উইলিয়ামসনের ‘উইলো’র আঘাতে বিদায়ের পথে প্রোটিয়ারা

গত দুই বিশ্বকাপে এই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১১ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং গত বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেই বাদ পড়ে প্রোটিয়ারা। এবারের দেখায় গত দুইবারের হিসেব-নিকেশ মিলানোর ব্যাপার ছিল তাদের সামনে। হিসেব-নিকেশ মিলানো দুরের ব্যাপার উল্টো উইলিয়ামসনের উইলোর আঘাতে নিজেরাই মিলিয়ে গেল।

উইলিয়ামসনের 'উইলো'র আঘাতে বিদায়ের পথে প্রোটিয়ারা 1
ব্যাটের ভর উইলিয়ামসনের কাঁধে। যদিও তার এই ব্যাটের উপর ভর করেই জয় পায় নিউজিল্যান্ড।

বিশ্বকাপের এবারের আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানটা দখলে নিয়ে রেখেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু মাঝে এক ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের এক নম্বর স্থানটি। তা নিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। তবে শীর্ষস্থান ফিরে পেতে খুব একটা সময় নিল না কিউইরা।

বার্মিংহামের এজবাস্টনে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটে চড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে তারা। বৃষ্টির কারণে ৪৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে প্রোটিয়াদের করা ২৪১ রানের সংগ্রহ টপকে যেতে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে।

এ জয়ের পর পাঁচ ম্যাচ থেকে ৯ পয়েন্ট নিয়ে পুনরায় টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে নিউজিল্যান্ড। তারা জিতেছে ৪টি ম্যাচ, বৃষ্টি ভেসে গিয়েছে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি।

এদিকে নিউজিল্যান্ড পাঁচ ম্যাচ খেলে অপরাজিত থাকলেও, বিদায় ঘণ্টা প্রায় বেজেই গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কারণ টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৬ ম্যাচ খেলে তাদের ঝুলিতে রয়েছে মাত্র ৩টি পয়েন্ট। তারা জিতেছে ১টি মাত্র ম্যাচ, বৃষ্টির কল্যাণে পেয়েছে আরও ১ পয়েন্ট।

বুধবারের ম্যাচের লক্ষ্যটা ছোট হলেও নিউজিল্যান্ডের কঠিন পরীক্ষা নেয়ার আভাসই দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃষ্টির কারণে ৪৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে আশানুরূপ ব্যাটিং করতে না পারায়, প্রোটিয়াদের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ২৪১ রান।

যা তাড়া করতে নেমে ৪৭ ওভার পর্যন্ত সহজ জয়ের পথেই ছিলো নিউজিল্যান্ড। শেষ দুই ওভারে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে জয়ের জন্য ১৪ রান দরকার ছিলো তাদের। কিন্তু ৪৮তম ওভারে বল হাতে নিয়েই ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে দেয়ার প্রয়াস চালান লুঙ্গি। সে ওভারে মারমুখী অলরাউন্ডার কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের উইকেটসহ মাত্র ৬ রান খরচ করেন লুঙ্গি। আউট হওয়ার আগে মারমুখী ব্যাটে ৪৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলেন গ্র্যান্ডহোম।

সে ওভারের শেষ বলে ৪ মেরে সমীকরণটা হাতের নাগালেই রাখেন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন। শেষ ওভারে বাকি থাকা ৮ রান আটকানোর দায়িত্ব বর্তায় আন্দিল ফেলুকায়োর কাঁধে। কিন্তু শেষ কাজটি করতে পারেনি ফেলুকায়ো। তার করা ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়ে অধিনায়ককে স্ট্রাইকে ফেরান অধিনায়ককে।

স্ট্রাইক পেয়ে ওভারের দ্বিতীয় বলেই মিড উইকেট দিয়ে দারুণ এক ছক্কা হাঁকিয়ে সমীকরণ ৪ বলে ১ রানে নামিয়ে আনেন উইলিয়ামসন। তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে নিশ্চিত করেন দলের জয়। শেষপর্যন্ত ১৩৮ বলে ১০৩ রানে অপরাজি থাকেন কিউই অধিনায়ক।

উইলিয়ামসনের 'উইলো'র আঘাতে বিদায়ের পথে প্রোটিয়ারা 2
এই ছবিটি ম্যাচের প্রতীকি অর্থে ‘নিউজিল্যান্ডের কাছে ভূপাতিত দ. আফ্রিকা’ বলতে পারেন। আসলে দারুণ বল করা রাবাদা নিজের বলে নিজে ফিল্ডিং করতে গিয়ে পড়ে যান।

এছাড়া ওপরের সারির অন্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওপেনার মার্টিন গাপটিল ৫৯ বলে ৩৫ ও পেস বোলিং অলরাউন্ডার জিমি নিশাম ৩৪ বলে ২৩ রান করেন। চূড়ান্ত ব্যর্থ হন কলিন মুনরো (৫ বলে ৯), রস টেলর (২ বলে ১), টম লাথাম (৪ বলে ১)।

এর আগে ম্যাচ শুরুর সময়টা ছিল বৃষ্টি বিঘ্নিত। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শুরু হয় খেলা। যে কারণে, এই দু’দলের কাছ থেকেই কেটে নেয়া হয় ১টি করে ওভার। ৪৯ ওভারের ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে কিউই বোলারদের তোপের মুখে খুব বেশিদুর এগুতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ডের সামনে তারা দিতে পারে কেবল ২৪২ রানের চ্যালেঞ্জ।

এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে যেখানে অহরহ ৩০০ কিংবা ৩০০ প্লাস স্কোর হয়ে যাচ্ছে, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা করে কেবল ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান! রাশি ফন ডার ডুসেন আর হাশিম আমলা না দাঁড়ালে তো এই রানও করা সম্ভব হতো না প্রোটিয়াদের পক্ষে।

ফন ডার ডুসেন করেন সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৭ রান এবং আমলা করেন ৫৫ রান। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন লকি ফার্গুসন। ১টি করে উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম নেন ১টি করে উইকেট।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই কুইন্টন ডি ককের উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর আমলা আর ডু প্লেসিস মিলে চেষ্টা করেন শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন। কিন্তু ২৩ রান করে আউট হয়ে যান ডু প্লেসিস। এরপর এইডেন মারক্রাম করেন ৩৮ রান। হাশিম আমলা ৮৩ বল খেলে রান করেন ৫৫ রান।

মিডল অর্ডারে ৬৪ বলে ৬৭ রান করে অপরাজিত থাকেন রাশি ফন ডার ডুসেন। ডেভিড মিলার করেন ৩৭ বলে ৩৬ রান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!