মিরসরাইয়ের ঝর্ণাগুলো মৃত্যু কুপে পরিনত

প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা মিরসরাইয়ের র্ঝর্ণাগুলো এখন মৃত্যু কুপে পরিনত হয়েছে। প্রায় অর্ধডজন ঝর্ণায় প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রানহানী। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করছে অনেকেই। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও ঝর্ণাগুলোতে নেই প্রশাসনিক কোন নিয়ন্ত্রন। গত ৩ বছরে মিরসরাইয়ের ঝর্ণাগুলোতে অন্তত ৮ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।

মিরসরাইয়ের পাহাড়ী অঞ্চলে রুপসী, নাপিত্তাছড়া, খৈয়াছরা, মহামায়া সহ ছয়টি বড় ঝর্ণা রয়েছে। এর পাশাপাশি বাওয়াছরা, কমলদহ ছরা, সোনাইছরি ঝর্ণা, সহস্ত্রধারা সহ রয়েছে আরো অন্তত ডজনখানেক ঝর্ণা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের কারনে এসব ঝর্ণায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে পর্যটকরা। ঝর্ণায় গোসল করতে গিয়ে কিংবা পাহাড়ের চুড়া থেকে পড়ে প্রানহানীর ঘটনা আতঙ্কিত করে তুলেছে পর্যটকদের।

সর্বশেষ ২ এপ্রিল মঙ্গলবার খৈয়াছরা ঝর্ণার উপরের পাহাড় থেকে পা ফসকে পড়ে মারা যায় আশরাফ হোসেন (৩০) নামের এক যুবক। ফটিকছড়ি উপজেলার জাফরনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের ছেলে তাদের বাড়ীর ১১ জন সদস্যকে নিয়ে খৈয়াছরা ঝর্ণায় বেড়াতে এসেছিলেন । ঝর্ণার উপরে পাহাড় চুড়া থেকে পা ফসকে গিয়ে মারা যায় আশরাফ ।

১৭ জুলাই মহামায়া লেকে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয় শাহাদাত হোসেন (২২) নামে এক যুবক। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১৯ জুলাই পানিতে খুঁজে শাহদাতকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। তার বাড়ী মিরসরাই উপজেলার সদর ইউনিয়নে।

১৫ আগস্ট নয়দুয়ারিয়ার নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার কূপে ডুবে অনিমেষ দে (২৭) নামে এক পর্যটক নিহত হয়। সে চট্টগ্রামের ফকিটছড়ি উপজেলার নিরঞ্জন দে’র ছেলে।
২৪ আগস্ট দক্ষিণ ওয়াহেদপুর রূপসী ঝর্ণায় উপর থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায় সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবক। তার বাড়ি সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া এলাকায়।

১৫ জুলাই খৈয়াছরা ঝর্ণার সাতটি স্তরের ৫ম স্তরে উঠার পর স্থানীয় এক পর্যটক পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সময় তাকে ধরতে যায় ওয়াসিম আসগর। ওই পর্যটক সামান্য আঘাত পেলেও ওয়াসিম পাহাড়ের নিচে পড়ে যায়। এতে মারাত্বক আহত হয় সে।
এছাড়া নাপিত্তছরা ঝর্ণায় সাঁতার কাটার সময় চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন মামুন (২২) মৃত্যু হয়। সে ফেনী জেলার শৈর্শদী এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে।

বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি) সভাপতি মোঃ সরওয়ার উদ্দিন বলেন, আমরা পর্যটকদের জন্য সচেতনতা মূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেছি। খৈয়াছরা, সহস্ত্রধারা, নাপিত্তা ছরা, লবণাক্ষ ছরা, বাওয়া ছরা, কমলদহ ছরা, সোনাই ছরা ঝর্ণা এলাকায় নিরাপদে যাওয়ার জন্য ২০ জন ইকো গাইডকে নিয়োগ দিয়েছি। পর্যটকরা যদি ঝর্ণা এলাকায় যাওয়ার সময় ইকো গাইডদের সাথে নিয়ে যায় তাহলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, মুলত দায়িত্বহীনতা ও অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা বিপদনজক স্থানে না যেতে সতর্ক করে সাইনবোর্ড দিয়েছি। তারপরও পর্যটকরা সেসব স্থানে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। অনেকে ঝর্ণার উপরে উঠে সেলফি তুলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায়।

উপজেলা প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ইয়াছমিন আক্তার কাকলী বলেন, ঝর্ণা এলাকাগুলোতে যদি পর্যটন মন্ত্রণালয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে তাহলে প্রতিবছর কয়েককোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব। এখানে কোন নিরাপত্তা না থাকায় ইতমধ্যে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা পর্যটন এলাকগুলোতে বিপদনজক স্থান চিহ্নিত করে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শীঘ্রই সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দিবো।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!