জঙ্গী সংগঠন আইএসের হুমকির গোপন বার্তার দিনক্ষণকে গুরত্ব দিয়েই কঠোর নিরাপত্তার বলয় তৈরি করেছে চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তিনদিন ধরেই বেশ গোপনীয়তায় মাঠে রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ১৭ মে বিকেল থেকেই প্রকাশ্যে মাঠে নামে পুলিশ, র্যবসহ গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। শনিবার বৌদ্ধধর্ম অনুসারীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমাকে টার্গেট দিয়ে আইএসের এমন হুমকিকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান।
শুক্রবার বিকেল থেকেই নিরাপত্তা জোরদারের নগরের প্রতিটি মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সন্দেহজনক আবাসিক হোটেল, বাসা-বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তিনদিন আগ থেকে র্যব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে মাঠে তৎপর।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মাহবুবুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, যে কোন প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলায় সিএমপি প্রস্তুত রয়েছে। মাঠে কাজ করছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। থানা পুলিশতো আছেই। পাশাপাশি বিশেষায়িত বাহিনীগুলোও নিরাপত্তায় সক্রিয় রয়েছে। রাতেই সন্দেহজনক বাসা বাড়ি, মেস, হোটেলে তল্লাশি চালানো হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা জানান, বৌদ্ধ পূর্ণিমার আনুষ্ঠানিকতা নিরাপদ করতে পুলিশ বেশ প্রস্তুতি রেখেছে। আশাকরি কোন অশুভ শক্তি কোন সুযোগ নিতে পারবে না।
র্যপিড অ্যাকশন ব্যটালিয়ন (র্যব) সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাশকুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, তিনদিন আগ থেকে র্যাবের গোয়েন্দা দল বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর নিরাপত্তায় সক্রিয় আছে। শুক্রবার টহল দিয়েছে। শনিবার নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিরাপত্তায় মাঠে থাকছে র্যব।
সরেজমিনে দেখা যায়, চেকপোস্টের প্রত্যেক পুলিশ সদস্য বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট হেলমেটসহ সকল প্রকার নিরাপত্তাম‚লক ব্যবস্থা নিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের যাত্রীদের তল্লাশি করছে।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি-যুব-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়শান্ত বিকাশ বড়ুয়া বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতিতে আমরা নিরাপদ বোধ করছি। সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থা সক্রিয় আছে। তাদের সহায়তায় মন্দির এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
নন্দকানন বৌদ্ধ মন্দিরে পুঁজা দিতে আসা মিলন বড়ুয়া জানান, পুলিশ- র্যবের ব্যাপক তৎপরতায় কোন রকম ভয়ভীতি আমাদের মাঝে কাজ করছে না। আমরা আশাকরি নির্বিঘ্নে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারবো।
প্রসংগত, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে হামলার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বাংলা ভাষায় লেখা একটি পোস্টারকে ঘিরে সেই আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে। পোস্টারটিতে বাংলায় লেখা রয়েছে, ‘শিগগিরই আসছি, ইনশাআল্লাহ। এটি প্রকাশ করেছে আইএসের ‘টেলিগ্রাম নামের একটি মেসেজিং অ্যাপ।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাতে আইএসের ‘শিগগিরই আসছি, ইনশাআল্লাহ’লেখা ওই পোস্টারটি প্রকাশিত হয়। শনিবার (২৭ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া আইএসের ওই পোস্টারের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে সম্ভাব্য হামলার কথা জানায়। বাংলায় লেখা ওই পোস্টারে ‘আল মুরসালাত’ নামে আইএসের একটি শাখা সংগঠনের লোগো ছিল। শ্রীলংকায় ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার পর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ পোস্টারটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাও সক্রিয় হয়েছে।
এসএস