মামলা এড়াতে বিয়ের প্রস্তাব ধর্ষকের

পটিয়ার পোশাক শ্রমিক ধর্ষণ

পহেলা বৈশাখে কথিত প্রেমিকের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার সেই পোশাক শ্রমিক তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ধর্ষক রিপন। মঙ্গলবার ভোরে নিজ থেকে ধর্ষিতার বড় ভাইকে ফোন করে এ প্রস্তাব দেয় ধর্ষক রিপন। এ তথ্য জানিয়েছেন ধর্ষিতা কিশোরীর বড় ভাই পটিয়ার টমটমচালক দিদারুল ইসলাম। অস্বচ্ছল এ পরিবারটিও সামাজিক মান-সম্মানের ভয়ে রিপনের সেই প্রস্তাবে রাজি। পাশাপাশি ধর্ষণের শিকার ১৬ বছর বয়সী সেই পোশাক শ্রমিকও রাজি আছেন রিপনকে বিয়ে করতে – পরিবারের পক্ষ থেকে এমনই বলা হচ্ছে। তবে ঘটনার তিন দিনেও কোনো মামলা হয়নি থানায়। গ্রেপ্তারও হয়নি সেই কথিত প্রেমিক পরিবহন শ্রমিক রিপনও।

মামলা এড়াতে বিয়ের প্রস্তাব?

ধর্ষিতার বড় ভাই দিদারুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এতো দিন শুধু আমার বোনের এ ঘটনার জন্য দায়ী রিপনের নাম পরিচয় জানলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মঙ্গলবার ভোরে আমাকে সে ফোন করে ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। কোনো ধরনের আইনি পথে না গিয়ে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে সেই পথেই মীমাংসার অনুরোধ করছে।’

রিপনের এ প্রস্তাবের পর ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর পরিবারের সিদ্ধান্ত কী হবে তা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মা-ছেলে দুজনেই বলেছেন, ‘তার (ধর্ষিতা) যা হবার হয়ে গেছে। এখন তার শারীরিক অবস্থাও আগের থেকে উন্নতির দিকে। আমরা তো সমাজে বাস করি। তাই রিপন যেহেতু তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে এখন আমরা সেদিকেই আগাতে চাই। তার (ধর্ষিতা) সামাজিক যে সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে সেটি তো আর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আমি তাকে (ধর্ষিতা) জিজ্ঞেস করেছি সে রাজি কিনা রিপনকে বিয়ে করতে। সে রাজি আছে।’

তবে রিপন যে নম্বরে ধর্ষিতার পরিবারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছেন সেই নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। মোবাইলটি বন্ধ থাকায় এ প্রস্তাবের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। আর ঘটনার পর এ ঘটনাটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারের কথা বলা হলেও ধর্ষিতার পরিবার ও পুলিশের দাবি এটা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ নয়। শুধুমাত্র রিপনের সঙ্গেই শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে ওই কিশোরীর।

বৈশাখী মেলা থেকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই কিশোরীর বড় ভাই দিদার জানান, পহেলা বৈশাখের আগের দিন রাতে বৈশাখী মেলায় বেড়াতে যাওয়া ও ব্যাগ কেনার কথা বলেছিলেন তার বোন। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল দশটার দিকে শান্তিরহাট এসে রিপনের সঙ্গে মিলিত হয় ধর্ষণের শিকার কিশোরী। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে তার পূর্ব পরিচিত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাউছার নামের এক কর্মচারী দিদারকে ফোন দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, তার বোন রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শুয়ে আছে। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় সন্ধ্যায়। সেখান থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার রাত থেকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

ওসির জবানিতে ঘটনার বিস্তারিত

পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, পটিয়ার বিসিক শিল্প নগরের আরফিন টেক্সটাইল গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী। তার সঙ্গে দুমাস আগে পরিচয় একই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক বহনকারী বাসের হেলপার পটিয়ার কেলিশহর ইউনিয়নের শেখ আহমেদের ছেলে রিপনের। গাড়িতে যাতায়াতকালে তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে তারা পহেলা বৈশাখের দিন নগরের দিকে বেড়াতে গিয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে। মেয়েটিকে একটি ভ্যানিটি ব্যাগও কিনে দেয় রিপন। পরে প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে বাঁচতে বিশ্রামের কথা বলে নিকটবর্তী এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে কৌশলে ধর্ষণ করে সে। ধর্ষণের ফলে মেয়েটির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে যাওয়ায় ভীত হয়ে পড়ে রিপন।
সেখান থেকে তার দুই বন্ধুকে দিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠায় কিশোরীকে। তার ওই দুই বন্ধু সিএনজি অটোরিকশা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে দ্রুত সটকে পড়ে। খবর পেয়ে সেখান থেকে পরিবারের লোকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ঘটনাটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় হওয়ায় পটিয়া থানা পুলিশ আর বিষয়টি নিয়ে কাজ করেনি বলে জানান ওসি। তবে সিএমপির কোন এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে সেটিও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না ধর্ষিতার পরিবার, পুলিশ, এমনকি ধর্ষণের শিকার কিশোরীও।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!