ছয় বছর ধরে চলছে তো চলছেই কালারপোল সেতুর কাজ
ঠিকাদারের একটি নৌকাই হাজার মানুষের ভরসা
কালারপোল আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সেতুর নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। কর্ণফুলী ও পটিয়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এ সেতু। প্রতিদিন নৌকা দিয়ে পারাপার করছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।
দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি নির্মাণ কাজ চলমান থাকার পরেও এখনো শেষ না হওয়ায় পশ্চিম পটিয়ার চাপঁড়া, মোহাম্মদনগর, কোলাগাঁও মুন্সিরহাট, লাখেরা, পাচুরিয়াসহ কয়েকটি এলাকার জনসাধারণের প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামসহ শহরগামী পাশাপাশি কর্ণফুলীসংলগ্ন উপজেলাগুলোতে যাতায়াতে ভোগান্তির কমতি নেই। প্রতিদিন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও কয়েক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
সওজ সূত্রে জানা যায়, সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর নতুনভাবে সেতু নির্মাণের জন্য প্রথমবার ২২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সেতু মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করে কাজ চলাকালীন কাজ বন্ধ করে চলে যায়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালে এটি ২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় নতুনভাবে বরাদ্দ দেয় সেতু মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে সেতুটি উদ্বোধন করেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালারপোল সেতুটি ১৯৯৫ সালে নির্মিত হয়। এটি ২০০৭ সালের ১৮ নভেম্বর এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের টিনের কয়েল বোঝাইকারী বার্জ এমভি সানলাইট কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় সেতুটির তৃতীয় ও চতুর্থ স্প্যানটি নদীতে নিমজ্জিত হয়। সেতুটির কাজের উদ্বোধন হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একটি পুরাতন স্প্যানের ওপর সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য একটি বেইলি ব্রিজ তৈরি করে দেয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বছর দুয়েক সেতুটির কাজ করার পর তাদের প্রতিষ্ঠানের লোকসান দেখিয়ে কাজ ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদে ২৭ কোটি টাকায় বরাদ্দ দেয় সেতু মন্ত্রণালয়। দেড় বছর আগে নতুনভাবে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে আরেকটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
এভাবে দীর্ঘসময় ধরে ধীরগতিতে চলছে নির্মাণকাজ। এখনো পর্যন্ত পাঁচটি পিলারে কাজ শেষ হলেও বাকি রয়েছে অন্যান্য কাজ। বর্তমানে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিজেদের অর্থায়নে পারাপারের জন্য একটি বোটের ব্যবস্থা রেখেছে। সেতুটি একমাত্র ভরসা হওয়ায় এ সেতু দিয়ে যাতায়াতে ভোগান্তির কমতি নেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের। এতে প্রতিদিন নদীর দুই পাড়ের এলাকাবাসীর দুর্ভোগ ছাড়াও কালারপোল লাখেরা উচ্চ বিদ্যালয়, কালারপোল হাজী ওমরা মিয়া চৌধুরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কালারপোল অহিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, এ.জে চৌধুরী স্কুল এন্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর কষ্টের শেষ নেই। এছাড়া ব্রিজের উভয় পাশে গড়ে উঠা শিল্পকারখানা ও আশেপাশের লবণ ফ্যাক্টরির প্রায় শতাধিক পোল্ট্রি ও ডেইরি ফার্মের শ্রমিক ও যানবাহনগুলোও যাতায়াত করে এই সেতুর ওপর দিয়ে। সেতুটির নির্মাণকাজ এখনও শেষ না হওয়ায় তাদের কষ্টের সীমা নেই।
কলেজ শিক্ষার্থী নাহিদা সোলতান প্রমী বলেন, প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে একঘন্টা আগে বের হতে হয়। কেননা ঘাটে একটি বোট রয়েছে। মানুষ বেশি হওয়ায় অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। জানি না এ কষ্ট কবে শেষ হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইমতিয়াজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। প্রতিনিয়ত নদী পারাপারে দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের। কর্তৃপক্ষ দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করলে দুই উপজেলার মানুষ উপকৃত হবে।
স্থানীয় নৌকা মাঝি সুজন আলী বলেন, ঠিকাদারের অধীনে একটি নৌকা দিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে জনসাধারণকে বিনামূল্যে পারাপার করছি। আমাদের বেতন ও নৌকা ভাড়া ঠিকাদাররা দেয়।
দোহাজারী সওজ’র বিভাগীয় প্রকৌশলী জাহেদ হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে এটি ২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় নতুনভাবে বরাদ্দ দেয় সেতু মন্ত্রাণালয়। এরপর থেকে নতুন ঠিকাদার কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৪৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই নির্মাণকাজ শেষ হবে।