র‌্যাবের প্রশংসনীয় অভিযান: বিপুল ইয়াবা ও ফেনসিডিল উদ্ধার : ট্রাক আটক, দু ব্যবসায়ি গ্রেফতার

 রাজীব সেন প্রিন্স :::

বর্তমানে আমাদের দেশের যুব সমাজের অধঃপতনের অন্যতম প্রধান কারণ মাদকাসক্তি। মাদকাসক্তির ভয়াল থাবা প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে চলেছে। এই মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য মাদকাসক্ত যুব সমাজ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এর প্রেক্ষিতে যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষার জন্য র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন দেশব্যাপী বিভিন্ন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে, যা দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ কর্তৃক ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

18-08-16 (1)

 

 

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৭ এ বছরের শুরু থেকে আজ বৃহস্পতিবার ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ৫৩ লক্ষ ১৪ হাজার ২৭৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১৬ হাজার ১৭৮ বোতল ফেন্সিডিল, ৪৩১ বোতল বিদেশী মদ, ২০২ ক্যান বিয়ার, ০৩ হাজার ১২ লিটার দেশীয় তৈরী মদ এবং ৬৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে।

 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন কৌশল ও অভিনব উপায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার হয়ে আসছে। এ ধারাবাহিতার প্রতিরোধ গড়তে র‌্যাব-৭ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীতে পণ্য পরিবহনের অন্তরালে ইয়াবা পাচার হয়ে আসছেে এমন তথ্যে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিভিন্ন পরিবহন এজেন্সীতে গোয়েন্দা কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করে।

এক পর্যায়ে জানতে পারে , একটি মাদক চক্র ‘নিউ আল আমিন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী’ এর মাধ্যমে এনার্জি বাল্ব এর প্যাকেটের মধ্যে সু-কৌশলে লুকিয়ে ইয়াবার একটি বড় চালান চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পাঠানো হচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ৭ এর সিনিয়র এএসপি শাহেদা সুলতানার নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল গতকাল বুধবার বিকাল ৫টায় চট্টগ্রামের কদমতলী ডিটি রোডের হাজী সৈয়দুর রহমান ম্যানশন ‘নিউ আল আমিন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী’ তে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ১৬ টি এনার্জি বাল্বের কার্টুন জব্দ করে র‌্যাব।

 

পরবর্তীতে এসব কার্টুন তল্লাশি চালিয়ে ০২ টি কার্টুনের প্রতিটিতে দুই হাজার করে ৩৫ টি প্যাকেটে ৭০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত এনার্জি বাল্বের ২টি কার্টুনের গায়ে লেখা আছে “চালান নং-৭২৫২ এ প্রাপক (রমেশ সরকার ইলেকট্রনিক্স, নিউ এলিফেন্ট রোড, ঢাকা) ও প্রেরকের (জসিম ইলেকট্রিক হাউজ, ৭৪, আছাদগঞ্জ, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম)। এসব ঠিকানা ও মোবাইল নং যাচাই করে র‌্যাবের আভিযানিক দল খেঁজ পায়, ‘নিউ শিমুল ট্রান্সপোর্ট’ ব্যবহার করে ইয়াবার আরেকটি বড় চালান একই উপায়ে এনার্জি বাল্বের কার্টুনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখে যাচ্ছে।

18-08-16 (3)

 

এ সংবাদের ভিত্তিতে একই দিন কদমতলী এলাকার ২৮০, ডিটি রোড চেয়ারম্যান মার্কেটের ‘নিউ শিমুল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী’ এ অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এসময় ১২ টি এনার্জি বাল্বের কার্টুন তল্লাশি করে ০২ টি কার্টুনের ১০ টি প্যাকেটে মেলে ২০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। এসব এনার্জি বাল্বের কার্টুনে লেখা আছে চালান নং-৪৫২০। ইয়াবাগুলো ‘সাগর লাইটিং হাউস’ নবাবপুর, ঢাকা- এই  ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছিল। উদ্ধারকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটের আনুমানিক মূল্য ০৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।

 

 

এসময় ২ মাদক ব্যবসায়িকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে র‌্যাব।  গ্রেফতার দুজন হলেন পটিয়ার শিকলবাহা গ্রামের মৃত আমিনুল হকের ছেলে আহাম্মদ নুর (৪৮) ও নগরীর বাকলিয়া থানার মৃত ফজল আহাম্মদের ছেলে মো. রাসেল (২৯)।

 

 

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সহকারি পরিচালক অ্যাডভোকেট চন্দন দেবনাথ জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে তারা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। এ ব্যবসায় তাদের সঙ্গে আরও ৪/৫ জন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম পটিয়া ডেঙ্গাপাড়া আহম্মেদের ছেলে ও ১৩ নং ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম (৫০), আনোয়ারা দোভাষীবাজার গহিরা গ্রামের নুরুসসুবানের ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর (৩৫), মোঃ আইলেন হোসেন (৪৮) ও মোঃ বেলাল হোসেন (৩৫)।

 

মোঃ জাহাঙ্গীর বোটে করে ইয়াবাগুলো টেকনাফ থেকে নিয়ে আসে। সেলিম ও নুরকে ইয়াবা সরবরাহ করে। বিভিন্ন সময়ে ‘জসিম ইলেকট্রিক হাউজ’, ‘রমেশ সরকার ইলেকট্রনিক্স’, ‘সাগর লাইটিং হাউস’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নামে এনার্জি বাল্বের কার্টুনের ছদ্মবেশে ইয়াবার চালানগুলেঅ তারা ঢাকায় পাঠায়। জুলাই ও আগস্ট মাসে ‘জসিম ইলেকট্রিক হাউজ’ এর নামে ০৪ বার করে মোট ০৮ বার ইয়াবার চালান ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃত আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।

 

অথচ প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ঠিকানা যাচাই করে দেখা যায়, সবগুলো প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানাই ভূয়া। ‘এস এ পরিবহন’, ‘সোনালী ব্যাংক’ ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংক’ ও ‘ব্রাক ব্যাংক’ এর মাধ্যমে মূলত তারা ইয়াবা কেনাবেচার টাকা লেনদেন করে থাকে। উদ্ধারকৃত মাদক এবং আটককৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

18-08-16 (2)

 

 

র‌্যাব-৭ এর অপর এক অভিযানে উদ্ধার করা হয় ছয় হাজার বোতল ফেনসিডিল। যশোরের সীমান্ত এলাকা হতে একটি ট্রাক ধান বহনের আড়ালে ফেন্সিডিল বহন করছে এমন সংবাদে আজ ভোরে নগরীর বন্দর থানা সল্টগোলা ফ্লাইওভার এর নীচে চেকপোষ্ট স্থাপন করে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব ৭ এর একটি টিম। এসময় ধান বোঝাই একটি ট্রাকের গতিবিধি সন্দেহজনক হলে থামানোর জন্য সিগন্যাল দেয় র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রাকটি রাস্তার পার্শ্বে থামিয়ে ড্রাইভার ও হেলপার দ্রুত নেমে দৌড়িয়ে পালিয়ে যায়।

 

পরে ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৮৩৯৮) তল্লাশী চালিয়ে  ৬ হাজার বোতল ফেন্সিডিলসহ ট্রাকটি জব্দ করা হয়। এসময় গাড়ীর ভিতরে থাকা কাগজপত্র অনুযায়ী জানা যায়, উক্ত ট্রাকের মালিক যশোর জেলার শার্শা থানা লক্ষণপুর এলাকার কনড্রোপপুর গ্রামের মোঃ ইস্রাফিল হোসেন। চালকের নাম মোঃ শরিফুল ইসলাম। তিনি একই জেলার শার্শা থানা সামলাগাছি মোঃ শফিকুল ইসলামের ছেলে। ড্রাইভারের মানিব্যাগে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এসব ফেনসিডিলের মালিক কক্সবাজার জেলার টেনাফ থানা শাহপরীর দ্বীপ জাফর আহমেদের ছেলে মোঃ জুবায়েরের। উদ্ধারকৃত ফেন্সিডিলের আনুমানিক মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা জানিয়ে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মালামাল ও মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সহকারি পরিচালক অ্যাডভোকেট চন্দন দেবনাথ।

 

রিপোর্ট : রাজীব সেন

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

 

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!