চসিকের সেই কাউন্সিলর থেকে মুক্ত হলো হেফাজতের মসজিদ-মাদ্রাসা

মসজিদে এলাকাবাসীর শুকরিয়া আদায়

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মত্যুকে কেন্দ্র করে নগরীর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওমর ফারুক আল ইসলামিয়া মসজিদ ও মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আহমেদ বাবুনগরীর উপস্থিতিতে জুমার নামাজ আদায় করেন ওই এলাকার জনগণ এবং হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
হেফাজত মহাসচিব মাদ্রাসা নিয়ে সৃষ্ট হওয়া ঘটনাকে ভুল বোঝাবুঝি উল্লেখ করে বলেন, যারা মোহাম্মদ রাসুল্লাহ (স.) এর অনুসারি তাদের মধ্যে কোন রকমের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। ঈদের পরেই মাদ্রাসার কার্যক্রম পুরনায় চালু হবে।

শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে জুমার নামাজের সময় ওই মাদরাসায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নামাজের সময় মসজিদের ভেতর এবং বাইরে অবস্থান নেয় ১৭ জন পুলিশ সদস্য। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার অনুসারীদের হাত থেকে ধর্মীয় স্থাপনা দখলমুক্ত হওয়ায় শুকরিয়া আদায় করেছেন স্থানীয়রা।

জুমার নামাজের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, কারো বিরুদ্ধে আমাদের কোন ক্ষোভ নেই। মুসলমানরা সবাই ভাই ভাই। একজন ছাত্র মারা যাওয়ার ঘটনাকে নিয়ে যা হয়েছে তা ভুল বোঝাবুঝি। আমরা সকলে মিলেমিশে এখানে থাকবো। এই মাদ্রাসা আপনাদের। এই মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সকলের সহযোগীতার প্রয়োজন। মাদ্রাসা ও এবং মসজিদ নিয়ে আমাদের সকলের মুরব্বি হেফাজতে ইসলামীর আমীর আল্লামা শফী হুজুর অনেক দোয়া করেছেন।

জুম্মার নামাজের খুতবার পরে একাধিক ফেহাজতে ইসলামী নেতা বক্তব্য রাখেন। সবার বক্তব্যে একই কথা ফুটে উঠে। একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানটিতে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম হয়। একটি পক্ষ এটিকে ইস্যু করে মাদ্রাসা ও মসজিদ দখল করে নেয়। পরবর্তীতে প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগীতায় সেই ঘটনার অবসান হয়েছে।

জুমার নামাজ শেষে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকারে হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েব বাবুনগরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, যে শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে সে ঘটনায় মামলা চলমান রয়েছে। এই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনা। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা ও মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া কিংবা দখল করে নেওয়া উচিৎ হয়নি। তারপরও আল্লাহর রহমতে সকল সমস্যার সমাধান হয়েছে। ঈদুল ফিতরের পর পুনরায় মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হবে।

জুম্মার নামাজ আদয় করতে আসা হাজহাজারী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এলাকাবাসী, প্রশাসন এবং সরকারের সহযোগিতায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জুনায়েদ বাবুনগরী হুজুরের উপস্থিতিতে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। আশা করছি পূর্বের ন্যায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি তার সকল কার্যক্রম চালু করতে সক্ষম হবে।

প্রসঙ্গত, ‘ওমর ফারুক আল ইসলামিয়া মাদরাসার এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ মাদ্রাসাটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। মারধর করা হয় শিক্ষকদের। ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান থাকলেও একটি পক্ষ মাদ্রাসার দখলে নেয়। এ ঘটনায় স্থানীয় কাউন্সিলর কফিল উদ্দিনের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা কাতার প্রবাসী শিল্পপতি ওমর ফারুক। তিনি গত ১০ মে রাতে কাতারের আল আতিয়ায় নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১০ এপ্রিল ওই প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কাউন্সিলর কফিল উদ্দীন তার কাছে চাঁদা দাবী করেন।

বায়োজিদ বোস্তামি থানার এসআই সাইফুল ইসলাম খান বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৫ জন সদস্য এবং বায়োজিদ বোস্তামি থানার দুই জনসহ মোট ১৭ জন পুলিশ মসজিদের নামাজ পড়া অবস্থায় নিরাপত্তার দায়িত্বপালন করে। দায়িত্বরত সময়ে আমরা কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আভাস খুঁজে পাইনি।

মসজিদ ও মাদরাসা দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে চসিকের কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বরং সম্পত্তি রক্ষা করে প্রশাসনের সহায়তায় তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৬ মে) চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘চসিক কাউন্সিলর কফিলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্থাপনা দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ’ নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশের পর প্রশাসনে সহযোগিতায় ওমর ফারুক আল ইসলামিয়া মসজিদ ও মাদরাসাটির কার্যক্রম পুরনায় চালু হয়।

এসসি/সিএম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!