চট্টগ্রামে চার বিষয়ের ফল খারাপে কমেছে জিপিএ-৫, পরিচর্যায় বেড়েছে পাসের হার

এসএসসির ফলাফল বিশ্লেষণ

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় পাসের হার বাড়লেও এবার কমেছে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা। গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ১১ শতাংশ হলেও এবার সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে গত বছর ৮ হাজার ৯৪ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৩৯৩ জন শিক্ষার্থী। সামগ্রিকভাবে পাসের হার ২ দশমিক ৬১ শতাংশ বাড়লেও ৭০১ পরীক্ষার্থী এবার জিপিএ কম পেয়েছে।

এর কারণ হিসেবে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, তুলনামূলকভাবে চার বিষয়ে ফলাফল খারাপ করায় জিপিএ-৫ এর হার কমেছে। এমনকি এ কারণে গতবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে মহানগরীর স্কুলগুলোর ফলাফল তিন পার্বত্য অঞ্চল, কক্সবাজার ও জেলার চেয়ে ভালো হলেও এবার পাসের হারের দিক থেকে কমেছে শূণ্য দশমিক ৮৪ ভাগ।

খারাপ বেশি চার বিষয়ে

পরীক্ষার্থীরা যে চার বিষয়ে খারাপ ফল করেছে বিষয়গুলো হল, বাংলা, গণিত, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের আবশ্যকীয় বিষয় সাধারণ বিজ্ঞান। এই চারটি বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ না পাওয়ায় জিপিএ-৫ ও সামগ্রিক ফলাফল গতবারের চেয়ে খারাপ হয়েছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণক মাহবুব হাসান।

এ বছর সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ কমেছে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে। এ বিভাগে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১২ জন ; আর গতবছর পেয়েছিল ৭৮৩ জন। একইভাবে কমেছে বিজ্ঞান বিভাগেও। গতবছর যেখানে ৭ হাজার ২৮৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল সেখানে এবছর পেয়েছে ৬ হাজার ৯৫৪ জন। মানবিকে গতবছর ছিল জিপিএ ২৬ জন পেলেও এবার বেড়ে ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ

এদিকে বিষয়ভিত্তিক হিসেবে গত বছর বাংলায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা যেখানে ১০ হাজার ২২৯ ছিল সেখানে এবার পেয়েছে ৬ হাজার ৫১৮ জন পরীক্ষার্থী। একইভাবে গণিতে ১৩ হাজার ৭৮৭ জিপিএ-৫ পেলেও এবার সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭১২ পরীক্ষার্থী। গতবার সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬ হাজার ২৩০ জন। এবার সেটা কমে হয়েছে ৪ হাজার ৭৩১ জন। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে গতবার ৩ হাজার ১১২ জন জিপিএ-৫ পেলেও এবার সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে ১ হাজার ৫৫২ জন শিক্ষার্থী মাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে।

কারণ জানালেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

এর কারণ ব্যাখা করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, ‘এবারের ফলাফল সামগ্রিকভাবে ভালো হয়েছে। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৭০১ জন কমেছে। মূলত বাংলা, গণিত, ফিন্যান্স ও ব্যাংকি এবং বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ পায়নি। প্রশ্ন কমন পড়লেও হয়তো পরীক্ষার্থীদের সেরকম প্রস্তুতি ছিল না। অথবা তারা শতভাগ রেজাল্ট করতে পারেনি। আমরা এসব বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে পরবর্তীতে বসব।’

মহানগর এবার পিছিয়ে

এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে মহানগরের স্কুলগুলোতে পাসের হার কমেছে শূণ্য দশমিক ৮৪ ভাগ। তবে গতবারের চেয়ে ভালো করেছে চট্টগ্রাম জেলা, তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজারের স্কুলগুলো। এখানকার স্কুলগুলোতে পাসের হার আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। তবে এবার শতভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যা পাসের হার শূন্য এমন কোনো বিদ্যালয় নেই। শতভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে। গতবার এটি ২৭টি হলেও এবার সেই সংখ্যা বেড়ে ৩০টি হয়েছে।

এর ব্যাখায় মাহবুব হাসান বলেন, ‘গতবছর পার্বত্য তিন জেলা ও কক্সবাজারের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হওয়ায় আমরা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ২৬০টি স্কুলে গিয়ে সভা করেছি। খারাপ ফলাফলের কারণ নির্ণয় ও তা সমাধানের জন্য তাগদা দেওয়া হয়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব এবারের ফলাফলে দেখা গেছে।’

দেড় লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষাযজ্ঞ

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার মোট ১৯০টি কেন্দ্রের অধীনে এক হাজার ৩০টি বিদ্যালয়ের এক লাখ ৪৯ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ১৬ হাজার ৮৫১ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার হচ্ছে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্র পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ আর ছাত্রী পাসের হার ৭৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৩৯৩ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছাত্র তিন হাজার ৬৫২ আর ছাত্রী তিন হাজার ৭৪১ জন। বহিস্কৃৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ জন, যা গতবার ছিল ৭৫ জন। এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ২৯০ জন। যা গতবার ছিল ২২ হাজার ৪০৮ জন।

এবার জিপিএ এর দিক দিয়ে এগিয়ে আছে কলেজিয়েট স্কুল, সরকারি মুসলিম হাই স্কুল, নাছিরাবাদ সরকারি বালক হাই স্কুল, ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!