ন্তভু্ক্তি নিয়ে খুব খুশী।’ কায়সার আলী আরও যোগ করেন, ‘আমরা চাই, ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই জাতীয় দলে আসন পাকাপোক্ত হোক রাব্বির। ওর গায়ে যেন টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে কিংবা টেস্ট স্পেশালিস্ট তকমা লেগে না যায়।’ আয়ারল্যান্ড ট্যুরে মূল একাদশে রাব্বি সুযোগ না পাওয়ায় হতাশ কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘রাব্বির প্রথম ট্যুর হিসেবে আমরাও খুব বেশি আশা করিনি। জানতাম জাতীয় দলের আবহের সাথে পরিচিতির জন্যই মূলত ওকে নেয়া। তাছাড়া তাসকিন, ফরহাদ রেজাও কিন্তু কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি (দুজনই অবশ্য অনুশীলন ম্যাচ খেলেছেন)। আর টিম ম্যানেজম্যান্ট যেটি ভালো মনে করেছেন সেটি করেছেন, তাতে কোন দুঃখ নেই।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!