লাভের আশায় প্রাণের ঝুঁকি/ চট্টগ্রামের পথে পথে গ্যাস বেচাকেনার বিপজ্জনক ব্যবসা

নিয়মবহির্ভূত ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাভার্ডভ্যানে শতাধিক সিলিন্ডারভর্তি করে পথে পথে গ্যাস বিক্রি করছে চট্টগ্রামের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে ফিলিং স্টেশন না থাকায় বেশি লাভের আশায় ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি কাভার্ড ভ্যানে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ সিলিন্ডার জমানো থাকে। ৪৫ কেজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি বড় সিলিন্ডারের মাধ্যমে বাকিগুলোতে একটি মেশিনের সংযোগের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ গাড়িতে সিলিন্ডার বিক্রি হয়ে থাকে। সচরাচর রাত একটার পর থেকে গ্যাস বোতল পূর্ণ করা হয়। এরপর এসব গাড়ি উপজেলায় চলা সিএনজি অটোরিকশাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ হিসেবে গ্যাস বিক্রি করে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি এলাকায় গভীর রাতে কাভার্ডভ্যানে থাকা বোতলে গ্যাস ভর্তি করছে বাদশা মিয়া ফিলিং স্টেশনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মা ফিলিং স্টেশন নামের একটি পাম্প। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতার কারণে শুধু সীতাকুণ্ড মা ফাতেমা ফিলিং স্টেশনই নয়; কাপ্তাই রাস্তার মাথার সারোয়ার ফিলিং স্টেশন ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই, কুমিল্লায় কয়েকটি ফিলিং স্টেশনও একইভাবে কাভার্ডভ্যানের বোতল জমা করে যানবাহনে অবৈধভাবে গ্যাস ভর্তি করছে।

chittagong-covered-van-cng-gas-filling
চট্টগ্রামের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে কাভার্ডভ্যানে গ্যাস বিক্রির ব্যবসা

চট্টগ্রামের একটি বড় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এসব অবৈধ ব্যবসা। পেট্রোল পাম্পের মালিক, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চট্টগ্রামের জেলা-উপজেলায় ওই কাভার্ড ভ্যান থেকে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে সিএনজিচালিত যানগুলোতে।

অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রির কথা স্বীকার করে মা ফাতেমা ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মো. আকবর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন এসব অবৈধ কাজ আর করি না।’ বর্তমানে নিয়ম মেনে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে চট্টগ্রামের পটিয়া ছাড়া আর কোনো সিএনজি ফিলিং স্টেশন না থাকায় দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ কাভার্ড ভ্যান থেকে প্রকাশ্যে গ্যাস ভর্তি করছে চলাচলরত সিএনজি অটোরিকশাগুলো। এর ফলে যেকোন সময় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানুল হক। তিনি জানান, উপজেলা স্টেশনের সন্নিকটে ঘনবসতি হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস সরবরাহের কারণে প্রতিনিয়ত এলাকার ব্যবসায় ও জনবসতির মধ্যে আতংক বিরাজ করে। যে কোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।

মঙ্গলবার (১১ জুন) ভ্রাম্যমাণ কাভার্ড ভ্যান থেকে সিএনজি অটোরিকশায় গ্যাস ভর্তি করছিলেন চালক মিজানুর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কী করবো? বাধ্য হয়ে গ্যাস নিচ্ছি। পটিয়া ছাড়া এখানে কোন ফিলিং স্টেশন নেই। পটিয়ায় গ্যাসের জন্য গেলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এছাড়া রাস্তায় পুলিশের হয়রানি। তাই এখান থেকে গ্যাস নিয়ে যাই। টাকা একটু বেশি। ১০০ পয়েন্ট গ্যাসের দাম নিচ্ছে ২৬০ টাকা।’

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে মোট ৬৮টি ফিলিং স্টেশন পয়েন্ট রয়েছে। প্রতি বছর জরিপ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পাম্পগুলোর লাইসেন্স নবায়ন হয়। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নবায়ন, গ্যাস সিলিন্ডার সার্টিফিকেট ও মন্ত্রণালয়ের চলতি নিয়ম অনুসারে সিএনজি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ লাভ হলে তবেই মূলত লাইসেন্স নবায়ন করা করা হয়।

chittagong-covered-van-cng-gas-filling
গভীর রাতে বোতলে গ্যাস ভর্তি করা হচ্ছে সীতাকুণ্ডের মা ফিলিং স্টেশনে

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৬৮টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এক থেকে তিন বছর পর পর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। নবায়নকালে সিএনজি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদের প্রমাণপত্র, গ্যাস সিলিন্ডার সার্টিফিকেট পাওয়ার পর পাম্পগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়।

তিনি বলেন, মা ফাতেমা ফিলিং স্টেশনের অভিযোগের সত্যতা পেলে পাম্পের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও মার্কেটিং) সারোয়ার হোসেন বলেন, মা ফাতেমা ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে আরো কয়েকবার অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি করার অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!