বাংলাদেশের খেলা মানে জামালখানে মানুষের মেলা

চট্টগ্রাম নগরীতে বিনোদনের জায়গা বলতে হাতেগোনা কয়েকটি স্পট। বিশেষকরে বিকেলবেলায় অফিস ফেরত মানুষ কিংবা ইট পাথরের চার দেয়ালে বন্দি মানুষগুলো একটু মুক্ত হাওয়ার আশায় ঘর ছেড়ে বাইরে আসেন। কিন্তু যাওয়ার কোন জায়গা নেই বললেই চলে। একেবারে নেই তা নয়। এই যেমন জামালখান মোড়। সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের কল্যাণে বদলে যাওয়া জামালখানে এখন বিকেল হতেই নানান বয়সী মানুষের ‘আড্ডাখানা’। সেটি মনুষ্যমেলায় পরিণত হয় যেদিন বাংলাদেশের কোন খেলা থাকে এবং সেটি মোড়ে স্থাপিত বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয়।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যান্য দিনের খেলার মতো ব্যতিক্রম হয়নি আফগানবধের দিনেও। বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের খেলা দেখতে বিকাল থেকেই জমায়েত হতে শুরু করে খেলা পাগল মানুষ। উপচেপড়া ভীড়ে ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ। এসেছিলেন বড় পর্দায় টাইগারদের আফগানবধের সাক্ষী হতে। জামালখান মোড় পরিণত হয় একখণ্ড সাউদাম্পটনের রোজভোল্ট, কখনো ওভাল কখনো বা সমারসেটের টনটন।

টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এই ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ২৬২ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। শুরুতে লিটন দাসের বিতর্কিত ক্যাচ আউট নিয়ে অনেকেই বিমর্ষ হয়ে পড়েন। ১৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৬ রান করেন লিটন দাস। এরপর ২৩ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ৬১ বলে ৫১ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। প্রতিটি চার এবং ছক্কায় উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন দর্শকরা।
বাংলাদেশের খেলা মানে জামালখানে মানুষের মেলা 1
বিশেষ করে সাকিব ও মুশফিকুর রহিম জুটির অনবদ্য পারফরম্যান্স উপভোগ করেন তারা। সাকিব ৫১ রানে আউট হয়ে যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহর সাথে জুটি বাধে মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে তারা যোগ করেন ৫৬ রান। ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেনের সাথে ৩৩ বলে ৪৪ রানের জুটি মুশফিকের। ৮৭ বলে ৪ টি বাউন্ডারি ও ১ টি ছক্কায় ৮৩ রান করেন তিনি। শেষের ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক। আফগানিস্তানের পক্ষে মুজিবুর রহমান ৩ টি এবং গুলবাদিন নাইব ২ টি উইকেট নিয়েছেন। আফগানদের ২৬৩ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ।

এরপর রয়েল বেঙ্গল টাইগার যখন একেকজন কাবুলিওয়ালাকে শিকারে পরিণত করতে থাকেন তখন বাঁধভাঙা উল্লাসে পুরো জামালখান প্রকম্পিত হয়ে উঠে। কখনো ‘সাকিব, সাকিব’ কখনো ‘মিরাজ, মিরাজ’ কোরাসে চলতে থাকে গগনবিদারী চিৎকার।

জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ আগেরদিন নিজের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেন খেলা দেখার মেলায় নিজেও সামিল হবেন। তিনি লিখেন, ‘ইংল্যান্ড সাউথাম্পটন এর The Rose Bowl মাঠে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের খেলা আজ বিকাল ৩.৩০ টায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য শুভ কামনায় আজ উক্ত খেলা আমি জামালখান জায়ান্ট টিভিতে উপভোগ করবো।
একসাথে খেলা উপভোগ করতে আপনারাও আসুন জামালখানে।
সকলকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ‘
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=2448029755441933&set=a.1543126019265649&type=3&eid=ARChQaC_Ay-Nze8UzYNeRuKZAGpazxNgexJcTV6jL1Y5Z3KPL1dpVX0dNVxw2YmIRt3prVmxW6sGlPPS
চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র মো. ইমতিয়াজ বলেন,এখানে সবার সাথে বড় পর্দায় খেলা দেখার মজাই আলাদা। বাংলাদেশের খেলা থাকলে বন্ধুরা সবাই মিলে এখানে চলে আসি। দারুণ খেলছে বাংলাদেশ। আমরা ওদের জন্য গর্বিত।

রিকশাওয়ালা রমিজ মিঞা একপাশে রিক্সা রেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশের খেলা দেখছিলেন। রিক্সা ফেলে খেলা দেখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিক্সাতো প্রতিদিন চালাই কিন্তু বাংলাদেশের খেলাতো প্রতিদিন থাকেনা। বড় পর্দায় সবার লগে খেলা দেখনের মজাই আলাদা।

শত শত মানুষ রাস্তায় ভীড় করে খেলা দেখার জন্য। অবশ্য এমসয় যান চলাচলে সাময়িক ব্যঘাত ঘটে। তবে সেই ব্যঘাত নিয়ে কেউ মনে হয় না বিরক্ত হন। হাজার হোক ইংল্যান্ডের মাটিতে টাইগারের সদর্পে হেঁটে বেড়ানো দেখার জন্য এতটুকু ত্যাগস্বীকার করতে সবাই রাজি। আর তাই বাংলাদেশ দলের প্রতিটি চার ও ছক্কায় কিংবা উইকেট দখলে করতালি, চিৎকার ও কেউ কেউ নেচে গেয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন টাইগার ফ্যানরা।
এসবি/এমএএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!