নির্বিকার মৎস্য অধিদপ্তর

পেকুয়ায় অবাধে চলছে রেণু পোনা নিধন

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন নদীতে অবাধে চলছে মাছের রেণু পোনা নিধন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই বেড়ে চলেছে অবৈধভাবে পোণা আহরণ, বেচাকেনা ও পরিবহন।

স্থানীয়রা জানান, পেকুয়া উপজেলার কুতুবদিয়া, উজানটিয়া চ্যানেল ও মাতামুহুরী নদীসহ বিভিন্ন শাখা নদীতে প্রতিদিনই কয়েক’শ শিশু-কিশোর এবং পাঁচশতাধিক জেলে আহরণ করছে চিংড়ি পোনা। জীবিকা নির্বাহ করতেই এ কাজে জড়িয়ে পড়ছে উপকূলের অধিকাংশ নিম্নবিত্তের মানুষ। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা ও মৎস্য অধিদপ্তরের নজরদারির অভাবে স্থানীয় জেলে ও কিশোররা এ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেণু পোনা আহরণ কাজে জড়িতরা জানান, চিংড়ি পোনা আহরণে কখনো আইনি বাধা পাননি তারা। স্থানীয় প্রশাসন বা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সতর্ক করা হয়নি কখনো।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট বেহুন্দি, মশারি ও কারেন্ট জাল দিয়ে জেলেদের হাতে রেণু পোনা নিধন করাচ্ছে। নিষিদ্ধ রেণু পোনা সড়ক-নদীপথে বড় বড় ড্রামে করে দেশের বিভিন্নস্থানে চালান হচ্ছে। এসব পোনা সরবারহের কাজে একটি চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারা হলেন মগনামা ইউনিয়নের বদি আলম, মকছুদ, মাহমুদ রশিদ, মুজিব, শাহাব উদ্দিন, সেলিম উল্লাহ, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাদশা, ফোরকান, রাজাখালী ইউনিয়নের আবুল বশর, আলী ও বদু। তাদের প্রণোদনায় উৎসাহিত হচ্ছে পোনা আহরণকারীরা।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষগুলো জীবিকা নির্বাহের জন্য পোনা আহরণকে খণ্ডখালীন পেশা হিসেবে নিয়েছেন। দেশের মৎস সম্পদ রক্ষা করতে তাদের পুনর্বাসন করে এ পেশা থেকে ফিরিয়ে আনা জরুরি।

পেকুয়া উপজেলা মৎস কর্মকর্তা বেনজির আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, একটি চিংড়ির রেণু পোনা ধরার জন্য অন্য প্রজাতির ৯ থেকে ১২টি রেণু পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে। এরমধ্যে দুই হাজার প্রজাতির মাছ ও বিভিন্ন প্রকারের জলজপ্রাণি প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে। যে কারণে সাগর ও নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণির ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য সরকার বাগদা ও গলদা প্রজাতির রেণু পোনা আহরণ ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে পোনা আহরণকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সড়ক পথে পোনা পরিবহনের ব্যাপারে আমাদের নজরদারি রয়েছে।

সেভ দ্যা ন্যাচারের উপজেলা শাখার সভাপতি মাসউদ বিন জলিল বলেন, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে নির্বিচারে রেণু পোনা নিধন করা হলেও এর বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না মৎস অধিদপ্তর। তাই চিংড়ির রেণু পোনা ধরতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু পোনা ধ্বংস হচ্ছে প্রতিদিন।

সোমবার (৮ এপ্রিল) পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কুতুবদিয়া চ্যানেলে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় জেলেরা মশারি ও বেহুন্দি জাল দিয়ে রেণু পোনা ধরছে। প্রতিবার জাল ফেলে ১০-২০টি চিংড়ির রেণু পোনার সাথে তুলে আনছে টেংরা, পোয়াসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছের পোনা। চিংড়ি পোনা আলাদা করে পাত্রে জিইয়ে রাখলেও অন্য প্রজাতির মাছের পোনাগুলো ডাঙ্গায় অথবা চরে ফেলে দেওয়া হয়। ফলে সেগুলো মারা যাচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা মৎস কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, জনবল সংকটের কারণে রেণু পোনা আহরণ শতভাগ বন্ধ করার সক্ষমতা আমাদের নেই। হাজার হাজার মানুষ এ কাজে জড়িত। অভিযান চালিয়ে আমরা রেণু পোনা আহরণ কাজে ব্যবহৃত জাল ধ্বংস করে দিলেও পরে তারা নতুন জাল নিয়ে নেমে পড়ছে পোনা আহরণে। তারপরও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!