১১ ব্র্যান্ডের দুধে সীমাহীন সীসা, তালিকায় আড়ং ও প্রাণ

১১ ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে অতিরিক্ত মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই ১১টি ব্র্যান্ড হল মিল্ক ভিটা, ডেইরি ফ্রেশ, ঈগলু, ফার্ম ফ্রেশ, আফতাব মিল্ক, আল্ট্রা মিল্ক, আড়ং, প্রাণ মিল্ক, আয়রন, পিউরা ও সেফ।

হাইকোর্টে দেওয়া বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

গোখাদ্যের ১২ ধরনের নমুনা সংগ্রহ করে আইসিডিডিআরবি, বিসিএসআইআরসহ চারটি ল্যাবে পরীক্ষা করে এ প্রতিবেদনটি দাখিল করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। অথচ বিএসটিআই ৩০৫টি নমুনা সংগ্রহ করে মাত্র দুটি ব্র্যান্ডের দুধে ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়ার কথা জানিয়েছিল।

আদালতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। এ সময় বিএসটিআইয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এমআর হাসান মামুন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।

প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানি শেষে দুগ্ধ খামারিদের পশু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গাভিকে কোনও ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট অনুযায়ী ক্ষতিকারক উপাদান থাকা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে জানাতে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পায়।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত। এরপর প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব।

পরে আদালত দুধে সীসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। এছাড়া রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এর পাশাপাশি আদালত ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সীসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। যার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। এরপর ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!