নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে এশিয়ার কালো ঘোড়া শ্রীলঙ্কা

২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট। ২০১৫ সালে কোয়ার ফাইনালিস্ট। কিন্তু সেই শ্রীলঙ্কার জৌলুস এখন একেবারে নাই বললেই চলে। সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনেদের বিদায়ের পর এই শ্রীলঙ্কা পুরোপুরি অচেনা হয়ে গেছে। নিজেদের খুঁজেই পাচ্ছে না। ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে এই দলটি এখন রয়েছে ৯ নম্বরে। এতটা বাজে অবস্থা লঙ্কানদের আর কখনও হয়েছে কি না সন্দেহ।

বাজে অবস্থার কারণে সিদ্ধান্তহীনতায়ও ভুগতে শুরু করেছে লঙ্কান ক্রিকেট। যার প্রভাব পড়েছে এবারের বিশ্বকাপে তাদের স্কোয়াডে। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা দিনেশ চান্ডিমালকে আগেই বাদ দেয়া হয়েছিল। পরিবর্তে নেতৃত্বে আনা হয়েছিল লাসিথ মালিঙ্গাকে।

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাজেভাবে হারার কারণে হঠাৎই করেই নেতৃত্বে পরিবর্তন। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর আর যার ওয়ানডেই খেলা হয়নি, সেই দিমুথ করুনারত্নেকে বানিয়ে দেয়া হলো বিশ্বকাপের অধিনায়ক। দিনেশ চান্ডিমালকে দলেই রাখা হলো না।

বাংলাদেশ ক্রিকটে দলকে নিয়ে দারুণ সাফল্য পাওয়ার কারণে টাইগারদের সঙ্গে মাঝপথেই সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে লঙ্কান দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কিন্তু নিজ দেশের দায়িত্ব নেয়ার পর তার অধীনেও লঙ্কানরা ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচক কমিটি থেকে পর্যন্ত বাদ দেয়া হয়েছে হাথুরুসিংহেকে। এমনকি শঙ্কাও দেখা দিচ্ছিল, তাকে না আবার বাদ দিয়ে দেয় লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের কারণে এ যাত্রায় রক্ষা পান হাথুরু।

১৯৯৬ সালে অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বে সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল দ্বীপদেশ শ্রীলংকায়। সেই থেকে একটি নির্দিষ্ট মান বজায় রেখে খেলে চলেছিল লঙ্কানরা। ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে দ্বিতীয় শিরোপা জেতার সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল তারা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রবল প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি মাহেলা জয়াবর্ধনের দল।
নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে এশিয়ার কালো ঘোড়া শ্রীলঙ্কা 1
অধিনায়কের হাতবদলে চার বছর পর দল পরিচালনায় ছিলেন আরেক কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা। এবং টানা দ্বিতীয়বার (২০১১ সালে) বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গিয়েছিল সাঙ্গাকারার দল। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, মুত্তিয়া মুরালিধরন, তিলকারত্নে দিলশান, উপুল থারাঙ্গা, লাসিথ মালিঙ্গাদের নিয়ে সেবার শ্রীলঙ্কা ছিল সত্যিই অপ্রতিরোধ্য।

লঙ্কানদের দৃঢ় চরিত্রই তাদের সাফল্যের মূল কারণ। ১৯৯৬ সালে তাদের বিশ্বকাপ জেতাকে যারা ফ্লুক হিসেবে ভেবেছিল, তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন অরবিন্দ ডি সিলভা আর অর্জুনা রানাতুঙ্গার উত্তরসূরিরা। ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত একভাবেই এগিয়ে চলছিল দ্বীপদেশটির ক্রিকেট। কিন্তু ২০১৫ সালের পর জয়াবর্ধনে এবং সাঙ্গাকারা অবসর নেয়ার ফলে কক্ষপথচ্যুত হয়ে যায় লঙ্কান ক্রিকেট।

তেমন কোনো তারকা ক্রিকেটার উঠে না আসা, দলের মধ্যে কিছুটা কোন্দল বিদ্যমান থাকার কারণেও লঙ্কানদের ক্রিকেট নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা ব্যহত হচ্ছিল। এবারের বিশ্বকাপ তাই লঙ্কানদের জন্য বিশাল এক অগ্নি পরীক্ষা। এবার যদি খুব বাজে ক্রিকেট খেলে তারা, তাহলে আরও কত বছর তাদের পিছিয়ে থাকতে হবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী, এরপর ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট হওয়ার কারণে এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে তাদের জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যান সমান। ৭৩ ম্যাচ খেলে সমান ৩৫টি করে ম্যাচে জয় এবং পরাজয় ঘটেছে শ্রীলঙ্কার।

তবে দলটির ক্রিকেটারদের যে সামর্থ্য, তা যদি সঠিকভাবে মাঠে মেলে ধরতে পারে, তাহলে যে কোনো দলকে কাঁপন ধরিয়ে দিতে পারে তারা। লঙ্কানদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে লাসিথ মালিঙ্গার বোলিং। আইপিএলে যেভাবে বোলিং করে গেছে এবং শেষ বলে এসে যেভাবে উইকেট নিয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন, তাতে তাকে ঘিরে আশা দেখতেই পারে লঙ্কানরা।

সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের আমলের সঙ্গে বর্তমান সময়ের যোগসূত্র স্থাপনকারী অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ এবারও আছেন। পেস বোলিং সামলাবেন লাসিথ মালিঙ্গা, নুয়ান প্রদীপ, সুরাঙ্গা লাকমাল। এই দলটিতেই সম্ভবত রয়েছে সবচেয়ে বেশি অলরাউন্ডার। পেস বোলিং অলরাউন্ডারের মধ্যে রয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ, থিসারা পেরেরা, ইসুরু উদানা। স্পিন অলরাউন্ডারের মধ্যে রয়েছেন জীবন মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, জীবন মেন্ডিস এবং মিলিন্দা সিরিবর্ধনে।

ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রয়েছেন দিমুথ করুনারত্নে, অভিষেক ফার্নান্দো, কুশল মেন্ডিস, কুশল পেরেরা, লাহিরু থিরিমানে। দলের এমন অবস্থা, বিশ্বকাপের সময় একাদশ সাজাতে গিয়েই হিমশিম খেতে হবে লঙ্কান টিম ম্যানেজমেন্টকে।

শ্রীলঙ্কা স্কোয়াড:
দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), লাসিথ মালিঙ্গা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ, থিসারা পেরেরা, কুশল পেরেরা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, কুসল মেন্ডিস, ইসুরু উদানা, মিলিন্দা সিরিবর্ধনে, অভিষেক ফার্নান্দো, জীবন মেন্ডিস, লাহিরু থিরিমানে, জেফ্রি ভ্যান্ডারসি, নুয়ান প্রদীপ, সুরঙ্গা লাকমাল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!