রাঙ্গুনীয়া খাদেম জিল্লু হত্যা ! বিচার চাইতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হুমকিতে দেশছাড়া বাদি ! নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে পরিবার : আসামীরা ঘুরছে প্রকাশ্যে
বিশেষ রিপোর্ট :
রাঙ্গুনীয়া উপজেলার রানীর হাট বাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হওয়া মাজারের খাদেম ফকির জিল্লুর রহমানের বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। খুনের ঘটনার দীর্ঘ ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে মামলায় অভিযুক্ত অধিকাংশ আসামী। রাঙ্গুনীয়া থানা পুলিশের গরিমষির কারণে ১৩ জন আসামীর মধ্যে মাত্র দুজন আসামী বর্তমানে গ্রেফতার রয়েছে অভিযোগ বাদীর।
এদিকে সন্ত্রাসীদের ক্ষমতার বলে ভাই হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে প্রবাসী হলেন জিল্লুর হত্যা মামলার বাদি আজিম উদ্দীন। শুধু তাই নয় মামলা প্রত্যাহার করে নিতে আসামীরা নিহতের পরিবারকে প্রতিনিয়ত অপহরণ ও প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। ফলে প্রচন্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নিহতের পরিবার। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় এমপি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন সুরহা না হওয়ায় একই আসামীদের বিরুদ্ধে নগরীর চকবাজার থানায় করা হয় সাধারণ ডায়েরী।
মামলার বাদী অভিযোগ করে বলেন, রাঙ্গুনীয়া থানা হত্যা মামলার চার্জশীট দেয় গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তে। চার্জশীট দেয়ার সময় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মামলার প্রধান দু্ই আসামী শহিদুল ইসলাম ওরপে লেঙ্গা খোকন এবং ইসমাইল ওরপে পিস্তল ইসমাইল এবং আজিম ও সাইফুলের নাম বাদ দিয়ে বিএনপির দুজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম যুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মামলার বাদি আদালতে নারাজী দিলে আদালত মামলার তদন্তভার গ্রহণ করার জন্য সি আইডিকে নির্দেশ দেয়।
সি আইডি দীর্ঘ একবছর তদন্ত কাজ চালিয়ে গত ৯ অক্টোবর রাঙ্গুনীয়া থানা চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়া চার আসামীসহ মোট ১৩ জনের নাম সংযুক্ত করে চার্জশীট রিপোর্ট আদালতে প্রেরণ করে।
মূলত এরপর থেকেই শুরু হয় নিহত খাদেমের পরিবারের উপর নির্যাতন ও নানান মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি। পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন ও হয়রানি মূলক একটি মিথ্যা মামলাও করা হয়। মিথ্যা মামলার ভয়ে বাদী আজিম উদ্দীন বর্তমানে দেশ ছেড়ে কাতারে অবস্থান করছে। ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাইতে দেশে ফিরতে চাইলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে এবং প্রশাসনের দ্বিমুখী আচরণে তিনি আসতে পারছেনা।
মামলার বাদি আজিম উদ্দীনের অপর ভাই ইকবাল সৌদি আরব থেকে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রায় প্রতিদিন তার গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে অস্ত্র উচিয়ে সন্ত্রাসীরা মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। বলে আসছে যদি মামলা প্রত্যাহার করা না হয় তবে তার বাচ্ছাদের অপহরণ এমনকি হত্যার হুমকিও দেয় তারা। সন্ত্রাসীদের অপহরণ ও হত্যার ভয়ে ইকবাল সম্প্রতি তার বাচ্চাদের সৌদি আরব নিয়ে যায়। কিন্তু এতেও ক্রান্ত হয়নি সন্ত্রাসীরা। মামলা প্রত্যাহার করার জন্য এখনো বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে ফাঁকা গুলি করে সন্ত্রাসীরা ইকবালের বৃদ্ধা মাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। একইসাথে নিহতের পরিবারের বসতবাড়ি দখলে নেওয়ার পায়তারা করছে। এছাড়াও দেশে অবস্থানরত বাদির ছোট ভাই বাবলুকে বিভিন্ন হয়রাণি মূলক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসছে।
সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর বাদি আজিম উদ্দীনের ছোট ভাই আদালতে বিচারাধীন মামলার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আদালতে দেখিয়ে ফেরার পথে সন্ধ্যায় চকবাজার অলি খাঁ মসজিদের সামনে পথরোধ করে শহিদুল ইসলাম ওরপে লেঙ্গা খোকন ও জসীম। তারা বাবলুকে বলে রাঙ্গুনীয়া থানা থেকে দেয়া চার্জশীটে কেন নারাজী দিয়েছি, কেন মামলা নিয়ে বাড়াবাড়ি করছি। হুমকি দিয়ে বলে পরিণাম ভাল হবে না।মিথ্যা মামলা দিয়ে তোর দুই ভাই আজিম ও নাজিমকে দেশ ছাড়া করেছি। এছাড়া ভাইয়ের মতো তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলার হুমকি প্রদান করে। পরে উকিলের সহায়তা নিয়ে চকবাজার থানায় হত্যার হুমকীর অভিযোগে সাধারণ ডায়েরী করেন ইকবালের ছোট ভাই জিয়া উদ্দিন বাবলু।
এর আগে এ ঘটনা স্থানীয় এমপিকে জানালে তিনি মামলা করার পরামর্শ দেন। কিন্ত ইকবাল প্রবাসে অবস্থান করায় মামলা করার সুযোগ হয়নি। প্রবাস থেকে মুঠোফোনে দেশের সচেতন সংবাদকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিহত জিল্লুর ভাই ইকবাল এ প্রতিবেদককে বলেন, সুষ্ঠু তদন্দের মাধ্যমে ভাইয়ের বিচার করে একটি অসহায় পরিবারকে সন্ত্রাসীদের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করা হউক।
ইকবাল ও তার পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তা হীনতায় ভূগছে জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে গেলে সন্ত্রাসীরা আমার ভাইয়ের মত আমাকেও হত্যা করে হবে। তাই আমি দেশে যেতে পারছিনা। এ হত্যা কান্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ছাড়াও সৌদি আরবও লেখক,সাংবাদিক মোস্তাফা জাহেদের নেতৃত্ব প্রতিবাদ ও সমাবেশ করা হয়।
ইকবাল দুঃখ করে আরো বলেন, আমাদের বড় অপরাধ আমরা ভাই হত্যার বিচার চেয়েছি। অতচ গ্রামের বাড়ি ছাড়াও রাঙ্গুনীয়া উপজেলার সামাজিক ভাবে অনেক কিছুই করেছি। সর্বস্থরের মানুষের জন্য করেছি। সমগ্র রাঙ্গুনিয়ায় ১৭০টি টিউবওয়েল, অসখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, গরিবের মেয়ের বিয়ে, বেকার ছেলেদের বিদেশে পাঠায়ে কর্মস্থান সৃষ্টি করেছি। এতকিছুর বিনিময়ে আমি পেয়েছি আমার ভাই জিল্লু ভান্ডারীর লাশটা!
ইকবাল বলেন, সাংবাদিকরা একটু দৃষ্টি দিলে ভাই হত্যার সঠিক বিচার পাবো। তার প্রমাণ আজকের ঘটনা। আজ সোমবার জিল্লুর হত্যা মামলার শুনানী ছিলো। মামলার অন্যতম আসামী খোকন বিভিন্ন কুট কৌশল অবলম্বন করে সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও সাংবাদিকের সহযোগীতায় আজ চট্টগ্রাম বিচারাধীন আদালতে তাকে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
উল্লেখ্য : গত বছরের ২১ জানুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া উপজেলার রানীর হাট বাজারে গুলি করে হত্যা করা হয় মাজারের খাদেম ফকির জিল্লুর রহমান (৪৫) কে। তিনি গাউসুল আযম মাইজভান্ডার মাজারের খাদেম ছিলেন। মাজারের জন্য গরু কিনতে যাওয়ার পথে তাকে হত্যা করে দেড় লাখ ছিনিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। নিহত জিল্লুর রহমান রাঙ্গুনীয়া ইসলামপুর সাহেবনগর এলাকার নুরুল আলম সওদাগরের ছেলে।
ঘটনার পরদিন রাতেই নিহতের ভাই আজিম উদ্দীন বাদী হয়ে রাঙ্গুনিয়া থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।থানায় টাকার বিনিময়ে চার্জশীট থেকে কয়েকজন আসামীকে বাদ দিলে পরবর্তীতে বাদী আদালতে নারাজী দেয়। এতে আদালত মামলার তদন্ত দেয় সিআইডতে। সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যার সাথে জড়িত ১৩ জনের নামসহ একটি চার্জশীট দাখিল করে। বর্তমানে মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে।
মামলায় অভিযুক্ত আসামীরা হলেন, শহিদুল ইসলাম ওরপে লেঙ্গা খোকন, ইসমাইল ওরপে পিস্তল ইসমাইল যিনি খুন করে বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছে। আবু ওরপে ধামা আবু’ আবুর ভাই সাইফুল, জসিম, নাজিম, আজিম, কামাল, টুকাই নাছের, তোতাইয়া, সিএনজি সুমন, রন্জু ও জাহাঙ্গীর।
ইসমাইল খুনের পরপরই কাতারে পালিয়ে যায়। মামলার প্রধান আসামী খোকন টাকার বিনিময়ে পুলিশের চার্জ শীট থেকে মুক্ত হলেও সিআইডির দেয়া প্রতিবেদনে আসামী হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তার সাথে আছেন একই মামলার আসামী ধামা আবু। বাকিদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ কিংবা সিআইডি।
রিপোর্ট : রাজীব প্রিন্স
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::