ঈদকে সামনে রেখে রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল ইকোপার্ক সেজেছে প্রকৃতির অপরূপ সাজে। সবুজ পাহাড়ঘেরা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরা পার্কটি বিনোদনপ্রেমীদের আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পার্কটির বিভিন্ন ইভেন্ট রং করা, বাড়তি আলোকসজ্জা, ছোটখাটো ত্রুটি ঠিক করা হয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও শেষ হয়েছে। এছাড়া নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
পর্যটকদের কাছে টানতে আধুনিক অবকাঠামো দিয়ে সাজানো হয়েছে পার্কটি। প্রায় ৩০ হাজার পর্যটককে আনন্দ দিতে প্রস্তুত রয়েছে এ ষ্পট। বৃক্ষাচ্ছাদিত সবুজ এই পাহাড়ি বন-বাদারে শত শত পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। পাখিদের কলতানে মুখরিত হয় সবুজ বন। আর মাথার সিঁথির মতো এ বনের ফাঁক দিয়ে বয়ে চলা পথে ঘুরে বেড়াতে কতো যে আনন্দ তার কোনো সীমা নেই। পাখিদের অভয়ারণ্যের পাশাপাশি ভ্রমণ বিলাসিদের বিনোদনের জন্যে উন্মুক্ত এ পার্কটি।
বিনোদনের স্পটটিতে দেশের দীর্ঘতম ক্যাবল কারে করে কৃত্রিম লেকের উপর ঘুরে বেড়ানো যায়। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো যা বিনোদন প্রেমিদের বাড়তি আনন্দ দেবে। চারিদিকে সবুজ ঘন গাছপালা। স্বপরিবার কিংবা প্রিয়জনকে সঙ্গী করে প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে আনন্দটা আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এ বিনোদন কেন্দ্রের পাশেই রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিল। তার ১ কিলোমিটার পূর্বে গেলে কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক, জুম রেস্তোরাঁ, বনশ্রী পর্যটন, নেভী পার্ক ও সর্বশেষ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১০ সালে উপজেলার চন্দ্রঘোনার সীমান্তে কাপ্তাইয়ের প্রবেশদ্বারে গড়ে উঠে এ শেখ রাসেল এ্যাভিয়োরি ইকো পার্কটি।
পার্কটি বাংলাদেশের একমাত্র পাখিশালা। এই পক্ষিশালায় যোগ হয়েছে দেশি প্রজাতির পাখির পাশাপাশি আফ্রিকার পলিক্যান, ইলেকট্রাস প্যারট, সোয়ান, রিং ন্যাক, মেকাউ, টার্কি। পার্কে ক্যাবল কার স্থাপন হওয়ায় দেশের মানুষের বিনোদন জগতে নতুন মাইলফলক রচিত হয়েছে। পার্কের অভ্যন্তরে সড়ক, লেক, রিটার্নিং ওয়াল, গেস্ট হাউজ, ফুট ব্রিজ, গুহা, পাখি, ময়ূর ও হরিণসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পাখি বিচরণের খাঁচা, এ্যামিউজমেন্ট, গোলঘর, দোলনা, স্লিপিং রয়েছে। আম, জাম, বহেরা, ডুমুর, জামরুল, আমলকি, হরিতকি, চাপালিশ, সোনালু ডাকিজাম তেতুলসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির দেশীয় ও বনজ জাতের ফলের চারা রোপণের মাধ্যমে পাখীখাদ্য উৎপাদনে সমৃদ্ধ করা হয়েছে পক্ষীশালাকে। পার্কে এক ধরনের বিশেষ নেট দিয়ে পুরো ৫২০ একর পাহাড়ি ভূমির অনেক উঁচুতে উপরিভাগ ঘিরে দেওয়া হয়। ভেতরে গড়ে তোলা হয় শত শত প্রজাতির পাখিদের অভয়ারণ্য। আর এতেই পক্ষীকূল ফিরে পায় নিরাপদ আবাসস্থল।
পার্কে গিয়ে দেখা যায় ঈদকে সামনে রেখে নতুন সাজে সাজ সাজ রব। কৃত্রিম লেকের চারিপাশে আলোকসজ্জা করে পর্যটকদের কাছে টানতে বাড়তি আয়োজন সম্পন্ন করেছে।
ঈদে বিনোদন প্রেমীরা যেতে চাইলে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক পথে চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র এক ঘন্টার সময়ে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনায় নতুন এই বিনোদন স্পটে পৌঁছে যাবেন অনায়াসে।
রাঙ্গুনিয়া শেখ রাসেল ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মোজাম্মল শাহ বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বিনোদন প্রেমিদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া জন্য। প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের যথাযথভাবে নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা দিতে। তাছাড়া আরও অবকাঠামোগত উন্নয়নের অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে আলোকিত হবে পার্কটি।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন , বিশাল পাহাড়ি এলাকাজুড়ে অবস্থিত শেখ রাসেল ইকোপার্কটি সত্যিই সবাইকে আকৃষ্ট করে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসু লোকজন ছুটে আসে এখানে। সে সব আগত পর্যটকদের যাতে কোন সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসন সবসময় সক্রিয় রয়েছে।
আরএইচ/এএইচ