এইচএসসি/ সবজি ব্যবসায়ীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলের জিপিএ-৫!

সাতকানিয়ার সবজি আড়তদার আইয়ুব খান ও ফারজানা বেগম দম্পতির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বড় সন্তান শাকিল খান। পাঁচ বছর বয়স থেকেই চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে আসছিল তার। স্থানীয় একটি হেফজখানায় ভর্তি হয়ে পবিত্র কোরআনের প্রায় অর্ধেক হেফজ (মুখস্থ) করতেও সক্ষম হয়েছিলেন। একসময়ে এসে দৃষ্টিশক্তি আর সমর্থন করেনি শাকিলকে। হেফজখানা ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরস্থ সরকারি দৃষ্টি ও বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে। নিয়তি তার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিলেও মেধার স্বাক্ষর রাখলেন তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষায়।

চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার আলো ছড়াতে চাই’—চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে ব্যক্ত করলেন তার স্বপ্নের কথা।

শাকিলের অপর ভাই পড়ছেন যন্ত্রকৌশলে ডিপ্লোমা, আর একমাত্র বোনও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়া শাকিলের স্কুলেই পড়ছেন। শাকিল রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছিলেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুরত আলম মেধাবী ক্রীড়াবিদও। জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার এবং দাবাড়ু হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। হাজেরা তজু ডিগ্রী কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে ৩.৮৩ পেয়েছেন। এসএসসিতে পেয়েছিলেন ৪.৩২। তিনি জানালেন, স্বাভাবিক পরীক্ষার্থীরা নিজে লিখে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন। আমরা শ্রুতিলিখক নির্ভর। তাই বোঝাপড়ার একটা বিষয় থাকে। তাছাড়া এবার পরীক্ষা চলাকালে আমার শ্রুতি লিখক শাহনাজ আপু অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থতা নিয়েও তিনি অনেক কষ্ট করে পরীক্ষার সময় আমার পাশে ছিলেন।

শাকিল ও সুরতের মতো ভিন্ন ভিন্ন গল্প আছে তানভীর, হিমেল, ইয়াসমিন, আরাফাতদের। তারা শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করে যেতে চান অনেক দূর। চান স্বাভাবিক অন্য দশজনের মতো বাঁচতে। এবার বিভিন্ন কলেজ থেকে এরকম ১০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আটজন কৃতকার্য হন। এর মধ্যে শাকিল খান জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

কুমিল্লা লাকসামের মৃত শাহ আলম চৌধুরীর ছেলে তানভীর চৌধুরী। এসএসসিতে পেয়েছিলেন জিপিএ-৪.৫০। এবার বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন ৩.৩৬। দৃষ্টিশক্তিহীন তানভীরের লড়াইটা আরো কঠিন। ঘাতক ক্যানসার বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। নিতে হয়েছিল কেমোথেরাপিও। তবুও তানভীর স্বপ্ন দেখছে বড় হয়ে সমাজের মানুষের সেবা করার।

কৃতকার্য হওয়া আট জনের একজন নারী। তিনি নগরীর বাকলিয়া কালামিয়া বাজার এলাকার মুস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার। ভবিষ্যতে সমাজের অবহেলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

সরকারি দৃষ্টি ও বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও ব্রেইল প্রশিক্ষক আবদুস সামাদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী। তারা সরকারের দেওয়া নানান সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে সুস্থ-স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতোই রেজাল্ট করছে। গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, লেখালেখির কারণে সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন। প্রতিবন্ধীরা এখন আর সমাজে বোঝা নয়।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!