চট্টগ্রামে বাড়ছে মাদক/ আতংক কিশোর গ্যাংয়ের!

চট্টগ্রামে মাদকের দ্রুত বিস্তার ঘটছে। মাদক ব্যবসা ও সেবনকেন্দ্রিক হত্যাকাণ্ড বাড়ছে আশংকাজনক হারে। চলতি বছরে সাড়ে চারমাসে খুন হয়েছে অন্তত ৪৫। এ রমজানেই খুন হয়েছে ৯জন। এর আগে গত এক মাসে মাদকাসক্তের হাতে খুন হয়েছে ছয়জন।

অন্যদিকে, মাদককে ক্ষেন্দ্র করে নগরের কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বেড়ে গেছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এ কিশোর গ্যাং। হত্যাকাণ্ড ছাড়াও মাদকদ্রব্য সেবন এবং বিক্রিতে জড়িয়ে যাচ্ছে এসব কিশোর গ্যাংস্টারদের কেউ কেউ। কিশোর গ্যাংস্টারদের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

গত এক বছরের র‌্যাবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায় ১৭, ফেনী জেলায় ৮, কক্সবাজারে ২১ এবং বান্দরবানে ১।

এদিকে গত মাসে মাদকের প্রধান আস্তানা ‘বরিশাল কলোনি’ এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় তিন মাদক ব্যবসায়ী। র‌্যাবের সূত্র অনুযায়ী গত একবছরে নগরে মাদক বিরোধী ২৮৮ অভিযানে গ্রেফতার হয় ৫১৪ এবং বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ২৫।

পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, নগরের প্রায় ৫০০ জায়গায় মাদক বেচাকেনা হয়। এরমধ্যে বরিশাল কলোনি,কদমতলী বাস টার্মিনাল,পাহাড়তলী,টাইগারপাস মাদকের সবচেয়ে বড় বাজার। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা যেমন বেশি তেমন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেশি।এসব মাদকসেবীরাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তুচ্ছ কারণে খুন করছে।চলতি বছরে খুন হয়েছে প্রায় ৪৫। সর্বশেষ নগরের ডবলমুরিং থানাধীন হাজীপাড়া এলাকায় রাজু আহম্মেদ নামের একজন রিকশাচালককে হত্যা করে একদল কিশোর দল। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সবাই মাদকসেবী ছিল। মাদকসেবীরা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে খুন করছে।

র‌্যাব-৭ এর সহকারী পুলিশ সুপার মাশকুর রহমান বলেন,নগরের প্রতিদিনই ইয়াবা পাচার হচ্ছে আবার প্রতিদিনই ধরাও পড়ছে। তবে পাচারের তুলনায় জব্দ হচ্ছে কম। গত বছরের ৩ মে থেকে ১৪ মে পর্যন্ত র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ৪০৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এ ছাড়াও গাঁজা, ফেন্সিডিল,দেশি-বিদেশি মদ ও অস্ত্র উদ্ধার হয় ব্যাপক তবে তার সংখ্যা পাচারের চেয়ে কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, প্রশাসনের কড়াকড়ি আরোপের কারণে ইয়াবা পাচারকারীরা অভিনব কৌশলে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে ইয়াবা নিয়ে আসছে। পেটের অভ্যন্তরে, ডাবের মধ্যে, মোটরসাইকেল ও গাড়ির জ্বালানির ট্যাংক, কার্ভাডভ্যানের ভেতরে বিশেষ বাক্সে্ এমনকী পেঁয়াজ রসুন ও কুমড়ার মধ্যে লুকিয়ে নগরে আসছে ইয়াবা। এছাড়াও সম্প্রতি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাফ নদীতে মাছ ধরার ভান করে ওপারে গিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়,ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে নগরের শপিং মল,বাস স্টেশন,রেল স্টেশন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাদা পোশাকে র্যা বের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের নিমিত্তে তৎপর থাকবে।বিশেষ করে পতেঙ্গা এলাকায় সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির ফলে সেখানে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে বসে পড়ে মাদকসেবীদের আড্ডা।এ নিয়েও বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরের পুলিশ কমিশনার মো.মাহবুবর রহমান বলেন, ইয়াবা যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।আর মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন,আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে কিশোর অপরাধ। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য রাত আটটার পর বাইরে আড্ডায় পেলেই গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্যও পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিশোর অপরাধে জড়িতরা অধিকাংশই ১৪-২০ বছরের মধ্যে। এদের অভিভাবকরা সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী। আবার কেউ কেউ বিত্তশালীর ছেলে। তারা নিজেদের সন্তানদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না।এর ফলে তারা বেপরোয়া হয়ে পড়ছে।
এসব সন্তানেরাই মা-বাবার স্নেহ মমতার অভাবে, বাবা মার সাথে মানসিক বিচ্ছিন্নতার কারণে বিপথগামী হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞানী ড.অনুপম সেন বলেন, যে কোন নেশাদ্রব্য মানুষকে তাড়িত করে। এ সময় মানুষের উচিত অনুচিত বোধ থাকে না। সাদা মাথায় খুন করা আর মাদকাসক্ত হয়ে খুন করা বা কোন অপরাধ সংঘটিত করা এক বিষয় নয়।

তিনি আরও বলেন, একটি দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশও যদি মাদকাসক্ত হয় সে সংখ্যাটিও দেশের জন্য ভয়ানক হতে পারে।যা সমগ্র সমাজ কাঠামোকে নাড়িয়ে দেবে। আগে ছিলো গ্রামীণ সমাজ বর্তমানে আমরা নাগরিক সমাজে আছি। আগে বেশি ব্যবহৃত হতো ফেন্সিডিল এখন এসেছে ইয়াবা। মাদকে আসে অপরাধ,আর অপরাধ সহজেই সমাজকে আক্রান্ত করে।

সোশ্যাল কন্ট্রোল বা সামাজিক শৃংখলা বজায় রাখতে মাদক নির্মূল করা অত্যাবশক বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানী ড.অনুপম সেন।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!