রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. রাসেল চৌধুরীর অত্যাচারে তটস্থ এলাকার সাধারণ মানুষ। তার হয়রানি ও অত্যাচারের শিকার সাধারণ জনগণ ছাড়াও ইউপি সদস্য ও দলীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এলাকাবাসীসহ ইউপির একাধিক সদস্য এসব অভিযোগ করেছেন। তবে এসবই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, রাসেল চৌধুরী চেয়ারম্যান হয়েছেন পেশীশক্তি ও দলীয় প্রভাবে। চেয়ারম্যান ছাড়াও একাধারে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আমতলীবাজার চৌধুরী। আগের বাজার চৌধুরী মো. মোবারক হোসেন চৌধুরীর কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন তিনি। রাসেল আহমেদ থেকে হয়েছেন রাসেল চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে অত্যাচার, হয়রানি ছাড়াও ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এক সময়ে বনকর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেদকে জানান,বখাটে মামলাবাজ বনবিভাগের ভুমি দখলকারী একবছরে বনে যায় রাসেল চৌধুরী ।
স্থানীয় ইউপির ওয়ার্ড সদস্য আবদুল মালেক, বাবর আলী, শহিদুল্ল্যাহ, সুবহান, মো. নূরতহিদ, রাবেয়া বেগম, ছালেহা বেগম ও নূর আয়েশা বলেন, চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে রাসেল চৌধুরীর অত্যাচারে এলাকার জনগণ শান্তিতে নেই। আমরাও অসহায়। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ড দেয়ার নামে ৪০-৪৫ দুঃস্থ মানুষের কাছ থেকে ১০০০ হাজার টাকা বাধ্যতামূলকভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন রাসেল চেয়ারম্যান। ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে গ্রামীণ দুঃস্থ লোকজনকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা দেয় সরকার। কিন্তু এতে রাসেল চেয়ারম্যান প্রতি কার্ডে ১০০০ টাকা নিলেও কার্ড দিন প্রতি ওয়ার্ডে কেবল ১৫-২০ জনকে। বাকিদের কার্ডও নেই, টাকাও ফেরত নেই। শালিস বিচারের নামে উভয় পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করেন। এলাকার কোথাও বিয়ে হলে নিজস্ব বাহিনী নিয়ে বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে বাল্য বিবাহের অভিযোগ তুলে হুমকির মুখে টাকা আদায় করেন। এ ছাড়া জমি ক্রয়-বিক্রয়ে এবং জেলেদের কাছ থেকে এককালীন ও মাসোহারা আদায় করেন। গরু, ছাগল থেকে শুরু করে ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর সব কিছুতে চাঁদা আদায় করেন তিনি। ৪০ দিনের কার্য কর্মসূচি, গুচ্ছগ্রাম, আরএমপি, এলজিএসপি, এডিপি, কাবিখা, কাবিটা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, খেয়াঘাট, বোটঘাটসহ এমন কোনো কর্মসূচি বা প্রকল্প নেই- তিনি দুর্নীতি করেন না।
তার এসব দুর্নীতির প্রতিবাদ ও অভিযোগ দেয়ায় আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী। এক পর্যায়ে গত ১৭ আগষ্ট কে বা কারা বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে তার ওপর হামলা করে। সেটিও সাজানো বলে ধারণা। অথচ এ মামলায় ফাঁসিয়েছেন নির্দোষ ওয়ার্ড সদস্য ও সাধারণ মানুষদের। ঘটনার দিন তারা ছিলেন নিজ নিজ এলাকায়, বাড়িঘরে। পরে আদালত থেকে অনেকে জামিন পান।
বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, ঘটনার দিন নিজে বাদী হয়ে ওই ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে বাঘাইছড়ি থানায় মামলা দেন রাসেল চৌধুরী। মামলার নম্বর-২, তারিখ: ১৭/০৮/২০১৭। মামলাটি তদন্তাধীন। আসামিরা হলেন- বাঘাইছড়ি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হোসেন, আমতলী ইউপি সদস্য আবদুস সুবহান, মো. ইমরান হোসেন বাবু, মো. আল আমিন শেখ স্বপন, মো. মহিন উদ্দিন শেখ তপন, মো. মজিবুর রহমান, মো. শামীম, মো. ইরিয়াস হোসেন ও মো. ইসলাম।
বাঘাইছড়ি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হোসেন ও আমতলী ইউপি সদস্য আবদুস সুবহান বলেন, ঘটনাটি রাসেল চৌধুরীর সাজানো। আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতেই এমন নাটক সাজিয়েছেন।
মো. জাহাঙ্গীর, ওয়ার্ড সদস্য সুবহানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি অনেকে বলেন, রাসেল চৌধুরী চরিত্রহীন, লম্পট। তার লাম্পত্যের শিকার অনেক নারী। এ পর্যন্ত ৯ বিয়ে করেছেন রাসেল চৌধুরী। বিয়ের কিছু দিন পর তালাক দেন। বর্তমানে ৩ নম্বর স্ত্রী নিয়ে আছেন। বর্তমান স্ত্রী আঁখি চৌধুরী ছাড়াও কিছু দিন আগে সর্বশেষ মৃত কিসমত সরদারের মেয়ে ইয়াসমিন বেগমকে (২৯) বিয়ে করেছেন। ইয়াসমিন বেগমও তার নির্যাতনের শিকার। নির্যাতনের বিচার চাওয়ায় তা সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত তাকে (ইয়াসমিনকে) বিয়ে করতে বাধ্য হতে হয়েছে। ইয়াসমিন তিন সন্তানের জননী। আগের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। রাসেল চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে ইয়াসমিন বেগম বলেন, এ ধরনের একটি প্রক্রিয়া চলছিল।
ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাহিল্যা এলাকার বাসিন্দা মৃত মোবারক আলীর ছেলে জিয়াউল হক বলেন, কিছু দিন আগে ছেলে ঘরের নাতির বিয়েতে নিজস্ব মাস্তান বাহিনী নিয়ে হানা দেন চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী। ওই সময় বাল্য বিবাহ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে হুমকি দেয়ায় রাসেল চেয়ারম্যানকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সুলতান মাস্টারের ছেলে ওই চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী এখন এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। তার ক্ষমতার অপব্যবহার, অত্যাচার ও হয়রানিতে সাধারণ মানুষ শান্তিতে নেই। তটস্থ এলাকাবাসী। রাসেল চৌধুরীর নিজস্ব মাস্তান বাহিনী আছে। সেই মাস্তান বাহিনী দিয়ে নির্যাতন চালান সাধারণ মানুষের ওপর। তা ছাড়া তার কথা কেউ না শুনলে তার নিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেন চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী। তার এসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বরাবরে পৃথক অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিকার নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল মিয়ার স্ত্রী আকলিমা বেগম (৫০) জানান, আমাদের কিছু জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান রাসেল। এতে প্রতিবাদ করায় আমার ছেলে আবদুল করিমের (২৫) বিরুদ্ধে মিথ্যা বন মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। এভাবে অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিচ্ছেন রাসেল চেয়ারম্যান। গ্রামের কারবারি ইউসুফ আলী (৬২) বলেন, তার জায়গাও দখলে নিতে চান রাসেল চেয়ারম্যান। এখন নানা হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। আমরা আতঙ্কে আছি। মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম (৭৫) বলেন, ক্ষমতার জোরে আমার অর্ধেক জমি বেদখল করেছেন রাসেল চেয়ারম্যান। ইয়াসমিন নামে এক মহিলা প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে অভিযোগ করার পর আমতলীতে গেলে তাকে আপন চাচা স্থানীয় কাজী পাচ লাখটাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন রাসেল চৌধুরী ।