“বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে মন্তব্য করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার । তিঁনি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ক্ষেত্রে আদান প্রদানের সাথে সংস্কৃতি, শিক্ষা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রেও আদান প্রদান বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন।
গত বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় মহাকরণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পীদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
মানিক সরকার বলেন, ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ককে ‘মধূর ও সুদৃঢ়’। এ সম্পর্ক আরও সক্রিয় ও দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য দুই রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের ইতিবাচক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি দুইদেশের মানুষের মধ্যে সুস্থ চিন্তা- চেতনা, মানবিক মূল্য ও দেশাত্ববোধ মিলিয়ে আমাদের যে ভাতৃত্ববোধ চেতনা তাকে আঘাত ও খণ্ড-বিখণ্ড করার জন্য বাংলাদেশের ও আমাদের দেশের ভেতরে প্রয়াস চলছে এবং এর পেছনে অনেকগুলো হাত রয়েছে।”
এজন্য দু রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে মানিক সরকার বলেন, “এ অশুভ প্রয়াসকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে প্রতিহত করার জন্য সম্বিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা শুধু দেখলাম; নিরব থাকলে হবে না। এ যদি হয় আমাদের, তবে এ জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।”
সেদিক থেকে অশুভ প্রয়াসকে প্রতিহত করার জন্য শুভ শক্তির সমাবেশ ঘটিয়ে সাহসের সাথে এগোতে হবে। দুই রাষ্ট্রের জনগণ এ ভূমিকা প্রতিপালন না করলে সম্পর্ককে সুদ্রঢ় ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
মানিক সরকার বলেন, বাংলাদেশ ভালো থাকলে সেটা ভরতের জন্য ভালো। ভারত ভালো থাকলে বাংলাদেশের জন্য ভালো। সেদিক থেকে আমাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে, পরশ্রীকাতরতা থাকবে না। এটা ভাবনায় রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
একটি চক্র নবীন প্রজন্মকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে তাদের বিভ্রান্ত ও বিপদগামী করার চেষ্টা করছে বলেও মনে করেন প্রবীন কামিউনিস্ট নেতা মানিক। তিনি বলেন, নবীন প্রজন্ম বিকাশমান শক্তি। দেশের অভ্যন্তরীন ও আন্তজার্তিক চক্র তাদের স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য এ শক্তিকে টার্গেট করে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। নবীন প্রজন্মের প্রতি নজর দেয়ার জন্যও সকলকে আহবান জানান ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক।
তিনি আরও বলেন, “কারণ তাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা যোগগুলো যদি বাড়িয়ে দেয়া যায় তাদের দেশাত্মবোধ, বিশ্বভাতৃত্ববোধের যে চেতনা, প্রতিবেশী হিসেবে প্রতিবেশীসুলভ সু-সম্পর্কের যে ভাবনা সেগুলোকে পেছন থেকে ঠেলে দেয়া যাবে। তা হলে অশুভ শক্তির সুবিধা হবে।” নবীন প্রজন্মকে রক্ষা করতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মানিক সরকার।
হৃদ্যতাপূর্ণ মতবিনিময় সভায় দুই দেশের ব্যবসা বাণিজ্য স¤প্রসারণ, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
ব্যবসায়ীদের পক্ষে ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি লায়ন হাকিম আলী ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়ানোর আহবান জানান বলেন, “উন্নত মান, স্বল্পমূল্য আর যোগাযোগ সুবিধার কারণে ত্রিপুরায় বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। গত ১০ বছরে খাদ্য সামগ্রী, নির্মাণ উপকরণসহ বাংলাদেশী বিভিন্ন পণ্যের বড় বাজার গড়ে উঠেছে।” এলসি সুবিধা বাড়ানোসহ এসব পণ্য তৃণমূল পর্যায়ে বাজারজাত করতে পরিবহন সুবিধার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিপুরার অবদানের কথা স্মরণ করে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা একটি অবিস্মরণীয় নাম। “আগরতলা ষড়যন্ত্র” মামলা বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনকে করেছিল বেগবান। আগরতলা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হয়তবা অন্যরকম হতে পারত। তাছাড়া মুক্তিরুদ্ধের সময় লাখ লাখ শরণার্থী ভারতের এই ছোট্ট রাজ্যটিতে আশ্রয় নিয়েছিল। মুক্তিবাহিনীর অসংখ্য ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল এখানে। তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মিলবন্ধনের কথা তুলে ধরে মূখ্যমন্ত্িেরক চট্টগ্রামে আসার আমন্ত্রণ জানান।
আগরতলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সত্যব্রত চত্রবর্ত্তী বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ত্রিপুরার জনগণের একটি ইতিবাচক ধরণা রয়েছে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে একটা আন্তরিক সু-সম্পর্কও বিরাজ করে।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে ডায়মন্ড সিমেট লিমিটেডের পরিচালক আজিম আলী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কবি রাশেদ রউফ, সুপ্রভাত বাংলাদেশের সহযোগী সম্পাদক কবি কামরুল হাসান বাদল, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, মিডিয়া পরামর্শক এজাজ মাহমুদ, পোট্রেট সম্পাদক রূপম চক্রবর্তী ও উপদেষ্টা মিজানুর রহমান বক্তব্য দেন।