সবখানেই জিপিএ-৫/ অন্ধত্ব জয় করে রাফির অদম্য পথচলা

তিন বছর বয়সে খেলতে গিয়ে চোখে চুন পড়ে দৃষ্টি হারায় পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের সাইফুদ্দিন রাফি। তখন থেকেই অন্ধত্বকে সঙ্গী করে পথচলা শুরু রাফির। চোখের দৃষ্টি হারালেও শিক্ষাজীবনে তেমন একটা বাধা হতে পারেনি রাফির অদম্য পথচলায়।

অন্ধত্বকে সঙ্গী করেই শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে সাফল্য পেয়েছে সে। বরাবরের মতোই এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে রাফি। শুধু এইচএসসিতে নয় এর আগে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছিল মেধাবী রাফি।

পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের মৃত মাস্টার আজহার উদ্দিনের একমাত্র ছেলে মো. সাইফুদ্দিন রাফি। পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে সে এইচএসসিতে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের মুকুট ছিনিয়ে নেয়। পরিবারের দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রাফি সবার ছোট। বাবা মারা যাওয়ায় পর মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসারের হাল ধরেন স্কুল শিক্ষিকা বড় বোন আঁখি। চালিয়ে নেন অধম্য ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচও।

রাফির বড় বোন স্কুল শিক্ষিকা আঁখি বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর রাফিকে পড়ালেখা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। সে কোনো দিন ক্লাস মিস করেনি। আমার ভাইয়ের এই ফলাফলে আমরা খুবই গর্বিত ও আনন্দিত। আজ আমার শিক্ষক বাবা বেঁচে থাকলে তিনি অনেক খুশি হতেন। আমি চাই অন্ধত্বের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে রাফি অনেক দূর এগিয়ে যাক।

তিনি আরও বলেন, মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক কঠিন। রাফি অন্ধত্বকে জয় করে করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে অসাধারণ সাফল্য।

পটিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, রাফির এই ফলাফলে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশুনার জন্য আমাদের কলেজে ব্রেইল বইয়ের সংকট আছে। তারপরও রাফি খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করতো। তবে সে সবসময় ক্লাসে উপস্থিত থাকতো। যার ফলে ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছে।

নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রাফি বলেন, বাবা স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দুই বছর আগে তিনি মারা যান। এরপর থেকে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি। বাবা বেঁচে থাকতে তাঁর সঙ্গে স্কুলে যেতাম। মারা যাওয়ার পর বন্ধুরা আমাকে কলেজে নিয়ে যেতো। এ সাফল্যের জন্য আমি বাবা, বড় বোন, কলেজ শিক্ষক ও বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে আমি পড়ালেখা করে ইংরেজির লেকচারার হতে চাই। তবে এর আগে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!