পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পে জনবল নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

উন্নয়ন প্রকল্প আর নিয়োগে ফের অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে। এবার টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের জন্য ২১টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন থাকলেও প্রকল্প ব্যবস্থাপকসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অনিয়ম করেই চলছে নিয়োগ প্রক্রিয়া।

গত ১৯ এপ্রিল এ নিয়োগের প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা ও ২০ এপ্রিল মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। এখন চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব পদে নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ১ জুলাই দরখাস্ত আহ্বান করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তবে প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জানান, সুনির্দিষ্ট কোন প্রার্থীর ব্যাপারে এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবশ্য এর আগেও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প আর নিয়োগে নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও নানান তদবীরে উৎরে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্প ব্যবস্থাপক পদসহ আরও কয়েকটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তভঙ্গ করে প্রার্থীদের ইন্টারভিউ কার্ড সরবরাহ, প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদেরও নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রকল্প ব্যবস্থাপক একটি পদের অনুকূলে ৯ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে নিয়োগ কমিটি যাচাই-বাছাই করে ৬ জনকে যোগ্য ঘোষণা দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ইন্টাভিউ কার্ড ইস্যু করে। এতে দেখা যায় রামবাদু ত্রিপুরা (স্টিভ) নামে একজন আবেদনকারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী ১০ বছরের কম অভিজ্ঞতার সনদ জমা দেন এবং অনার্স পাসের সনদ জমা দেননি। কিন্তু তাকে যোগ্য ঘোষণা করে ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করা হয়। একই পদে নিধি চাকমা নামে এক আবেদনকারী মাত্র ৫ বছরের অভিজ্ঞতার সনদ জমা দেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১০ বছরের অভিজ্ঞতার সনদ জমা দেওয়া শর্ত থাকলেও ওই প্রাথীকে যোগ্য বিবেচনা করে ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, নারী কোটা সংরক্ষণ না করে প্রকল্প ব্যবস্থাপক দুটি পদে দুজন পুরুষ প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অথচ একটি পদে লিখিত পরীক্ষায় দ্বিতীয়স্থান অধিকার করেছেন একজন মহিলা প্রার্থী। নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকায় তার নাম নেই।

এছাড়াও এ পদে নিয়োগ পাওয়ার চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকা একেএম রেজাউল হক যার বিরুদ্ধে সমাপ্ত হয়ে যাওয়া আইসিডিপি প্রকল্পে দায়িত্বপালনকালীন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে তিনি বিলাইছড়ি, কাউখালী ও মাটিরাঙ্গা উপজেলায় আইসিডিপি প্রকল্পের উপজেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক পদে দায়িত্বপালনকালীন সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন, পাড়া কর্মীদের সম্মানী ভাতা আত্মসাৎ, পাড়াকর্মী নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। এসব অপরাধের কারণে বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাকে ওইসব এলাকা থেকে বার বার প্রত্যাহার করেন। অদৃশ্য শক্তির কারণে সে ব্যক্তিকে আবারও টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের উচ্চ পদে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এছাড়া উপজেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক, প্রকল্প সমন্বয়ক ও সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক পদেও মেধাভিত্তিক নিয়োগ অনুসরণ না করে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও অভিযোগ আছে। এ অবস্থায় যোগ্য নিয়োগ প্রার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তারা এ বিষয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমদের কাছে আসেনি। তাছাড়া নিয়োগ প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আলাদা একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা এ বিষয়টি বেশি জানবেন’।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!