ভারতের হাতে অস্ট্রেলিয়া সাম্রাজ্যের পতন

অস্ট্রেলিয়া হারে ৩৬ রানে

কার্ডিফে আগেরদিন বাংলাদেশকে পাওয়া ভূতটাই যেন ওভালে উড়ে এসে ভর করল অস্ট্রেলিয়ার কাঁধে! ওভার প্রতি যেখানে রান দরকার ছিল ৮ কিংবা ৯, সেখানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রোববার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশিরভাগ সময়ই তুললেন ৫’র একটু বেশি করে। পরে রান জমতে জমতে হয়ে উঠল পাহাড়। শেষে ধসে পড়ে গুঁড়িয়ে দিল ইনিংসটাকেও!

সোমবার একই নাটকের যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও। বিরাট কোহলিদের দেয়া ৩৫৩ রানের বিপরীতে ঠিক যেভাবে তেড়েফুঁড়ে খেলার দরকার ছিল, অজিরা অনুসরণ করল তার উল্টোটা, বলা যায় বাংলাদেশকেই। শেষদিকে আক্রমণের কথা ভেবে আস্তে চলতে গিয়ে বাড়িয়ে তুলল প্রয়োজনীয় রানরেট। একটা সময় চাপে পড়ে উইকেট হারিয়ে শেষ বলে ৩১৬ রানে অলআউট হয়ে ভারতকে উপহার দিয়েছে ৩৬ রানের জয়।

ভারতের হাতে অস্ট্রেলিয়া সাম্রাজ্যের পতন 1
অ্যারেন ফিঞ্চের রান আউটের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙে

বিশ্বকাপের অন্যতম আকর্ষণীয় এবং মহারণ ছিল এই ম্যাচ। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া লড়াই। বিশ্বকাপের অন্যতম দুই দাবিদার। তাদের লড়াই দেখতে মুখিয়ে ছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। সমর্থকদের নিরাশ করেননি দুই দলের ক্রিকেটাররা। মন ভরিয়ে দিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন তারা। বিশেষ করে ভারত।

দেশটির যেমন সমর্থক বেশি, তেমনি তাদের ক্রিকেটাররাও খেলেছেন নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচ। শিখর ধাওয়ান করলেন সেঞ্চুরি। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা করলেন হাফ সেঞ্চুরি। হার্দিক পান্ডিয়া, মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা লোকেশ রাহুলরা ব্যাট হাতে বইয়ে দিয়েছেন চার-ছক্কার ঝড়। সব মিলিয়ে ভারতীয় সমর্থকদের জন্য ছিল এক উপভোগ্য ম্যাচ।

কোহলিদের ছুঁড়ে দেয়া ৩৫৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া থেমেছে ৩১৬ রানে। অসি ব্যাটসম্যানরাও বলতে গেলে ম্যাচটাকে একেবারে ক্লোজ করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকার কারণে, শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি তারা।

দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর অ্যারোন ফিঞ্চ মিলে শুরুটা করেছিলেন ভালো। প্রথমে কিছুটা স্লো ব্যাটিং করলেও দু’জন মিলে ৬১ রানের জুটি গড়েন। ৩৫ বলে ৩৬ রান করে ফিঞ্চ রানআউট হয়ে গেলে বিপদ শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার। তবুও ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভেন স্মিথ মিলে গড়েন ৭২ রানের দারুণ এক জুটি।

যদিও ওয়ার্নার আজ ছিলেন খুবই স্লো। নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। ৮৪ বল খেলে তিনি করেছেন মাত্র ৫৬ রান। ৫টি বাউন্ডারি মারলেও কোনো ছক্কার মার নেই তার ব্যাটে।

স্মিথ ৭০ বল খেলেছেন। করেন ৬৯ রান। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। উসমান খাজা করেন ৩৯ বলে ৪২ রান। ম্যাক্সওয়েল মাঠে নেমেই চেষ্টা করেন ঝড় তোলার। ১৪ বলে ২৮ রান সে ইঙ্গিতই দিচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতীয় স্পিনের সামনে কুলিয়ে উঠতে পারলেন না। ইয়ুজবেন্দ্র চাহালের বলে ক্যাচ দিতে বাধ্য হন।

মার্কাস স্টোইনিজ শূন্য রানে আউট হলেও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারে দারুণ ব্যাটিং করেন। মাত্র ২৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৩৫ বলে তিনি অপরাজিত থেকে যান ৫৫ রান করে। বাকি ব্যাটসম্যানরা ছিলেন কেবল আসা-যাওয়ার মিছিলে।

ভারতীয় পেসার ভুবনেশ্বর কুমার এবং জসপ্রিত বুমরাহ নেন ৩টি করে উইকেট। ২ উইকেট নেন ইয়ুজবেন্দ্র চাহাল। দুটি হলো রানআউট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৫২/৫ (রোহিত ৫৭, ধাওয়ান ১১৭, কোহলি ৮২, পান্ডিয়া ৪৮, ধোনি ২৭, রাহুল ১১*, কেদার ০*; কামিন্স ১/৫৫, স্টার্ক ১/৭৪, কোল্টার-নাইল ১/৬৩, স্টয়নিস ২/৬২)
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩১৬/১০ (ওয়ার্নার ৫৬, ফিঞ্চ ৩৬, স্মিথ ৬৯, খাওয়াজা ৪২, ম্যাক্সওয়েল ২৮, স্টয়নিস ০, কেয়ারি ৫৫*, কোল্টার-নাইল ৪, কামিন্স ৮, স্টার্ক ৩, জ্যাম্পা ১; ভুবনেশ্বর ৩/৫০, বুমরাহ ৩/৬১, চেহেল ২/৬২)
ফল: ভারত ৩৬ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: শিখর ধাওয়ান।

এর আগে ব্যাট হাতে রান উৎসবই করেছে ভারত। শিখর ধাওয়ান তুলে নিয়েছেন ঝলমলে সেঞ্চুরি। সঙ্গে হাফসেঞ্চুরি রোহিত ও বিরাট কোহলির ব্যাটে। তারই পথ ধরে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো দলের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে ভারত। দলটির বিপক্ষে বিশ্বকাপে আগের সর্বোচ্চ ছিল গতবার শ্রীলঙ্কার করা ৩১২ রান।

টস জিতে অধিনায়কের ব্যাট করার সিদ্ধান্তটা যৌক্তিক করে দারুণ সূচনা এনে দেন রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। দু’জন উদ্বোধনী জুটিতে তুলেন ১২৭ রান। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রোহিত ফেরেন ৭০ বলে ৫৭ রান করে। এদিনই মহেন্দ্র সিং ধোনির (৩৫৪) ছাড়িয়ে ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছক্কার মালিক হয়ে যান তিনি।

সাবলীল শিখর ধাওয়ান এরপর ৯৫ বলে ১৩টি বাউন্ডারিতে তুলে নেন সেঞ্চুরি। যা তার ক্যারিয়ারের ১৭তম ওয়ানডে শতরান।

ধাওয়ান অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে করেন ৯৩ রান। ১০৯ বলে ১১৭ রানে আউট ধাওয়ান। ম্যাচসেরা তিনিই!

ভারতের হাতে অস্ট্রেলিয়া সাম্রাজ্যের পতন 2
শেখর ধাওয়ান তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি

তারপর ভারত অধিনায়ক থামেন ৭৭ বলে ৮২ রান। ইনিংসে ছিল দুই ছক্কা আর ৪ বাউন্ডারি। হার্দিক পান্ডিয়া খেলেন টর্নেডো ইনিংস। ২৭ বলে আসে ৪৮ রান। সঙ্গে মহেন্দ্র সিং ধোনি ১৪ বলে ২৭। দল পায় বড় পুঁজি! যার পথ ধরেই এসেছে অনায়াস জয়। দক্ষিণ আফ্রিকার পর এবার অস্ট্রেলিয়া!

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!