ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শুরুর আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে দর্শক-ভক্তদের চাওয়া-পাওয়ার বেলুন আরো স্ফীত করে টাইগাররা। এমনিতে বেশ কয়েক বছর ধরে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ বেশ সমীহ জাগানো দলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে অস্ট্রিলয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার পর এবারের আসরে প্রত্যাশার মাত্রা আরো বেশি হবে সেটিই স্বাভাবিক। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলটি অনেকের চোখে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে অভিজ্ঞ।
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল ভক্তকুলকে নাড়িয়ে দেয় টাইগাররা। স্বপ্ন দেখতে অভ্যস্ত ভক্তরা তাতে নিজেদের স্বপ্নের মাত্রা আরো কয়েক ডিগ্রি বাড়িয়ে নেয়। দ্বিতীয় ম্যাচে এসে নিউজিল্যান্ডের সাথে হারার পরও প্রত্যাশার বেলুনে বাতাস একটুও কমেনি। বরং হারের জন্য যাবতীয় দোষ মুশফিকের কাঁধে দিয়ে দেয় সমর্থকরা। মুশফিককে রক্ষা করার জন্য আইসিসির আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে হয় ক্যাপ্টেন মাশরাফিকে।
ওভালের জয়-পরাজয়ের পর দল পাড়ি জমায় কার্ডিফে। সৌভাগ্যের কার্ডিফে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিবে এই প্রত্যাশায় কোমর বেঁধে টিভির সামনে নেমে পড়বে সমর্থকরা। ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপে টানা তৃতীয় হার উপহার দিবে বাংলাদেশ এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায় টাইগারভক্তরা। কিন্তু ব্রিটিশদের উড়িয়ে দেয়ার আগে উল্টো নিজেরাই উড়ে যায়।
বাংলাদেশের তিনটি ম্যাচের পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় চোখের সামনে উঠে এসেছে। টাইগারভক্তরা মিলিয়ে নিতে পারেন-
এক:
সাইফুদ্দিনকে ম্যানেজমেন্টের চোখে বল ওপেন করার মতো কাযর্কর পেসার মনে হয়। অথচ সাইফুদ্দিন হলেন তিনি, যার কাছ থেকে কিনা মিডিল ওভার/ডেথ ওভারে কাজ চালিয়ে নেয়ার মতো বল আর ব্যাটে শেষ দিকে দ্রুত ২০/৩০ রান করে দেয়ার চেয়ে বেশি আশা করা যায় না।
দুই:
মিথুন কেমনে করে জানি ম্যানেজমেন্টের চোখে মিডল অর্ডারে অটো চয়েস হয়ে গেছে। মিথুন তার সেরা দিনে ৬০ বলে ৫০ করার সামর্থ্য রাখে। এই বিশ্বকাপে এমন প্লেয়ার ৫ নম্বরে খেলানো অর্থহীন। সব দিন না হলেও অন্তত তার সেরা দিনে ৬০ বলে ৮০ করার সামর্থ্য থাকতে হবে।
তিন:
ইংল্যান্ডের পিচে মাশরাফি এবং সাইফুদ্দিনের শুরুতে উইকেট নেয়ার সামর্থ্য নেই। ওদের যে পেস ব্যাটসম্যানের আই কন্টাক্ট এবং প্লেসমেন্টে কোন সমস্যাই হয় না। বলে অন্তত ১৪০ এর বেশি গতি হলে সঠিক লেংথের ইনসুইং এবং আউটসুইংএ ব্যাটসম্যান এর বিট হবার একটা সম্ভাবনা থাকে।
চার:
ম্যানেজমেন্ট ভাবতেছে মুস্তাফিজ বাদে সবাই ব্যাট করতে পারে, কিন্তু বাস্তবে সাইফুদ্দিন, মিরাজ এর চেয়ে ওকস, প্লাংকেট, রাশিদ খান এরা অনেক ভাল ব্যাটসম্যান। মাশরাফির নাম এখানে উল্লেখ করার মতো না।
পাঁচ:
তামিমের সিংগেল বের করতে না পারার সীমাবদ্ধতাই প্রথম তিন ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার কারন। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড ম্যাচে আউট হওয়া বলে তার এপ্রোচ খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে। মনে হচ্ছিল বল ডেলিভারি দেওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন এভাবে খেলবেন।
ছয়:
কন্ডিশন ওভার কাস্ট না হলে আমাদের টস জিতলে অবশ্যই ব্যাট করা উচিৎ। টসে জিতে বোলিং নিলে আমাদের যে বোলিং তাতে প্রতি ম্যাচেই সাড়ে তিনশো রানের নিচে চাপা পড়তে হবে। এর চেয়ে ভাল আগে ব্যাট করে আমরা ৩০০ এর আশেপাশে রান করে (এর বেশি করার সামর্থ্য নেই) প্রতিপক্ষককে একটু হলেও স্কোর বোর্ড প্রেসারে ফেলা যাবে।
সাত:
রিয়াদ ব্যাট এবং ৪/৫ ওভার বল করার সামর্থ্য মিলিয়ে একটা প্যাকেজ ছিল । ফিটনেস জনিত কারনে সে যদি বল না করে একই কারনে তাকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানোটা বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। ব্যাটিং দেখেও তাকে ফিট মনে হচ্ছে না। (বাদ দিতে বলছি না, বিকল্প নেই)
আট:
যেকোনভাবেই হোক একাদশে রুবেল হোসেনের অন্তর্ভুক্তি দরকার। সবচেয়ে ভাল হতো মাশরাফির জায়গায় নিতে পারলে, তা যেহেতু সম্ভব না একজন ব্যাটসম্যান কমিয়ে হলেও রুবেলকে একাদশে নিতে হবে পরের ম্যাচগুলোতে। ম্যানেজমেন্টের এটা বুঝা উচিৎ ৬ জনে না হলে ৮ জনেও হবে না।
নয়:
মুশফিককে উইকেটের পেছনে অনেক বেশি ক্লান্তিকর মনে হয়েছে। মিথুনের জায়গায় লিটনকে দলে ইন করিয়ে কিপিং গ্লাভস লিটনের হাতে তুলে দেয়া যায়। এছাড়া ইংল্যান্ডের মাটিতে লিটনের ব্যাট থেকে ভালো কিছু আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
দশ:
দল পরিচালনা, একাদশ গঠন, মাঠ পরিচালনায় বাস্তবতার চেয়ে আবেগ অনেক বেশি কাজ করে। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইংল্যান্ড মঈন আলীকে একাদশের বাইরে রেখে প্লাংকেটকে খেলাতে পারে, অথচ বাংলাদেশ একাদশ পরিবর্তনে বিশ্বাসী না।
টাইগার ভক্তদের মতো সবার আশা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। মাঠে শিকারী বাঘের পদচারণাই পারে সবকিছু পরিবর্তন করতে।