দুঃসহ যে স্মৃতি উপকূলকে কাঁদায় এখনও

ভয়াল ২৯ এপ্রিল আজ

২৮ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও অরক্ষিত উপকূল বেড়িবাঁধ। তলিয়ে গেছে অনেক সাইক্লোন শেল্টার, অবশিষ্ট শেল্টারগুলো মাদকসেবী ও মাস্তানদের আস্তানায় পরিণত

ভয়াল ২৯ এপ্রিল আজ। উপকূলের মানুষের জন্য আতঙ্কের একটি দিন। ওই স্মৃতিতে এখনো শিউরে উঠেন বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত লাখ লাখ উপকূলবাসী। ঘূর্ণিঝড়ে স্বজনহারাদের জন্য এই দিনটি বড়ই বেদনাময়। ভয়াল এই দিনে মারা যায় উপকূলের প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। প্রায় ২৮ বছর পূর্বে ১৯৯১ সালের এই দিনে মহাপ্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল উপকূলের ঘর-বাড়ি। প্রবল জোয়ারের আঘাতে বিধ্বস্থ হয় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া,পেকুয়া, মহেশখালী, চকরিয়াসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। দীর্ঘ ২৮ বছর পরেও পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি বেড়িবাঁধগুলো। উপকূলের স্বজন হারা মানুষগুলো এখনো ভুলতে পারেনি সেই দিনের কথা।

29-April-cyclone-Aowara

দেশের অন্যান্য এলাকার মতো পাহাড়-সাগরবেষ্টিত চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাও সেদিন ঝড় ও জলোচ্ছাসের কালো ছোবলে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছিল। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বাঁশখালী, পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ড, চকরিয়াসহ বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা। সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে চলা ঝড়ো বাতাসে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয় দেশের ১৫ জেলার প্রায় ২৫৭ টি ইউনিয়ন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

29-April-cyclone-Aowara

দীর্ঘ ২ যুগ পার হলেও এখনো উপকূলবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনো টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হয়নি। ১৯৯১ সালে ঘটে যাওয়া সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের স্মরণে এখনও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন উপকূল এলাকার জনগণ। আনোয়ারা-কর্ণফুলী ও বাঁশখালীতেই সেদিন কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়। সাগর পাড় থেকে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে সব বাড়িঘর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হয়। বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, ঘোর বর্ষাকালে জোয়ারের পানি ঠেকানোর নামে রিংবাঁধ নির্মাণ, মেরামত, সংস্কারসহ নানা নামে প্রতি বছরই নেয়া হয় বিভিন্ন প্রকল্প। কিন্তু এসব প্রকল্পে ঘটে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ নয় ছয় এর ঘটনা। বৃষ্টি হলেই ভেঙে যায় বাঁধের বেশিরভাগই অংশ। আবারো নতুন নতুন প্রকল্পের নামে নতুন বরাদ্দ।
এভাবেই বছরের পর বছর উপকূলীয় বাঁধের কাজের নামে চলে আসছে সরকারি অর্থের অপচয়।

আনোয়ারা রায়পুরের বাসিন্দা এনামুল হক এনাম অভিযোগ করে বলেন, গহিরায় এখনো প্রায় ১ কিলোমিটারের মত বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। যতটুকু নির্মাণ করা হয়েছে, তাও নিম্নমানের উপাদানে। বর্ষা মৌসুমে সাগরের পানিতে এবারও তলিয়ে যাবে আনোয়ারা উপকূল।

তিনি বলেন, অরক্ষিত বেড়িবাঁধের জন্য বানানো সিসি ব্লকগুলো নিম্নমানের উপাদানে তৈরি করায় সেগুলো বাঁধ নির্মাণের আগেই ভেঙ্গে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে বারবার এলাকাবাসি প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি।

তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চট্টগ্রাম পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী
প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানিয়েছেন, আনোয়ারায় অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কাজ চলছে। চলমান বর্ষা মৌসুমে কোনো ধরনের সমস্যা হবেনা।

এদিকে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও চকরিয়ার মাতামুহুরী এলাকায় এখনো অরক্ষিত রয়েছে বেড়িবাঁধ। এর মধ্যে পেকুয়া উপজেলার ৭
কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখনো অরক্ষিত রয়েছে। আর কুতুবদিয়ার প্রায় ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত। উভয় উপজেলায় ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ চললেও কাজের ধীরগতি, দূর্নীতি, বরাদ্দ লুটপাট ও নিম্নমানের কাজ নিয়ে অভিযোগও রয়েছে এন্তার।

কুতুবদিয়া বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক ও উত্তর ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় ১ কিলোমিটার
বেড়িবাঁধ অরক্ষিত। ঠিকাদার কাজ না করে পালিয়ে গেছে। সামনে বর্ষার মৌসুম। বেশ চিন্তায় আছি। তিনি বলেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে আমার ইউনিয়ন উত্তর ধূরুং ও উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয় জোয়ারের পানিতে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে উপকূলীয় বন বিভাগের ম্যানগ্রোভ বাগান এবং প্যারাবন ধ্বংস করছে দুর্বৃত্ত চক্র। এর ফলে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকায় এখনো ঝড়ো বাতাসে এক অজানা শঙ্কায় রাত কাটে উপকূলীয় এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রতি বছর মতো ঘরে-ঘরে মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি, দোয়া কামনা, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, আলোচনা সভা, র‌্যালিসহ বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি পালন করবে আনোয়ারা উপকূলীয়বাসী।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!