রাঙ্গামাটিতে কর্মশালায় মত প্রকাশ : স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ব্যবস্থাপনা করার আহবান

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি :

জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বন। বন মানুষের প্রয়োজনে, জীবিকার জন্যে। বন যদি মানুষের সংকট সৃষ্টি করে এবং সম্প্রীতি বিনষ্ট করে তাহলে সেই বন কেন মানুষ চাইবে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে বনায়ন করতে হলে সেখানকার মানুষের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

rangamati-pic_cht-forest-workshop_2

স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ব্যবস্থাপনা করতে হবে। বিদ্যমান আইনে যেসব জটিলতা রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে। সোমবার রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মশালায় এসব মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে।
ইউএন-রেড বাংলাদেশ জাতীয় কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমে স্থানীয়দের পরামর্শের জন্য ‘বন উজাড় ও বনের অবক্ষয়ের কারণ অনুসন্ধান বিষয়ক’ এই কর্মশালাটির আয়োজন করে ইউএন-রেড প্রোগ্রাম এবং বন ও পরিবেশ অধিদফতর। এর সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ।
রাঙ্গামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের হল রুমে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রধান অতিথি হিসেবে দিনব্যাপী কর্মশালাটির সঞ্চালনা করেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুচ আলী। পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগের রাঙ্গামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. শামসুল আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটির চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা ও জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বন সংরক্ষন কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, আইনজীবী সুস্মিতা খীসা, হেডম্যান থোয়াই অং মারমা, শান্তি বিজয় চাকমা, প্রফেসর মংসানু চৌধুরীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রথাগত নেতৃত্ব, বন বিভাগের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের নেতারা কর্মশালায় মতামত ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় বিশেষ গবেষণা প্রতিবেদন ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ইউ-এন রেড প্রোগ্রামের কর্মকর্তা সায়েদ মাহমুদ রিয়াদ, মো. জসিম উদ্দিন ও ড. মো. মাহফুজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুচ আলী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বন ছিল আজ তা নেই। দিন দিন উজাড় ও অবক্ষয়ের দিকে চলে যাচ্ছে এখানকার বনভূমি। কাচালং, মাইনী, বরকল, সুবলং, রাইংখিয়ং, সাংগুসহ পার্বত্য অঞ্চলের সরকারি সংরক্ষিত বনগুলো নানাভাবে ধংস হয়ে গেছে।

 

বন ধংস হওয়ায় পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে ইতিমধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের ছড়া ও নদীগুলোতে পানি কমে শুকিয়ে যাচ্ছে। এসব বন উজাড় ও অবক্ষয়ের জন্য যারা দায়ী তাদেরকে চিহ্নিত করতে অনুসন্ধানী তদন্ত করা হবে।
তিনি বলেন, জীববৈচিত্র রক্ষায় এবং মানুষের জীবিকার প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামে বন সংরক্ষণ, বনায়ন ও ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ত ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু বন ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। এজন্য তাদের সঙ্গে বন বিভাগকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বন, বনায়ন, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিদ্যামান বন আইনে অনেক জটিলতা রয়েছে। সংশোধন করে সেসব জটিলতা দূর করতে হবে। এসব কার্যক্রমে দরকার এখানকার হেডম্যান ও কারবারিদের পরামর্শ ও সহযোগিতা।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বাধিক বন ধংসের কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। সেই সুবাদে তৎকালীন সময়ে এখানকার বন ধংস হয়েছে। তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে স্থানীয় পাহাড়ি জনগণ বন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে জুমচাষ শুরু করে। পাশাপাশি বাইরের অনেক লোককে বন এলাকায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। ফলে এখানকার বন উজাড় হয়ে যায়। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে বনায়নের ওপর জোর দেন।

 

রিপোর্ট : চৌধুরী হারুনুর রশীদ,রাঙ্গামাটি।

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!