প্রিমিয়ারে সোহেল হত্যা/ তিন বছর ধরে অধরা সোহান নিজেই করলো আত্মসর্মপণ

খুনের তিন বছর পরেও পুলিশ চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা নাছিম আহমেদ সোহেল হত্যার প্রধান অভিযুক্ত মো. ইব্রাহীম ওরফে সোহানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে সেই সোহান অবশেষে নিজ থেকেই আদালতে আত্মসমর্পণ করায় এখন তার ঠিকানা হয়েছে কারাগার।

সোমবার (১৫ জুলাই) কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে আত্মসর্মপণ করেন তিন বছর ধরে অধরা এ আসামি। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তাকে এই আইনি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী ইব্রাহীম হোসেন বাবুলের জুনিয়র রায়হান।

তবে সোহেল হত্যামামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার পিতা আবু তাহের। কিন্তু একে একে সব আসামি গ্রেপ্তার ও আত্মসমর্পণ করলেও তিন বছর ধরে রহস্যজনক কারণে অধরাই ছিলেন প্রধান আসামি সোহান। ওই সময় ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, এই সোহানই সোহেলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করছিল।

তবে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলছেন, ‘মামলাটির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমি দায়িত্বরত ছিলাম না। এরপরও এক আসামিকে আমার সময়ে আটক করা হয়েছিল। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তবে সে আত্মগোপনে থাকলেও আত্মসর্মপণ করেছে, তাও ভালো।’

অন্যদিকে সোহেলের রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা বলছেন, পুলিশ রহস্যজনক কারণে প্রধান অভিযুক্ত সোহানকে গ্রেপ্তার করেনি। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে সে আত্মগোপনে ছিল। কিন্তু এ তথ্য জানার পরও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে উদাসীন ছিল।

গত ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ২৩তম ব্যাচের বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে ছাত্রদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে মারা যান এমবিএ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও নগর ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য নাছিম আহমেদ সোহেল।

এ ঘটনায় সোহেলের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবু তাহের পুলিশের হাতে আটক পাঁচ শিক্ষার্থীসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুই পক্ষের হাতাহাতির পর এক শিক্ষার্থী পকেট থেকে ছুরি বের করে সোহেলকে ছুরিকাঘাত করে। ছুরিকাঘাতকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহীম ওরফে সোহানকে চিহ্নিত করার কথা বলেছিল পুলিশ।

এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর নিহত সোহেলকে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী দাবি করে তার কর্মীরা এই ঘটনার জন্য সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের দায়ী করে। ওই সময় অভিযোগ উঠেছিল এমইএস কলেজকেন্দ্রিক একটি বলয় থেকে রাজনীতি করতেন সোহান।

সোহেল খুনের ঘটনায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার পাঁচজন ও মামলার এজাহারভুক্ত ১৬ জনকে স্থায়ী এবং আরও সাতজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।

যে কারণে খুন হন ছাত্রলীগ নেতা সোহেল
ওই সময়ে এ প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে খুনের আসল কাহিনী। অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহ তানভীর গত দুই বছর আগে প্রিমিয়ার থেকে পাস করে বের হলেও প্রিমিয়ারে তার নিয়ন্ত্রণ বহাল রয়েছে। তার অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মী ও প্রিমিয়ারের বর্তমান শিক্ষার্থী জয়নাল, সায়েম, সাইফ, নাজমুল, উজ্জল ও শ্যামের যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসা রয়েছে। নগরীর কাতালগঞ্জ এলাকায় তাদের ‘বেথ ওভেন’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট এবং পাঁচলাইশ মোড় এলাকায় ‘গ্লোরিয়াস ইভেন্ট’ নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্টান রয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠান থেকে গত কয়েক বছর ধরে প্রিমিয়ারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন তারা। তবে এবার এতে বাধ সাধেন খুনের শিকার ছাত্রলীগ নেতা সোহেল। বিদায় অনুষ্ঠানের দায়িত্ব কে নেবে সেটি নিয়ে সোহেল আর জয়নালের গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। এনিয়ে তাদের মধ্যে কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এমনকি সোহেল হত্যা মামলার এজহার নামীয় আসামিদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে চকবাজার থানায় জিডি করেছিলেন নিহত সোহেল। আবার সোহেলের নামেও জিডি দায়ের করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মূলত সোহেল নগর ছাত্রলীগের সদস্য হওয়ায় প্রিমিয়ারের বেশিরভাগ ছাত্রলীগ কর্মী তার অনুসারী ছিলেন। আর পরিচ্ছন্ন ছাত্র নেতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গ্রহণযোগ্যতাও ছিল। সেকারণে সাধারণ নেতাকর্মীরাও চাইছিলেন, সোহেলের তত্ত্ববধায়নেই বিদায় অনুষ্ঠানটি হোক। আর অনুষ্ঠানের যাবতীয় কাজও সেজন্য বাইরের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করতে চেয়েছেন সোহেল। তবে জয়নাল, নাজমুল, সায়েমরা চেয়েছেন আগের মত এই বিদায় অনুষ্ঠানের যাবতীয় কাজ ও খাবারের সব অর্ডার তাদের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকেই দিতে। তবে এতে কোনও ভাবে সায় দেননি নিহত ছাত্রলীগ নেতা সোহেল। এ কারণেই দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয় সোহেল। যার বিস্তারিত চার্জশীটে উল্লেখ আছে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!