এতোদিন এরাই বিআরটিএ কর্তাদের আশ্রয়ে থেকে গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে নগদে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। আজ বুধবার (২৯ মে) সকালে তাদেরকেই ‘দালাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সেখানে তৎপর হয়ে উঠেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিআরটিএ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের জেরেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই আচমকা তৎপরতা। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, এটি ছিল লোকদেখানো অভিযান। ফলে সকালের শুরুতে যতোটা ‘গর্জে’ অভিযানের শুরু হয়েছিল, দিনশেষে সেটি ততোটাই নিষ্ফলা অভিযানে রূপ নেয়। একটি আদালত সাতজনকে আটক করে ছয়জনকে শাস্তি দিলেও অপর দুটি আদালত আটজনকে আটক করে সবাইকে ছেড়ে দিয়েছেন।
২৯ মে বুধবার সকালে বিশেষ এই অভিযানে নামেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর সাতজনকে আটক করেন। এর মধ্যে ছয় জনকে কারাদণ্ডের আদেশ দেন। অপর দুই ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক ও সোহেল রানার আদালত আট জনকে আটক করেও ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, তিনটি আদালত যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে ১৫ জনকে আটক করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এর মধ্যে ৮ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিকদের এক নেতা বলেন, চসিকের এক কাউন্সিলরের নেতৃত্বেই বিআরটিএতে নৈরাজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই কাউন্সিলরের সহযোগিতায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শতাধিক দালালের একটি সিন্ডিকেট। বাড়তি টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে অনেক গাড়ির মালিক ও চালক। সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত থাকায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায় না কেউ। কিন্তু চট্টগ্রাম প্রতিদিন অনলাইনে বিআরটিএর ৩৫ কোটি টাকার সিএনজি স্ক্র্যাপ বাণিজ্য, ঘুষ লেনদেন চার শোরুমে, জামালের মোবাইলে যায় ‘ক্লিয়ারেন্স’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর টনক নড়ে সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, আজ ২৯ মে বুধবার সকাল থেকেই হাটহাজারী সড়কে নতুনপাড়া এলাকায় বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে বিশেষ অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। পৃথক পৃথক অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর, এসএম মনজুরুল হক ও সোহেল রানা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত এ সময় ২০ জন দালালকে বিভিন্ন গাড়ির ট্যাক্স টোকেন, রেজিষ্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাগজপত্রসহ আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে ছয় জনকে পাঁচ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর। কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মো. শাহ আলম, মো. জানে আলম, মো. খোরশেদ, মো. মহসিন চৌধুরী, মো. মুন্না, আবুল খায়ের।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযানে আমার আদালত সাতজনকে আটক করে। এর মধ্যে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ছয় জনকে পাঁচ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’