আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত

আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত 1সাত্তার সিকদার, লোহাগাড়া : “আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত” মনের মধ্যে সৎ সাহস না থাকলে এবং নিজে দুর্নীতিমুক্ত ও সৎ কর্মকর্তা না হলে এভাবে কেউ বলতে পারেননা, যেটা চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুব আলম  শুধু বলেননি করেও দেখাচ্ছেন । অফিসের বিভিন্ন জায়গায় টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত সাইনবোর্ডটি, শুধুমাত্র সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ক্রান্ত হননি অনেকটা দালাল ও তদবিরবাজ মুক্ত করেছেন লোহাগাড়া উপজেলা কম্পাউন্ডকে। কোন কাজে দিতে হয়না ঘুষ, বিচার প্রার্থীদের গুনতে হয়না অপেক্ষার প্রহর, মনযোগ সহকারে অভিযোগ শোনার পর সাথে সাথে ব্যাবস্থা নিচ্ছেন অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নির্দেশ দিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছেন উনার অধীনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এছাড়াও নির্দেশনা দিয়েছেন কোন অফিসে সেবা প্রার্থীদের কোনরূপ ঘুষ ছাড়া সেবা দিতে, অন্যথায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

১৮ই অক্টোবর দুপুর ৩টা লোকে গিজগিজ করছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনযোগ সহকারে অভিযোগ শুনছেন এবং সংশ্লিষ্ট কাগজের ফাইল দেখছেন, উনার চারপাশে জনা চল্লিশেক লোক, একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা ও দুইজন পুরুষ তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরছেন ২০ মিনিটের মধ্যে বিষয়টির মিমাংশা হল এবং উভয়পক্ষ হাসিমুখে অফিসকক্ষ ত্যাগ করল, এভাবেই একে একে প্রায় ১০/১৫টি বিষয়ের শুনানী ও সমাধান হল।

২০১৭ সালের ১৮ই এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় যোগদান করেন মোহাম্মদ মাহবুব আলম, যোগদানের পর থেকেই তিনি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন লোহাগাড়া বাসীকে ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত পরিবেশে সব ধরনের সেবা প্রদান করতে, সেটা করতে গিয়ে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন কিন্তু দমে যাননি।

মোহাম্মদ মাহবুব আলম চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার লক্ষীপুরের খাজুরিয়া গ্রামের মোঃ আবুল হাশেম ও হোসনে আরা বেগমের সন্তান।

শিক্ষাজীবনে চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমী থেকে ২০০০ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন, ঢাকা কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেন ২৯ তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা।

২৯ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি ফরিদপুর জেলা কমিশনার কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, এরপরে তিনি সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় কর্মরত ছিলেন, ২০১৭ সালের ১৮ই এপ্রিল তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় যোগদান করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে মোহাম্মদ মাহবুব আলম বিবাহীত এবং আহমেদ রেজা নামের ২ বছর বয়সী এক সন্তানের জনক।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এই ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি তাই দেশের কেউ কোন ধরনের ভাল কাজ করলে গর্বে আমাদের বুক ভরে যায়, ইউএনও মাহবুব আলম যোগদানের পর থেকেই ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত থাকার পাশাপাশি নিষ্টার মাধ্যমে আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, আমি বিশ্বাস করি এই ধরণের কর্মকান্ডের মাধ্যমেই বিশ্বের বুকে মাথাউচু করে পরিচিতি পাবে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

পুটিবিলা মহাবোধি বিহারের ধর্মগুরু শ্রী তাপস জ্যোতি ভিক্ষু বলেন আমরা আনন্দিত উনার মত একজন সৎ ও নিষ্টাবান কর্মকর্তাকে ইউএনও হিসেবে পেয়েছি, উনি যোগদানের পর থেকেই প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন লোহাগাড়াবাসীকে সেবা দিতে, আমরা বিশ্বাস করি এভাবেই বদলে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ।

সাংবাদিক আবদুল আউয়াল জনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্মকান্ড সত্যি প্রশংসনীয়, তিনি ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত থাকার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলেছেন সকল অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করতে, তিনি যোগদানের পর থেকে উপজেলাকে দালাল ও তদবীরবাজ মুক্ত করতে সফল হয়েছেন, এসব করতে গিয়ে তিনি অনেক অদৃশ্য বাধার স্বীকার হয়েছেন, অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন কিন্তু দমে যাননী ফলে সেবাগ্রহীতারা কোনরুপ হয়রানী ছাড়া দ্রুত সেবা পাচ্ছে।

লোহাগাড়া বিজ্ঞান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক  অধ্যাপক মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার  দুর্নীতি বিরুদ্ধে এ কার্যক্রম ইতিমধ্যেই সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত সাইনবোর্ডটির বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, আমাদের সকলের উচিৎ ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে অঙ্গিকারাবদ্ধ হওয়া, পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে মনথেকে চাইলে সবই সম্ভব, আমার কাজ সেবা প্রদান করা সেটা করতে গিয়ে কেন আমাকে ঘুষ নিতে হবে? কেন দুর্নীতি করতে হবে? আমাকে সরকার বেতন দেয়, গাড়ি দিয়েছে, বাংলো দিয়েছে, নানাবিধ সুবিধা দিয়েছে এরপরও কেন দুর্নীতি করব? আমি দুর্নীতি করবনা, মানবনা, সইবনা, প্রশ্রয় দেবনা এটাই আমার প্রতিদিনের কর্মপন্থা, যতদিন আছি এভাবেই থাকব।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!